লাইফস্টাইল

নিয়ন্ত্রণে রাখুন উচ্চরক্তচাপ

রক্তনালির মধ্যে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় চাপ বজায় থাকার ফলশ্রুতিতে মানবদেহে রক্তপ্রবাহ ঘটে থাকে। এই রক্তচাপ হৃৎপিন্ড  সংকোচনের ফলে উৎপাদিত হয়। যেহেতু রক্তচাপের সৃষ্টি হৃৎপিন্ড থেকে তাই হৃৎপিন্ডের কাছে বড় বড় রক্তনালিতে রক্তচাপের পরিমাণ বেশি থাকে এবং হৃৎপিন্ড থেকে দূরের রক্তনালিতে রক্তচাপের পরিমাণ কম থাকে। আমরা জানি, স্রোতের নিয়ম হলো উচ্চচাপ থেকে তরল পদার্থ নিম্নচাপের দিকে ধাবিত হবে। যেমন- মাঠে ব্যবহৃত পানির পাম্পের কাছ থেকে দূরের দিকে পানি প্রবহমান থাকে। নদীতে উঁচু স্থান থেকে নিচু স্থানের দিকে পানি প্রবাহিত হয়ে থাকে। হার্ট প্রতিবার সংকোচন করে নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত, বড় রক্তনালিতে প্রেরণ করে থাকে এবং এই সরবরাহ করতে গিয়ে হার্টকে প্রবাহ সৃষ্টির জন্য এমন একটি পর্যায়ে চাপ বৃদ্ধি করতে হয় যাতে বড় রক্তনালিতে বিদ্যমান চাপ থেকে খানিকটা বেশি চাপ হতে হবে। তা না হলে হার্ট থেকে বড় রক্তনালিতে রক্ত প্রবাহ ঘটবে না, এটা পদার্থবিজ্ঞানের স্রোত সৃষ্টির নিয়ম। ধরুন, হার্ট সংকোচনের সময় কারও বড় রক্তনালিতে চাপের পরিমাণ ১০০ মি.মি. পারদের সমান, এই ক্ষেত্রে হার্ট ১০৫ থেকে ১১০ মি.মি. পারদ পরিমাণ চাপ সৃষ্টি করলেই রক্তপ্রবাহ ঘটবে। তাই হার্ট সংকোচন করে সর্বোচ্চ ১১০ মি.মি. পারদ পরিমাণ চাপ সৃষ্টি করবে। যদি কারও বড় রক্তনালিতে রক্তচাপের পরিমাণ ২০০ মি.মি. পারদ হয়ে থাকে তবে হার্টে রক্তপ্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য ২০৫ মি.মি. থেকে ২১০ মি.মি. পারদ সমপরিমাণ চাপ সৃষ্টি করতে হবে। তাই এটা খুবই স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, রক্তচাপ যত বেশি হবে হার্টকে তত বেশি শক্তিপ্রয়োগ করে বর্ধিত চাপ সৃষ্টি করে রক্তপ্রবাহ ঘটাতে হবে। তা না হলে ব্যক্তির রক্তপ্রবাহ বিঘ্ন সৃষ্টি হয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হবে। অধিক চাপ সৃষ্টি করার জন্য অধিক খাদ্যের প্রয়োজন হয় এবং সরবরাহ লাইনের বেশি সরবরাহ দেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে, মানে হৃৎপিন্ডে  নিজস্ব রক্ত সরবরাহ বেশি না হলে হৃৎপিন্ডের মাংসপেশি অধিক পরিমাণ রসদ না। পেয়ে বর্ধিত কাজ করতে পারবে না কিন্তু ব্যক্তির কর্মদক্ষতা বজায় রাখতে হৃৎপি- সর্বদাই সচেষ্ট। তাই হৃৎপিন্ডের মাংসপেশি ক্ষেত্রবিশেষে বিকল্প উপায়ে হলেও রক্ত সরবরাহ নিশ্চিতভাবে ঠিক রাখার চেষ্টা করে, এটাই নিয়ম। উচ্চ রক্তচাপের ফলশ্রুতিতে হার্টকে অধিক কাজ করতে হচ্ছে, অধিক শক্তিপ্রয়োগ করতে হচ্ছে। ফলে ব্যায়ামবীর ব্যক্তিদের মতো হার্টে কলেবর বৃদ্ধি পায়, হার্ট ভার উত্তোলনকারীদের মতো হুষ্টপুষ্ট হয়ে যায়। তবে মাংসপেশির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, অধিক পরিমাণ মাংসপেশির খাদ্যের চাহিদাও বেশি হয়ে থাকে। অনেকদিন থেকে চলতে থাকা এই পরিস্থিতির ফলে হার্ট খাদ্যাভাবে, মানে অক্সিজেন ও রসদ সংকটে ভুগতে থাকে।

যার ফলে হার্ট বেলুনের মতো ফুলতে থাকে, হার্ট তার কার্যকারিতা হারাতে থাকে এবং আরও সময় পরে হার্ট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হতে থাকে এবং এই অবস্থা রোগীর জন্য খুবই একটা মারাত্মক পর্যায় এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় হার্ট বলে। সাধারণভাবে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন উপসর্গ অনুভব করেন না। তাই নিজেরা বুঝতে পারেন না যে তারা হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সুতরাং এখন থেকেই এ বিষয়ে সচেতন হোন।

লেখক: চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শামলী, ঢাকা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button