অর্থ ও বাণিজ্যসংগঠন সংবাদ

ব্যাগেজ রুলে অলংকার সুবিধা কমানোর দাবি বাজুসের

ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে স্বর্ণের অলংকার আনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা ৫০ গ্রাম করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন-বাজুস। এছাড়াও সোনা ও রূপার অলংকার বিক্রিতে আরোপিত ভ্যাট ৩ শতাংশসহ ১১টি প্রস্তাব আগামী বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে বাজুস।

আজ রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে বাজুস কার্যালয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাজুসের সহ-সভাপতি ও বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।

এসময় উপস্থত ছিলেন বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, বাজুসের সহ-সম্পাদক ও স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ এন্ড ট্যাক্সেশনের ভাইস চেয়ারম্যান সমিত ঘোষ অপু, স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ এন্ড ট্যাক্সেশনের সদস্য সচিব পবন কুমার আগরওয়াল প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে আনোয়ার হোসেন বলেন, বাজুস সব সময় স্বর্ণ বিক্রেতা ও ক্রেতা সাধারণের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে আসছে। তাই ক্রেতা সাধারণ ও বিক্রেতাদের সুবিধার দিকে দৃষ্টিপাত করে। ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে গহনা আনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা ১০০ গ্রাম থেকে কমিয়ে ৫০ গ্রাম করার প্রস্তাব করছি। এতে করে স্থানীয় স্বর্ণ শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় জুয়েলারি শিল্পের দিকে ক্রেতা সাধারণ আকৃষ্ট হবে। স্থানীয় স্বর্ণ শিল্পীদের বাঁচানোর স্বার্থে এটা সময়ের দাবি। বাংলাদেশের স্বর্ণ শিল্পীদের হাতে তৈরি গহনা স্থানীয় ও বিশ্ব বাজারে সমানভাবে সমাদৃত হয়ে থাকে। তাই স্থানীয় স্বর্ণ শিল্পীদের টিকিয়ে রাখার জন্যে সরকারের এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি।

বাজুসের সহ-সভাপতি বলেন, বর্তমানে জুয়েলারি ব্যবসার ক্ষেত্রে স্বর্ণ, স্বর্ণের অলংকার, রূপা বা রূপার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে আরোপিত ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হোক। স্বর্ণের অলংকার বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আরোপিত ৫ শতাংশ ভ্যাট, ক্রেতা সাধারণের উপর বোঝা হিসাবে পরিলক্ষিত হয়। ফলে অধিকাংশ ক্রেতা ভ্যাট প্রদানে অনীহা প্রদান করেন। যার প্রভাব পড়ে রাজস্ব আয়ে। বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকারের প্রয়োজন রাজস্ব আয়ের নতুন উৎস খোঁজা। জুয়েলারি শিল্প বাজেটের ঘাটতি মেটাতে অনেকাংশেই সাহায্য করতে পারে, যদি এই খাতের উপর আরোপিত ভ্যাটের হার কমানো হয়।

চলতি বছরের ২৮ মের তথ্য মতে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি এবং ডলারের বিনিময় মূল্যের কারণে ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম বা প্রতি এক ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের মূল্য ৯৬ হাজার ৬৯৪ টাকা। এর সঙ্গে ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। তার সঙ্গে নির্ধারিত ৫ শতাংশ হারে বা ৫ হাজার ৯ টাকা ভ্যাট যুক্ত হলে, মোট মূল্য হয় ১ লাখ ৫ হাজার ২০৩ টাকা। দেশে প্রতি ভরিতে ভ্যাট দিতে হয় ৫ হাজার ৯ টাকা। অন্যদিকে ভারতে সমপরিমাণ স্বর্ণের অলংকার কিনতে ৩ শতাংশ হারে বা ২ হাজার ৭৯১ টাকা ভ্যাট দিতে হয়। যার প্রভাব স্বর্ণের অলংকার ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট বিদ্যমান।

সারাদেশে ৪০ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসানো হলে, বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আয় সম্ভব হবে। ব্যবসার ক্ষেত্রেও সমতা আসবে। এক্ষেত্রে বাজুসের স্পষ্ট বক্তব্য হলো ইএফডি মেশিন সকল জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে না বসিয়ে কাউকে হয়রানি করা যাবে না। বর্তমানে অপরিশোধিত আকরিক স্বর্ণের ক্ষেত্রে আরোপিত সিডি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমদানি শুল্ক শর্তসাপেক্ষে ১ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছে বাজুস। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করার উদ্দেশ্যে আইআরসিধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের ক্ষেত্রে এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে জুয়েলারি শিল্পে শৃংখলা আসবে। এটি একটি আমদানি বিকল্প শিল্প হিসাবে পরিণত হবে। স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধ হবে। আংশিক পরিশোধিত সোনার ক্ষেত্রে সিডি ১০ শতাংশ এর পরিবর্তে আইআরসিধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের জন্য শুল্ক হার ৫ শতাংশ করা হোক।

হীরা কাটিং এবং প্রক্রিয়াজাত করণের উদ্দেশ্যে যথাযথ সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানিকৃত রাফ ডায়মন্ডের সিডি ১০%, এসডি ১০% করার প্রস্তাব করছি। বৈধ পথে মসৃন হীরা আমদানিতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানীকৃত মসৃন হীরা ৪০ শতাংশ মুল্য সংযোজন করা শর্তে এসডি ২০% করার প্রস্তাব করছি। আয়কর আইনে ৪৬-(বিবি) (২) ধারার অধীনে স্বর্ণ পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে প্রদানের প্রস্তাব করা হলো। স্বর্ণের অলংকার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে আমদানিকৃত কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সকল প্রকার শুল্ক কর অব্যাহতি প্রদান সহ ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে প্রদানের প্রস্তাব করা হলো। বৈধভাবে স্বর্ণের বার, স্বর্ণের অলংকার, স্বর্ণের কয়েন রপ্তানি উৎসাহিত করতে কমপক্ষে ২০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করার শর্তে, রপ্তানিকারকদের মোট মূল্য সংযোজনের ৫০ শতাংশ হারে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব করছি।

এইচএস কোড ভিত্তিক অস্বাভাবিক শুল্ক হার সমূহ হ্রাস করে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সাথে শুল্ক হার সমন্বয়সহ এসআরও সুবিধা প্রদান করার প্রস্তাব করছি। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০২২ ধারা-১২৬ক অর্থ আইন, ২০১৯ (২০১৯ সালের ১০নং আইন) এর ১০২ ধারাবলে, চোরাচালান প্রতিরোধ করতে গিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের উদ্ধারকৃত স্বর্ণের মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশ সংস্থাসমূহের সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে প্রদানের প্রস্তাব করছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button