প্রযুক্তিশীর্ষ নিউজ

দুদকের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য চুরি করে কোটি কোটি টাকা ঘুষ আদায়

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ওয়েবসাইট থেকে তথ্য চুরি করে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা ঘুষ নেওয়া চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের লালবাগ বিভাগ।

গ্রেফতাররা হলেন মো. সেলিম ওরফে তানভীর ইসলাম ওরফে শফিকুর রহমান (৩৯), মো. সোহাগ পাটোয়ারী (৩৮), আব্দুল হাই সোহাগ (৩৮) ও মো. আজমীর হোসেন (৩৭)।

গত সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৭টি মোবাইল, ১০টি সিম, বাংলা টিভি ৭১-এর কর্ডলেস মাউথ পিস, পত্রিকা, মানবাধিকার কমিশন ও  দুর্নীতি দমন কমিশনের সাতটি ভুয়া আইডি কার্ড, দুদক কর্তৃক বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানের ১২টি প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন ব্যক্তির ফোন নম্বর লেখা তিনটি নোটবুক জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (সাইবার আ্যন্ড স্পেশাল ক্রাইম ও ডিবি-উত্তর) খোন্দকার নুরুন্নবী।

তিনি বলেন, দুদকের নামে ঘুষ গ্রহণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম রমনা থানায় গত ১৩ আগস্ট মামলা করেন। এর পরদিন যাত্রাবাড়ী, মুগদা ও এয়ারপোর্ট এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে দুদকের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তার নামে অভিযোগ নিষ্পত্তির আশ্বাসে ঘুষ হিসেবে টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে খোন্দকার নুরুন্নবী বলেন, কোনো ব্যক্তি হঠাৎ করে সম্পদশালী হলে তাদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে এবং মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে চক্রটি। তাদের বিরুদ্ধে দুদক বরাবর ভুয়া অভিযোগ তৈরি করে। অভিযোগগুলো বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে তাদের কাছে পাঠিয়ে মোটা অংকের অর্থ দাবি ও আদায় করে ভুয়া তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করে তাদের ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পাঠাতো এই চক্র।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার শফিকুর রহমান এক সময় রড মিস্ত্রির কাজ করে পরবর্তীতে নির্মাণ কাজের ঠিকাদার ছিলেন। দুদকের ওয়েবসাইট থেকে তিনি তথ্য নিতেন যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বা মামলা রয়েছে। অভিযোগ থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে যারা জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা তাদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দিতেন। দুদক কর্মকর্তার পরিচয়ে এসব অভিযোগ তুলে নেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন।

গ্রেফতার সোহাগ পাটোয়ারী এক সময় ডিজে পার্টিতে কাজ করতেন। সেখান থেকে তার নারী ও দালালদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। দুদকের ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ব্যক্তির নামে গঠন করা অভিযোগের দায় মুক্তি সংক্রান্ত চিঠি ডাউনলোড করে তিনি পাঠাতেন প্রতারক সেলিমের কাছে।

ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বলেন, চক্রটি টার্গেট করা প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তিদের নামে দুর্নীতির অভিযোগের চিঠি বানিয়েও পাঠাত। সেলিম এভাবে ওসব ব্যক্তির মোবাইল নম্বর আব্দুল হাই ও আজমির হোসেনকে দিয়ে সংগ্রহ করাতেন। তারপর দুদকের কমিশনার, মহাপরিচালক, পরিচালক ও উপ-পরিচালকদের নাম ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নিতেন। প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ করত বলে তারা ৮০ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন। তারা দুদক কার্যালয়ের সামনে অথবা সেগুনবাগিচায় নাট্যমঞ্চ এলাকার আশপাশে টার্গেট ব্যক্তিদের আসতে বলে ক্যাশ অথবা নগদ ফাইন্যান্সিয়াল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকাগুলো হাতিয়ে নিতেন।

ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা লাখ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। এভাবে তারা এক বছরে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আসামিরা মুহূর্তেই টাকা খরচ করে নতুন প্রতারণায় হাত দিত। আসামিরা বর্তমানে রিমান্ডে আছেন। এখন পর্যন্ত এ চক্রের সঙ্গে দুদকের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button