বিশেষ খবররাজনীতি

আ.লীগের সমাবেশ হলে অনুমতি ও শর্তের বিষয়ে নীরব থাকে পুলিশ

জনদুর্ভোগ হবে—তাই ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকার সড়কে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। যদিও গত এক মাসে রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকায় প্রগতি সরণিতে এবং উত্তরার সোনারগাঁও জনপথ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রেখে দুটি বড় সমাবেশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গত ৫ ও ২০ নভেম্বর রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ দুটি সড়কে ওই দুই সমাবেশের কারণে ব্যাপক জনদুর্ভোগ হলেও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) তখন নীরব ছিল।

এমনকি ওই দুটি সমাবেশ রাস্তার পরিবর্তে খোলা মাঠে করা বা সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর কোনো শর্ত দেওয়ার কথাও শোনা যায়নি। দুটি সমাবেশেই প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

৫ নভেম্বর মধ্য বাড্ডায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশ’-এর কারণে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত তিন ঘণ্টা প্রগতি সরণিতে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ছিল। আর ২০ নভেম্বরও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের কারণে উত্তরার সোনারগাঁও জনপথ সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। উত্তরার এই সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতা-কর্মীদের মিছিলের কারণে বিমানবন্দর থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ব্যাপক যানজট ছিল।

রাস্তায় সমাবেশ করার বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান গত সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করেছিলেন তাঁরা। পুলিশ তখন শর্ত দিয়েছিল কোনো কর্মদিবসে সমাবেশ না করতে। কর্মদিবসে সমাবেশ করলে মানুষের দুর্ভোগ হয়, সরকারেরও জনপ্রিয়তা কমে—এমনটি বলেছিল পুলিশ।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দুটি সমাবেশের একটি হয়েছিল শনিবার (৫ নভেম্বর), অন্যটি কর্মদিবসে (২০ নভেম্বর, রোববার)। তবে কর্মদিবসে আওয়ামী লীগ সমাবেশ করে শর্ত ভাঙলেও পুলিশ নীরব থেকেছে।

অন্যদিকে নয়াপল্টন এলাকার সড়কে বিএনপি সমাবেশ করতে পারবে না বলে আগেই বলে রেখেছে পুলিশ। এর পরিবর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে দলটিকে ২৬টি শর্ত দিয়ে রাখা হয়েছে। যদিও বিএনপি নয়াপল্টনে এর আগেও সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।

বিএনপিকে শর্ত দেওয়ার বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রতিটি কর্মসূচি পালনের আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিই। আমাদেরও নানা শর্ত দেওয়া হয়। আমরা সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। এখন বিএনপি যেসব শর্তের কথা প্রচার করছে, তারা ক্ষমতায় থাকার সময়ও আমাদের একই রকম শর্ত দিত। তখন আওয়ামী লীগ সেসব শর্ত মানত।’

সমাবেশের স্থান নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি
গত এক মাসে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মধ্যে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ ও সম্মেলন করেছে যুবলীগ (১১ নভেম্বর), স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (২৫ নভেম্বর), মহিলা আওয়ামী লীগ (২৬ নভেম্বর) এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগ (২ ডিসেম্বর)। এসব কর্মসূচি পালনে ডিএমপি কী ধরনের শর্ত দিয়েছিল, সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারেনি ডিএমপি।

আওয়ামী লীগ যখন যেখানে খুশি সমাবেশ করতে পারে—তাদের জন্য অনুমতি, শর্ত কিছুই লাগে না বলে মনে করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই আওয়ামী লীগের সমাবেশের অনুমতিপত্রগুলো পুলিশ প্রকাশ করুক, তাদের কোনো শর্ত দেওয়া হয়েছিল কি না, সেটিও দেশবাসীকে জানাক।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button