চট্টগ্রামবিনোদন

মরতে বসা কর্ণফুলী নদীতে জৌলুসহীন ‘সাম্পান বাইচ’

নিজস্ব প্রতিবেদক (চট্টগ্রাম)
কর্ণফুলী নদী দখল ও দূষণরোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি’র উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী বর্ণীল সাম্পান বাইচ প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়েছে। এ আয়োজনের অংশ হিসেবে চরপাথরঘাটার পুরাতন ব্রিজঘাট সিডিএ মাঠে চলমান রয়েছে তিন দিনের চাঁটগাইয়া সাংস্কৃতিক মেলাও।
শুক্রবার (১০ মে) বিকেল সাড়ে ৪ টায় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা শেষে সমাপনী অনুষ্ঠানে পুরষ্কার বিতরণের মধ্যদিয়ে ৩ দিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী এ আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে।
চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম, সামাজিক সংগঠন সৃষ্টি, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিলো সাম্পান বাইচ প্রতিযোগিতা।
কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাড় ফিরিঙ্গিবাজার ঘাট থেকে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের চরপাথরঘাটা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। বাইচ দেখতে দু’পাড়ে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামলেও অনেকেই আয়োজন কমিটির সমালোচনা করতে দেখা যায়। কেননা, নদী পাড়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা না থাকায় বিশৃঙ্খল পরিবেশে ভাড়া নৌকা আর ভাড়াটে মাঝিদের দিয়ে এ প্রতিযোগিতা তাঁর প্রকৃত জৌলস হারিয়েছেন বলে  কড়া মন্তব্য করেন। এছাড়াও কর্ণফুলী নদী সবার। সার্বজনীন ভাবে সকলে চান কর্ণফুলী নদী দখল ও দূষণ মুক্ত হোক। কিন্তু সাধারণ মানুষজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাম্পান বাইচ প্রতিযোগিতার সার্বজনীন অনুষ্ঠানটি বিগত কয়েক বছর ধরে একটি গ্রুপ কুক্ষিগত করে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে পরিণত করেছেন। ফলে, সাধারণ মানুষ দিন দিন এ অনুষ্ঠান দেখার আগ্রহ হারাচ্ছেন।
এতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব হায়দার আলী রনির সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
চট্টগ্রামের জনপ্রিয় আবৃত্তি শিল্পী ও উপস্থাপক দিলরুবা খানমের সঞ্চালনায় এতে উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল সংগঠনের জেলা গভর্ণর লায়ন এমডি এম মহি উদ্দিন চৌধুরী পিএমজেএস, লায়ন কোহিনুর কামাল এমজেএস, ডায়মন্ড সিমেন্ট এর ডেপুটি ডিরেক্টর লায়ন মো. হাকিম আলী, কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত, কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সোলায়মান তালুকদার,  দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল ইসলাম চৌধুরী, মেলা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক চৌধুরী ফরিদ, নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলিউর রহমান, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি এস এম পেয়ার আলী, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি জাফর আহমদসহ প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, ‘কর্ণফুলী নদী রক্ষার দায়িত্ব চট্টগ্রাম বন্দরের। এই কর্ণফুলী নদী দেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। অবৈধভাবে কর্ণফুলী নদীর তীর দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার আহ্বান করেন। কারণ বঙ্গবন্ধু সারা জীবন নদী ও নৌকাকে ভালোবেসেছেন। সুতরাং আমাদের চট্টগ্রামকে বাঁচতে হলে কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে হবে।’
বক্তারা আরও বলেন, ‘কর্ণফুলী বাঁচানোর কোনো বিকল্প নেই। অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই সাথে কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে। রায় বাস্তবায়নে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে ছোট-বড় মিলিয়ে তিন হাজারের বেশি সাম্পান চলাচল করে।’
সাম্পান প্রতিযোগিতায় অংশ নেন চট্টগ্রাম ইছানগর-বাংলাবাজার সাম্পান মালিক সমিতি, ইছানগর সদরঘাট সাম্পান মালিক সমিতি, চরপাথরঘাটা-ব্রিজঘাট সাম্পান চালক সমিতি, চরপাথরঘাটা-ব্রিজঘাট ব্যবসায়ী মালিক সমিতি, পুরাতন ব্রিজঘাট মাছ ব্যবসায়ী সমিতিসহ একাধিক লাল নীল সবুজ দল। প্রতিটি সাম্পানে ছিলেন প্রতিযোগি দলের ৮ সদস্য। বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টা থেকে ১টা পর্যন্ত কর্ণফুলী নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার দাবিতে শতাধিক সাম্পান ভাসিয়ে কর্ণফুলী রক্ষার দাবিতে অভয়মিত্রঘাট টু বাকলিয়া চরে ১৮ তম ‘সাম্পান শোভাযাত্রা’র আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সিএমপি পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। উদ্বোধক ছিলেন পরিবেশ সংগঠক ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সহযোগিতায় এ কর্মসূচির আয়োজন করেন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংস্কৃতি একাডেমি ও কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি। জনসচেতনতা সৃষ্টির অংশ হিসেবে এ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে কর্ণফুলী নদীকে দূষণ ও দখল মুক্ত করতে অভয়মিত্র ঘাট থেকে রাঙ্গুনিয়ার বেতাগীঘাট ৫০ কিলোমিটার ব্যাপী প্রচার অভিযান চালানো হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button