চট্টগ্রামসংগঠন সংবাদ

কর্ণফুলী উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা: নানা ইস্যুতে বিতর্কের ঝড়

সিনিয়র প্রতিবেদকঃ
আগের কমিটি মেয়াদত্তীর্ণের ৬ মাস পর ২৫ সদস্য বিশিষ্ট কর্ণফুলী উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরি কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটি গঠনে ঝিঁমিয়ে পড়া ক্রীড়াঙ্গন প্রাণ ফিরে পেলেও বিতর্ক তৈরি করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল উপজেলার নামসর্বস্ব ৯ ক্রীড়া সংগঠক দাবিদার এ কমিটি বাতিলের দাবিও তোলেছেন। এ দাবির প্রেক্ষিতে একটি অভিযোগও করেছেন উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে।
১৪ মার্চ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে দেওয়া এই লিখিত অভিযোগকারীরা হলেন-শিকলবাহা ক্রীড়া চক্রের সভাপতি মো. মুছা, শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ, সাবেক খেলোয়াড় ও সমাজ ক্যালণের সভাপতি ইউপি সদস্য সাইফুদ্দিন মানিক, উপজেলা ক্রিকেট ও সমাজ ক্যালণের সহ-সভাপতি আবু জাফর ছিদ্দিক (বাবু), সাবেক খেলোয়াড় ও মিতালি সংঘের সভাপতি আকতার জাবেদ, সাবেক খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠক আহম্মদ শরীফ মনির, কর্ণফুলী ক্রিকেট একাডেমির সভাপতি ও সাবেক খেলোয়াড় মো. সালা উদ্দিন, এএফসি কোচ ও ক্রীড়া সংগঠক মো. ফরিদ এবং শিকলবাহা স্পোর্টস ক্লাবের সভাপতি মো. ইয়াছিন আরাফাত।
এরা অভিযোগে দাবি করেন, কর্ণফুলী উপজেলা জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার নতুন কমিটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের গঠনতন্ত্র মোতাবেক গঠিত হয়নি। অথচ গতবার যেভাবে কমিটি হয়েছে এবারও একই পদ্ধতিতে কমিটি হলো।
তথ্যে জানা যায়, গত ৭ মার্চ কর্ণফুলী উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরি কমিটি গঠন করা হয়। তার ঠিক ৮ দিন পর (১৪ মার্চ) ৯ সংগঠক অভিযোগ দিলেন। যাদের সিংহভাগ কেউ পূর্বে ক্রীড়া সংস্থার সদস্য পদে ছিলেন না। তাদের ক্লাব ও কোন সদস্য পদ নেই বলে বর্তমান ক্রীড়া সংস্থা জানান।
এমনকি গত ৪ বছরে কর্ণফুলী উপজেলায় ক্রীড়া সংস্থা কতৃক যে সমস্ত টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়েছে, যেমন-আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট, দাবা প্রতিযোগিতা, সাঁতার প্রতিযোগিতা, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ফুটবল লীগেও তাঁদের কাউকে সংগঠন নিয়ে অংশ নিতে দেখা যায়নি।
যদিও ক্রীড়া সংস্থার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, যারা খেলাধুলায় অংশ গ্রহণ করেন তাঁরাই ক্রীড়া সংস্থার প্রতিনিধি হন। যেহেতু কর্ণফুলী একটি নতুন উপজেলা সে জন্য নির্বাচন করে কমিটি গঠন করার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি বলে সংস্থার দাবি। ফলে, সকলের সম্মতিতে সাধারণ সভা ডেকে কমিটি গঠন করা হয়। এতে সভায় অনিয়মিত কয়েকজন বাদও পড়েছেন।
কর্ণফুলীর বেশির ভাগ ক্রীড়াবিদরা জানান, যারা নতুন কমিটি বাতিল চেয়েছেন। এটি মূলত নিছক একটি পরিকল্পিত রাজনীতিক ইস্যু টানা হয়েছে। একই হাতের লেখায় একই কলমের কালিতে স্বাক্ষর করা অভিযোগ কপি নিয়েও ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
এতেই বুঝা যায়, নতুন ইউএনও ও কর্ণফুলী উপজেলা ক্রীড়া সংস্থাকে বিতর্কিত করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। কেননা, পুর্বে যেভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঠিক একই ভাবে নতুন করে ২৫ সদস্য কমিটি গঠন করা হয়েছে।
যদিও লিখিত অভিযোগকারীরা জানান, কর্ণফুলীর ক্রীড়াঙ্গনে যারা প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত এমন সদস্যের জানানো হয়নি। অগোচরে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে, ক্রীড়া সংগঠকদের মূল্যায়ন করা হয়নি, আবার ক্রীড়া-সংস্কৃতির সাথে জড়িত নয়, এমন ব্যক্তিদের কমিটিতে পদায়ন করা হয়েছে। যার সর্বৈব অসত্য বলে কর্ণফুলী ক্রীড়া সংস্থার নেতারা দাবি করেছেন। অথচ সভা ঘোষণা উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে প্রচার করা হয়।
বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি চরলক্ষ্যার ইউপি চেয়ারম্যান মো. সোলায়মান তালুকদার বলেন, ‘শুধুমাত্র রাজনীতিক গ্রুপিং এর কারণে এ অভিযোগ। মাননীয় সংসদ সদস্য ও সংস্থার উপদেষ্টা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি’র পরামর্শেক্রমে ক্রীড়া সংস্থার কমিটি গঠন করা হয়।’
বর্তমান কমিটির আরেক নির্বাহী সদস্য সাজ্জাদ খান সুমন বলেন, ‘রাজনীতিক ভাবে বিভাজনের পর সাবেক ভূমিমন্ত্রী বিরোধী গ্রুপের লোকজন এ অভিযোগ করেছেন।’ আরেকজন সদস্য না প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে জানান, বিশেষ করে এএফসি কোচ দাবিদার মো. ফরিদ একজন বিতর্কিত সংগঠক। সে বিগত সময়ে কর্ণফুলী উপজেলার খেলোয়াড়দের পটিয়া উপজেলার পক্ষে খেলাতেন। এ অভিযোগে তাকে বহিষ্কারের পর থেকে ক্রীড়া সংস্থার পিছু লেগেছে।’
একই ভাবে বর্তমান উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার একাধিক নেতারা জানান, অতীতে ক্রীড়া সংস্থায় ৪৯ টি আবেদন পড়েছে। কিন্তু ঘন ঘন ইউএনও বদলির কারণে কাউকে সদস্য পদ দেয়া হয়নি। যারা খেলাধুলায় অংশ গ্রহণ করেছেন তাঁদেরকেই কমিটিতে রাখা হয়েছে। সবাই ক্রীড়া সংগঠক আর সাবেক খেলোয়াড়।
মহিলা নেত্রী ও ক্রীড়া সংগঠক বর্তমান কমিটি নির্বাহী সদস্য মোমেনা আকতার নয়ন বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে খেলোয়াড় তৈরির জন্য উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কোনো বিকল্প নেই। তবে দীর্ঘদিন ক্রীড়া সংস্থার কমিটি না থাকায় ক্রীড়াঙ্গন স্থবির ছিল। বর্তমানে উপজেলার ক্রীড়াপ্রেমীরা মেধা বিকাশের সুযোগ পাবেন। কিশোর-তরুণেরা বিভিন্ন খেলা বঞ্চিত হবেন না।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত বলেন, ‘অভিযোগ একটি পেয়েছি। এ বিষয়ে শুনানিক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) ৪ বছরের জন্য কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুমা জান্নাতকে সভাপতি ও মুহাম্মদ সেলিম হককে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটিতে কমিটির মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সংসদ সদস্য ও উপদেষ্টা হিসেবে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে মনোনীত করা হয়।
আর বাকিরা সদস্যরা হলেন-সহ-সভাপতি কর্ণফুলী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জহির হোসেন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলাম চৌধুরী, চরলক্ষ্যার ইউপি চেয়ারম্যান মো. সোলায়মান তালুকদার, দৌলতপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি শহিদুল আলম চৌধুরী, অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক পদে ক্রীড়া সংগঠক মহিউদ্দিন মুরাদ, যুগ্ম-সম্পাদক পদে ওয়াসিম আহমেদ মারুফ, যুগ্ম-সম্পাদক শাহরিয়ার মাসুদ, কোষাধ্যক্ষ আলমগীর বাদশা ও নির্বাহী সদস্য হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা (তখন যিনি দায়িত্বে থাকবেন), জুলধা ফুটবল একাডেমীর শেখ মুহাম্মদ,  বড় উঠান স্পোর্টস৷ একাডেমির সাজ্জাদ খান সুমন, ক্রীড়া সংগঠক আলমগীর কবির, কালারপোল ক্রীড়া সংস্থা ফুটবল একাডেমির এম এ রহিম, সিপিপির আব্দুল মাবুদ বাবুল, বড়উঠান ক্রীড়া সংস্থা ফুটবল একাডেমির সাইদ খান আরজু, কর্ণফুলী বয়েজ ক্লাবের ওয়াজ উদ্দিন আজাদ, চরলক্ষ্যা স্পোর্টস একাডেমির ফরহাদ জিতু, সংরক্ষিত সদস্য হিসেবে মহিলা নেত্রী ও ক্রীড়া সংগঠক মোমেনা আকতার নয়ন ও বসুন্ধরা শুভ সংঘ কর্ণফুলীর শারমিন আকতার মনি।
জানা যায়, ২০১৮ সালে গঠিত হয় কর্ণফুলী উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা। এ কমিটির মেয়াদ শেষ হয় গত ৯ সেপ্টেম্বর।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button