বিশ্বশীর্ষ নিউজ

ভেঙে পড়ছে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামো

দুই বছর আগে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ায় সারাবিশ্ব থমকে দাঁড়ায়। এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় পর্যটক নির্ভর দেশগুলো। এই তালিকায় প্রথমেই আসে শ্রীলঙ্কার নাম। পর্যটন ব্যবসা স্ফীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশটির শ্রম নির্ভর শিল্পগুলো চড়া মজুরি দাবির কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। ফলে পর্যটন শিল্প দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একমাত্র উৎসে পরিণত হয়। এর উপর কৃষিতে কৃত্রিম সার ব্যবহারের বিরুদ্ধে সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করায় খাদ্য উৎপাদনে ধ্বস নামে। ততদিনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সুনামির মত টান পড়েছে। ফলে দুর্ভিক্ষ অনিবার্য হয়ে পড়ে। শ্রীলঙ্কার জনগণ অবশ্য ওই পরিস্থিতির জন্য রাজনীতিবিদ ও তাদের স্বজনদের সীমাহীন দুর্নীতিকে দায়ী করে।

করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি না হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এর প্রভাবে শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়াতে গিয়েও থমকে গেছে। ইতিমধ্যে পর্যটক আনাগোনা শুরু হলেও বিশ্ব বাজারে জ্বালানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নাগালের বাইরে চলে গেছে। ফলে দেউলিয়াত্ব থেকে সহসাই মুক্তি পাচ্ছে না দেশটি। শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছার পর সারাবিশ্বের মিডিয়ার শীর্ষ খবরে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু যে দেশটির অবস্থা এখন শ্রীলঙ্কার চেয়েও ভয়াবহ তারা প্রচারের আড়ালে থেকে যাচ্ছে। দীর্ঘ ২৪ বছর বাঙালির রক্ত চুষে ফুলে ফেঁপে উঠেছিল সাবেক পশ্চিম পাকিস্তান, বর্তমানে পাকিস্তান। এরপর গড়িয়ে গেছে ৫০ বছরেরও বেশি সময়। ইতিমধ্যে পাকিস্তানের অবস্থা হাড্ডিসার কঙ্কালের মত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের বিদেশি রিজার্ভের পরিমাণ বর্তমানে ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। এর প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে সৌদি আরব। তবে এ অর্থ ব্যবহার করা যাবে না। ফলে তাদের রিজার্ভ মূলত ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। এই রিজার্ভ দিয়ে মাত্র তিন সপ্তাহের অতি জরুরি পণ্য আমদানি করতে পারবে তারা। তাদের এই চরম সংকটময় সময়ে পাশে নেই কেউ। কারণ ইতিমধ্যে তাদের ঋণের পরিমাণ ঝুঁকির মাত্রা ছাড়িয়েছে। বর্তমানে প্রতি পাকিস্তানির ঋণের পরিমাণ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা, যা বাংলাদেশের ৪ গুণ। বাস্তবে হেনরি কিসিঞ্জারের ঐতিহাসিক ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ মতবাদের নজীরে পরিণত হয়েছে পাকিস্তান। সেদিন অবশ্য বিদ্বেষবশত, বাংলাদেশের নামের সঙ্গে তিনি এই অপবাদটি জুড়ে দিয়েছিলেন।

অতীতে নেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষমতা পাকিস্তানের নেই। এ কারণে আর কেউ ঋণ দিতে চাচ্ছে না। সর্বশেষ আইএমএফ পাকিস্তানকে দেয়া ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছে। তারা এই ঋণ এখন বাংলাদেশকে দিচ্ছে। ফলে তাদের সামনে হাহাকার ছাড়া আর কিছু নেই। আজ তারা একাত্তরের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত। উদ্দেশ্য বাংলাদেশের কাছ থেকে সাহায্য লাভ। তবে একাত্তরে বাংলাদেশে তারা যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল তা ক্ষমার যোগ্য নয়। তারা ৩০ লাখ লোককে হত্যা, ৪ লাখ নারীকে ধর্ষণ এবং গোটা দেশকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছিল। এখন মনে হয় প্রকৃতির বিচার শুরু হয়েছে। দেশটিতে রোজই অনাহারে লোক মারা যাচ্ছে। তাই বলা যায় অচিরেই শ্রীলঙ্কার মত পাকিস্তানের মন্ত্রী, আমলারা জনরোষ থেকে বাঁচতে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হতে পারেন।

দেশটির স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। খাদ্যমূল্য সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। কাঁচামালের অভাবে ছোট বড় হাজার হাজার শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। পাকিস্তানের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়ায় গত বছরের ভয়াবহ বন্যা। ওই বন্যায় পাকিস্তানের প্রধান অর্থকরী ফসল তুলা ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে কঁচামালের অভাবে হাজার হাজার ছোট বড় বস্ত্রকল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ৭০ লাখ লোক কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

পাকিস্তানের অর্থনীতির প্রধান দুর্বলতা অনুৎপাদন খাতে ব্যয়। দেশটির সিংহভাগ অর্থ ব্যয় হয় সশস্ত্র বাহিনীর পিছনে। জন্মলগ্ন থেকে সশস্ত্র বাহিনী দেশটির বুকে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছে। শুধু প্রতিরক্ষা নয়, দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার রক্ষকও তারা। সেই সঙ্গে দেশটির গণতন্ত্র ও রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার রয়েছে তাদের।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী আজ সারা বিশ্বে একটি আতঙ্কের নাম। কারণ তারা জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক ও গডফাদার। তারা বিভিন্ন সময়ে আফগানিস্তান ও ভারতে প্রশিক্ষিত জঙ্গি পাঠিয়েছে নাশকতা চালাতে। এখন সেই জঙ্গিরাই পাকিস্তানের ওপর মরণ ছোবল মারছে। পাকিস্তানের সবচয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা ‘ডন’-এর মতে সেনাবাহিনীর কারণেই জঙ্গিগোষ্ঠী পাকিস্তানি তালেবান (টিটিপি) ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ইসলামাবাদের পদার্থবিদ পারভেজ তার সাম্প্রতিক কলামে ‘টিটিপি কেন অপরাজেয়’ এই শিরোনামে পাকিস্তানে জঙ্গিবাদী কার্যকলাপের জন্য সেনাবাহিনীর কড়া সমালোচনা করেন। তার মতে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই, পুলিশ এবং সাধারণ নাগরিকদের উপর টিটিপি প্রাণঘাতী হামলা বাড়িয়ে দিলেও পাকিস্তানের নিরাপত্তার ভারপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তারা সেটা ধামাচাপা দিতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। সেইসঙ্গে জঙ্গি মদদের বিষয়টিরও উল্লেখ করেছেন।

ডনের তথ্য অনুযায়ী, ৫০ দিনে ১০০ টিরও বেশি হামলা হয়েছে পাকিস্তানে। বান্নুরে জঙ্গিবাদ বিরোধী কার্যালয়েও টিটিপি হামলা চালিয়েছে।  পাকিস্তানি পত্রিকাটির মতে, পারমাণবিক অস্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্রে সজ্জিত ৬ লক্ষ যোদ্ধায় সমৃদ্ধ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সীমান্ত সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানি সেনার কঠোর পেশাদারিত্ব এবং অপ্রচলিত যুদ্ধের অভিজ্ঞতাও জঙ্গিবাদকে পরাস্ত করতে সক্ষম। কিন্তু তারপরও পাকিস্তানি সেনা অভ্যন্তরীন নিরাপত্তায় চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ। জঙ্গিবাদীদের সঙ্গে সম্পর্কের কারণেই এমনটা ঘটছে বলে ধারণা করা হয়। এটাই পাকিস্তানের শত্রুদের সুবিধা করে দিচ্ছে বলেও পদার্থবিদ পারভেজ মনে করেন। তার মতে, আফগান তালেবানকে ক্ষমতায় ফিরতে সাহায্য করাও ছিল পাকিস্তানের বিশাল কৌশলগত ভুল। তিনি লেখেন, ‘বছরের পর বছর ধরে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপকরা আমাদের ভুল বোঝাতে রাষ্ট্রীয় প্রচার যন্ত্র ব্যবহার করে এসেছেন। তারা বুঝিয়েছিলেন, আফগান এবং পাকিস্তানি তালেবানরা নাকি আলাদা। এখন সেই বিভ্রম বিপদ বাড়াচ্ছে।’

জঙ্গিবাদীদের মদদ জুগিয়ে পাকিস্তান শুধু নিজেদের শত্রুই বাড়িয়ে চলেছে বলে মন্তব্য করেছে পত্রিকাটি। এদিকে কাবুলের নতুন শাসকরা প্রকাশ্যে পাকিস্তানের সমালোচনা শুরু করেছে। আফগানিস্তানের মাটিতে টিটিপির ঘাঁটিতে পাকিস্তানের স্থল বা বিমান হানারও তারা বিরোধী। জঙ্গিবাদীদের মদদ জুগিয়ে পাকিস্তান যে নিজেদের সর্বনাশ নিজেরাই ডেকে এনেছে সেকথাও উঠে এসেছে তাদের দেশের পত্রিকাতেই। ডনের মতে, সেনা কর্মকর্তাদের কৌশলগত ভুল সাধারণ নাগরিকদের বিপদে ফেলেছে। তাই প্রশ্ন উঠছে, মুসলিম খান বা তার আগে এহসানুল্লাহ এহসানের মতো টিটিপির শীর্ষ বন্দুকবাজকে গোপনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল কেন? পারভেজের মতে, জঙ্গিবাদীদের সাথে আলোচনার বা তাদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘটনা জঙ্গিবাদীদেরই উৎসাহিত করেছে।

টিটিপি কোনো সময় অস্ত্র সংবরণ বা পাকিস্তানের সংবিধানকে সম্মান করতে রাজি হয়নি। পারভেজ তার কলামে বলেছেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপকদের কট্টর টিটিপি-বিরোধী পশতুন তাহাফুজ আন্দোলন (পিটিএম) নেতাদের সাথে আলোচনা করতে না বসাটাও বিরাট ভুল ছিল। পাখতুনরা কখনও ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র না তুললেও তাদের হয়রানি করতে কার্পণ্য করেনি পাকিস্তানি সেনারা। পাখতুন পার্লামেন্টারিয়ান আলী ওয়াজিরকে কারাগারে বন্দী করে পর্যন্ত রাখা হয়েছে। সোয়াতের সামরিক কর্তৃপক্ষ টিটিপি জঙ্গিদের একটি স্কুল ভ্যানে গুলি চালানোর প্রতিবাদ করা নাগরিকদের শাস্তি দিয়েছে। ২০০৬ থেকে ২০০৯ সালে মাওলানা ফজলুল্লাহর দোসরদের সাথে লড়াই করতে গিয়ে সেনাবাহিনী যে শত শত সেনাকে হারিয়েছিল সেটাও ভুলে গেছে পাকিস্তান। কাবুল আজও টিটিপিকে মদদ দিচ্ছে। তাই ডন প্রশ্ন তুলেছে, ২০২১-এর আগের ভালো-তালেবান, আর এখনকার খারাপ তালেবানের চিন্তাধারা কি এখনও চলে? পারভেজের প্রশ্ন, আমেরিকানরা চলে গেছে। ভারতকে আফগানিস্তান থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। তাহলে এখন কাবুল বন্ধু, না শত্রু? শীর্ষ সেনাকর্তাদের সঙ্গে সাধারণ সেনাকর্মীদের সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এক সময়ে সেনা কর্মকর্তারাই জঙ্গিবাদীদের সঙ্গে বেশি সখ্যতা রাখতেন। এই সেই জঙ্গিবাদীদের হাতে সাধারণ সিপাহীরাই মরছেন। তাই সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

জঙ্গিবাদের মদদদাতা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীই আজ জঙ্গিবাদীদের নিশানায় পরিণত হচ্ছে। প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে একাধিক জঙ্গিবাদী হামলার ঘটনাও। ডনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০২ সানে সেনাবাহিনী দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই এলাকাটি ৯/১১-এর পর আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসা তালেবান এবং আল-কায়েদার আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিল। যুদ্ধ দ্রুত উত্তর ওয়াজিরিস্তানে ছড়িয়ে পড়ে। অথচ এই সেনাই এক সময় জঙ্গিবাদীদের মদদ জোগাতো। সেই সময়ে ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা নিরাপদে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে গিয়ে দাবি করেছিলেন, শতাধিক বিদেশি জঙ্গিবাদী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তাদের পলায়নে অবাক হয়েছিলেন সাধারণ সিপাহীরা। কারণ এক সময়ে তালেবান বা অন্যান্য ইসলামিক জঙ্গিবাদীকে মদদ জুগিয়েছিলেন সেনা কর্মকর্তরাই। তারাই যখন আত্মসমর্পণ বা লড়াইয়ের কথা বলছিলেন তখন সাধারণ সিপাহীদের অবাক হওয়ার তথ্যও ডনে প্রকাশিত হয়। উর্দু প্রেসকে উদ্ধৃত করে ডন আরও জানিয়েছে, ওয়াজিরিস্তান এবং সোয়াতের স্থানীয় আলেমরা সেই সময়ে নিহত সৈন্যদের জানাজা পড়তে অস্বীকার করেছিল। ২০১২ সালে বান্নু কারাগারে দুঃসাহসিক হামলা চালিয়ে ৩৮৪ জন জঙ্গিবাদীকে উদ্ধারের ঘটনাও উল্লেখ করেছে ডন। পাকিস্তানি পত্রিকাটি স্বীকার করে, কারারক্ষীরা পাশে দাঁড়িয়ে তালেবান হামলাকারীদের সমর্থনে এবং শরীয়া আরোপ করার জন্য স্লোগান দিয়েছিল সেদিন।

ডনের মতে, শুধু অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ জেতা যায় না; যুদ্ধ জয়ে সৎ সাহস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অফিসারদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তারা নাকি আর্থিক বিষয়টি যতো ভালো বোঝেন ততোটা যুদ্ধ করার বিষয়ে আগ্রহী নন। অন্ধ ভারত বিরোধিতা পাকিস্তানি অফিসারদের আরও দুর্বল করে তুলেছে। তাই বাড়ছে জঙ্গিবাদী হামলার সংখ্যা। পাকিস্তান নিজেই আজ হয়ে উঠেছে জঙ্গিবাদীদের নিশানা। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সংগঠিত চার-চারটি যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে ১৮ হাজার সেনা। এই তথ্য উল্লেখ করে ডনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০০২ সাল থকে ২০১৪ সালের মধ্যে জঙ্গিবাদের কারণে পাকিস্তানে প্রাণ হারান ৭০ হাজারেরও বেশি নাগরিক। এখনও চলছে জঙ্গিবাদীদের হামলা। পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এবং সেনাবাহিনীর শীর্ষকর্তাদের বড় অংশ তবু জঙ্গিবাদীদের মদদ জুগিয়ে চলেছে। আল-কায়দার পাশাপাশি আফগানিস্তানে তালেবানদের মদদ জোগানো যে ভুল কৌশল ছিল সেটা পাকিস্তানি গণমাধ্যমেই বলা হয়েছে। এতকাল তালেবানদের মদদ জোগানোর পর এখন কেন টিটিপিকে পাকিস্তানি সেনারা ধংস করতে চায় সে প্রশ্নও উঠছে। পারভেজের মতে, বিভ্রান্ত সেনাবাহিনী কখনই টিটিপির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতে পারবে না। কারণ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আদর্শগতভাবে বিভ্রান্ত। আর আদর্শগতভাবে বিভ্রান্ত বাহিনী কখনও যুদ্ধ জয়ী হতে পারে না। কিছুদিন আগেও তারা তালেবানদের মদদ জুগিয়েছিল ক্ষমতায় ফেরার জন্য। এখন তাদের সঙ্গে শত্রুতার মূল্য দিতে হবে ইসলামাবাদকে। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের সাধারণ সিপাহীদের মধ্যে বিভাজন রেখাও স্পষ্ট হচ্ছে। পারভেজ তার লেখায় সেই বিভাজনের বিষয়টিও স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। ধর্মীয় ও আদর্শগত যুক্তি দেখিয়ে জঙ্গিবাদীদের এক সময় সার্বিক সহযোগিতার কথা বলা সেনা কর্মকর্তারাই এখন সেই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধেই অস্ত্র ধরতে বলায় সিপাহীরা ক্ষুব্ধ। সেই ক্ষোভই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে আরও দুর্বল করে তুলছে বলেও আশঙ্কা ডনের। নিজের কলামে পারভেজ জঙ্গিবাদকে মদদ জোগাতে গিয়ে সেনাকর্তারা যে দেশের সর্বনাশ ডেকে এনেছেন সেটা বোঝাতেও ভুল করেননি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে- পাকিস্তানের পরিণতি কী হবে। পাকিস্তান অতীতে চীন ও আমেরিকার ভাড়াটিয়া বাহিনী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা পূরণে রুশ বাহিনীকে আফগানিস্তান থেকে হটাতে আফগানদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়েছে। পরবর্তীতে ওইসব জঙ্গির বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকার সহায়ক বাহিনী হিসেবে কাজ করেছে। একদিন যাদের লালন-পালন করেছে আবার তাদের দমনে তৎপর হয়েছে। আমেরিকাকে খুশি করতে আফগান জঙ্গিদের দমনে নতুন করে জঙ্গি তৈরি করেছে, তাদেরকে নিজ দেশে আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সুযোগ বুঝে তারাই আবার পাকিস্তানী ভূখন্ড দখলে বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সংগে যোগ দিয়েছে। পাকিস্তানে অনেক আগে থেকেই ইসলামী জঙ্গিবাদিরা শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে। তারা দেশটিতে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। তারা অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত, সংখ্যায়ও ভারি। নিজের হাতে গড়া এসব জঙ্গির সংগে পাকিস্তান সরকার বিশেষ করে সেনাবাহিনী আপোষ করে চলে। এরপরও সন্ত্রাসবাদীরা প্রায়ই হামলা চালায়। এর সংগে রয়েছে সাতচল্লিশে দেশ ভাগের পর থেকে চলে আসা বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম। চারদিক সামলাতে গিয়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী চোখে সর্ষের ফুল দেখছে। এই অবস্থায় দেশের অর্থনীতি খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েছে। একে উদ্ধার করার মত বান্ধব আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের বন্ধু চীন এমন বিপদের দিনে সাহায্য দেয়াতো দূরের কথা উল্টো পাওনা ঋণ ফেরত চাইছে।

পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। এ কারণে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দেশটির সঙ্গ ত্যাগ করা মুশকিল। পাকিস্তানের কাছে শতাধিক পারমাণবিক বোমা রয়েছে। বোতাম টিপলেই সেগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনে সমগ্র এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত করতে সক্ষম। ক্ষুধার তাড়নায় পাকিস্তান যদি এসব পারমাণবিক বোমা প্রতিবেশি ইরান কিংবা উত্তর কোরিয়ার কাছে বিক্রি করে দেয় তাহলে নিশ্চিত যুক্তরাষ্ট্রের ঘুম হারাম হবে। এটা পাকিস্তান ভালোভাবে জানে। এই জুজুর ভয় দেখিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এতদিন অনেক সুবিধা আদায় করেছে। বহু ঋণ মওকুফ করিয়ে নিয়েছে এবং অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র সংগ্রহ করেছে। কিন্তু এসব এখন অতীত। পাকিস্তানকে তাদের আর দরকার নেই। তারা এই উপমহাদেশে নতুন মিত্র খুঁজে পেয়েছে। তারা পাকিস্তানের চির বৈরি দেশ ভারতকে বন্ধু হিসবে গ্রহণ করেছে।

এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন মাথ চাড়া দিয়ে উঠেছে। একদিকে ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ, অপরদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের মুখে পড়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ত্রাহি-ত্রাহি অবস্থা। এই অবস্থায় পাকিস্তান কয়েক টুকরোয় পরিণত হলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button