অর্থ ও বাণিজ্যবিশেষ খবর

স্মার্ট ও উন্নত জাতি বিনির্মাণে মাদক, তামাক নির্মূল জরুরি -ডেপুটি স্পিকার এড. শামসুল হক টুকু, এমপি

স্মার্ট ও উন্নত জাতি বিনির্মাণে মাদক, তামাক নির্মূল জরুরি
– মানস আয়োজিত আলোচনা সভায় ডেপুটি স্পিকার এড. শামসুল হক টুকু, এমপি

মাদকের অভিশাপে তরুণ সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, উন্নত জাতি হিসেবে বিশ^ দরবারে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে সুস্থ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। মাদক এ পথে প্রধান বাধা। আমাদের তরুণদেরকে মাদক ও তামাকের নেশা হতে দুরে রাখতে হবে। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস-২০২৩ উপলক্ষ্যে আজ (২৫ জুন ২০২৩) সকাল ১১টায় মানস- মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা’র উদ্যোগে বারডেম হাসপাতাল মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন জাতীয় সংসদের মাননীয় ডেপুটি স্পিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. শামসুল হক টুকু, এমপি।

তিনি আরো বলেন, তরুণ-যুব সমাজ বিপথগামী হলে আগামীতে রাষ্ট্র বিপদে পড়বে। মাদক ও তামাক নির্মূলে ধর্মীয় ও পারিবারিক অনুশাসন জরুরি। অনেকেই ধূমপায়ী এবং মাদকাসক্ত হয়েও বর্তমানে ধূমপান ও মাদকমুক্ত জীবন যাপন করছেন। এক্ষেত্রে দৃঢ় মনোবল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে- ভালোভাবে না কি অন্ধকার পথে নিজেকে গড়ে তুলবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলার মাঠ, খোলা স্থান না থাকলে অনুমোদন দেওয়া হবে না। এমন সিদ্ধান্ত মাদক নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত ইতিবাচক।

মানস এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী’র সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বিগ্রে. জেনা. (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতি: পরিচালক (ঢাকা বিভাগ) মো: জাফরুল্ল্যাহ কাজল, আইউবিএটি’র রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক ড. মো: লুৎফর রহমান। সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। অন্যান্যের মধ্যে আইইউবিটি’র শিক্ষক রুবেল হোসেন ও শিক্ষার্থী পূর্ণিমা রানী রায় বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ‘মানস’ এর প্রকল্প সমন্বয়কারী উম্মে জান্নাত। অনুষ্ঠানে হাবিবুল বাশার সুমনকে ‘অধূমপায়ী ব্যক্তিত্ব সম্মননা ২০২৩’ প্রদান করা হয়। সভা আয়োজনে সহায়তা করে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলোজি (আইইউবিএটি)।

প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, ভালো নেশা ইতিবাচক। তবে মাদকের নেশা ভয়ঙ্কর। মাদকের ফলাফল কখনোই ভালোর দিকে যায় না। মাদক তিলে তিলে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে। এর শুরুটা হয় ধূমপানকে দিয়ে। তামাক ও ধূমপান মাদকাসক্তির নাটের গুরু। মাদকাসক্তের মধ্যে ৯৮% ধূমপায়ী। হত্যা, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধের পেছনে বড় কারণ মাদক। বাংলাদেশ মাদক উৎপাদন করা হয় না, তারপরেও মাদকে সয়লাভ হয়ে গেছে দেশ। সাম্প্রতিক সময়ে ‘আইস’ বড় আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে দেশে ১ কোটিরও বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে এবং তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই কিশোর তরুণ ও যুবক বয়সী! ৬০ শতাংশ অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। যা অত্যন্ত আতঙ্ক ও ভয়ের কারণ। মাদকের কারণে আমাদের তরুণরা বিপথগামী হচ্ছে। বাবা-মা, প্রিয়জনদেরকে হত্যা করতেও পিছপা হয় না। ঢাকায় সক্রিয় ৫২ কিশোর গ্যাং, বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত তারা। মূলে মাদক! ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য তুলে ধরে ড. অরূপতরন আরো বলেন, মাদক ব্যবসার কারণে বাংলাদেশে বছরে পাচার হয় প্রায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা! মাদক অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরুপ। মাদক নির্মূলে মাদকের সহজলভ্যতা রোধ, আইনের যথাযথ প্রয়োগ, সচেতনতা বৃদ্ধি করা, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্বারোপ, মাদকাসক্তদের প্রতি বন্ধুত্বসূলভ আচরণ প্রদর্শন ও চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির নিশ্চিত করতে হবে।

হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, খেলাধূলায় শারিরীক সক্ষমতা প্রয়োজন। ধূমপান বা মাদক গ্রহণ করলে তা সম্ভব না। মাদক জীবন ও যৌবন দুটোই কেড়ে নেয়। মাদকের কারণে আমার দেখা অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ বিপথে চলে গেছে। নিজের জীবন নিজেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমি কোন দিকে যাবো। এটা আমার পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মানস এর মতো সামাজিক সংগঠনগুলোকে আরো এগিয়ে বআসতে হবে।

অধ্যাপক ড. মো: লুৎফর রহমান বলেন, আমাদের বিশ^বিদ্যালয় ‘আইইউবিএটি’তে ধূমপান ও র‌্যাগিং সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। তামাকজাত দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে সেগুলো বন্ধ করা গেলে মাদকের আগ্রাসন কমানো যাবে। বস্তি ও গ্রামাঞ্চলে তামাক ও মাদক বিরোধী প্রচারণা বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি। বিগ্রে. জেনা. (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, তরুণরাই আমাদের আলোকবর্তিতা। মাদক সেই সম্ভাবনাময় আলোকবর্তিতা ধ্বংস করে ফেলছে। মাদকের নেতিবাচক প্রভাব পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবখানেই পড়ছে। মাদকাসক্তি একটি মানসিক রোগ তাই ঘৃণা নয়, ভালোবাসা দিয়ে মাদকাসক্তদের সারিয়ে তুলতে হবে এবং মাদক গ্রহণ প্রতিরোধ করতে হবে। মাদক ছেড়ে খেলাধূলা ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে তরুণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মাদকমুক্ত থাকতে হলে দৃঢ মনোবল ধরে রাখতে হবে।

মো: জাফরুল্ল্যাহ কাজল বলেন, মাদকের ভয়াবহ বিস্তার রোধে জাতিসংঘের ৪২তম অধিবেশনে মাদক বিরোধী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ বেসরকারী সংগঠন যেমন- মানস ও এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশে মাদক নির্মূলে কঠোর আইন প্রনীত হয়েছে। সরকারি চাকুরী প্রাপ্তিতে এবং চাকুরিরতদের মধ্যে মাদকের উপস্থিতি রোধে ‘ডোপ টেস্ট’ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এটি ইতিবাচক দিক। মাদক নির্মূলে তামাক অর্থাৎ- ধূমপান নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে। কারণ, কোম্পানিগুলো নিত্য নতুন আঙ্গিকে তামাক ও মাদকদ্রব্য বাজারজাত করছে।

সভায় সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ, আইইউবিএটি’র শিক্ষকবৃন্দ ও শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button