আঞ্চলিকশীর্ষ নিউজ

কর্ণফুলীতে সেনা মেজর, সার্জেন্ট ও সৈনিক মিলে ডাকাতি: ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার-৩, সেনা হেফাজতে-১

নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে অস্ত্র উদ্ধারের নামে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা টিম পরিচয় দিয়ে একটি হেফজ ও এতিমখানা থেকে বিদেশি মুদ্রাসহ প্রায় ৫ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় ৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।
ভয়ঙ্কর এই ডাকাতির ঘটনায় নেতৃত্ব দেন ওয়াকিটকি হাতে অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা মেজর। তার সাঙ্গপাঙ্গ হিসেবে এক সেনা সার্জেন্ট, এক সৈনিক, চার সাংবাদিক, এক শ্রমিক নেতা ও ড্রাইভার ডাকাতিতে অংশ দেন। পরে ওই প্রতিষ্ঠানে লুটপাট করে পালাতে গিয়ে জনতার হাতে ৪ জন আটক হন।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সাড়ে ৯ টার দিকে কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খোয়াজনগর আলত্বাফিয়া ইয়াছিনিয়া আল এজাজ ইন্টারন্যাশাল হেফজ ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল ৬ সেপ্টেম্বর সকালে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ডাকাতির অপরাধে সিএমপির কর্ণফুলী থানায় মামলা দায়ের করেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের হিসাব রক্ষক মোহাম্মদ ইসহাক (৫০)।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহির হোসেন। যার থানা মামলা নম্বর-০৯/৩০৪। মামলাটি তদন্ত করবেন  কর্ণফুলী থানার ওসি তদন্ত মেহেদী হাসান।
গেপ্তারকৃতরা হলেন-কক্সবাজার পেকুয়া উপজেলার মেহেরনামা গ্রামের মৃত জামাল হোসেনের ছেলে মো. শফিকুল ইসলাম (৪৮), বাঁশখালী উপজেলার মাষ্টারপাড়ার নাপোড়া গ্রামের বিধান দেবের ছেলে সাংবাদিক বিদ্যুৎ দেব (৩৫) ও ভূজপুর থানার পোদ্দারপাড়া গ্রামের দুলাল বাবুর ছেলে ড্রাইভার সুমন কান্তি দে (৪০)।
এজাহারভূক্ত বাকি আসামিরা হলেন-সীতাকুণ্ড থানার ভাটিয়ারী বিএমএ ব্যান্ড প্লাটুনের সৈনিক জামাল (৩০), চন্দনাইশের ইসলামাবাদ বরকল এলাকার আব্দুল মনজুরের ছেলে সাংবাদিক রাকিব আল হোসেন শিমুল (৩৯), চকরিয়া বরইতলী হিন্দু পাড়া এলাকার সুজিত কান্তি দের ছেলে সাংবাদিক দুলাল কান্তি দে (৩৭), নগরীর বাকলিয়া ডিসি রোডের জালাল আহম্মদের ছেলে সাংবাদিক আব্দুস সাত্তার টিটু (৩৬) ও চান্দগাঁও পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন (৪৩)।
স্থানীয়দের খবরে ঘটনাস্থলে আসা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই শেষে নিশ্চিত হন মো. সুহেল আনোয়ার (৪০), সে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে আর্মি সিকিউরিটি ইউনিটের সার্জেন্ট পদে কর্মরত। ফলে, যথাযথ নিয়ম মেনে ক্যাপ্টেন মো. তাসলিম উল হাসানের নিকট তাকে হস্তান্তর করেন। সুহেল জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী পৌরসভার আজহারুল ইসলামের ছেলে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৫ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯ টার দিকে কর্ণফুলী থানাধীন চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের (৪নং ওয়ার্ড) খোয়াজনগর আলত্বাফিয়া ইয়াছিনিয়া আল এজাজ ইন্টারন্যাশনাল হেফজ ও এতিমখানার মূল গেইটের
দারোয়ান আজগর (৫৫) কে একদল দুষ্কৃতিকারী সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা টিম পরিচয় দিয়ে ভবনে প্রবেশ করেন।
কথিত গোয়েন্দা দলটি এজাজ হুজুরের কাছে অবৈধ অস্ত্র আছে জানিয়ে রুম তল্লাশি শুরু করেন। এ সময় দারোয়ান আজগর কে ওয়াকিটকি হাতে থাকা ব্যক্তি নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর বলে পরিচয় দেন। রুমে প্রবেশ করেই হাফেজ ছবীর এর মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে ধমক দেন। নড়াচড়া করলে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেন। পরে ভিন্ন ভিন্ন রুমে তারা তল্লাশি চালান।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ভবনের দ্বিতীয় তলায় হুজুরের রুমে প্রবেশ করে লকার ভাঙ্গার চেষ্টা করেন। পরে আলমিরার ভিতর থেকে নগদ ৩ লক্ষ টাকা, ওয়ারড্রপ থেকে নগদ ৬ হাজার দিরহাম ও রিয়ালসহ মোট প্রায় ৫ লাখ টাকা লুট করে নেন। দ্রুত দলটি মাদ্রাসা কম্পাউন্ড থেকে পায়ে হেঁটে রাস্তার দিকে এসে মাইক্রোবাস ও মোটর সাইকেল যোগে সরে যেতে চাইলে দারোয়ান ডাকাত
ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করেন।
এতে স্থানীয় লোকজন আওয়াজ শোনে মাইক্রোবাসসহ ৪ জনকে আটক করেন। অন্যান্য ডাকাত দলের সদস্যরা লুণ্ঠিত নগদ টাকা ও ওয়াকিটকি নিয়ে পালিয়ে যান। পরে রাত ১১টার সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশকে খবর দিলে দ্রুত তাঁরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পলাতক আসামীদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করেন।
এ প্রসঙ্গে আল এজাজ ইন্টারন্যাশাল ও এতিমখানার পরিচালক মো. এজাজুর রহমান জানান, ‘সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা টিম পরিচয়ে ৯ জন ব্যক্তি মাদরাসায় প্রবেশ করে তছনছ করে প্রায় ৫ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।’
নির্ভরযোগ্য অপর একটি সূত্র জানায়, এতিমখানার পরিচালক মো. এজাজুর রহমান বেশ কিছু দিন আগে ১৫ জন ব্যক্তিসহ সৌদি আরব যান। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও দেরহাম এনেছেন বলে প্রচার হয়। যেহেতু কেএসআরএম এর লোকজনের আর্থিক অনুদানে প্রতিষ্ঠানটি চলে।
এজাজের কাছে স্বর্ণ অলঙ্কার, সহায় সম্পদ ও বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা আছে বলে কেউ না কেউ ডাকাতদের খবর দেয়। এরপর তিন দিন আগে থেকেই একটি নোহা গাড়ি ও মোটর সাইকেল নিয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা খোয়াজনগর গ্রামে রেকি শুরু করেন। পরে অপারেশন বাস্তবায়নে গত ৫ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯ টায় ডাকাতি করতে গিয়ে ৪ জন ধরা পড়েন। এদের একজন সাবেক মেজর, বর্তমান সার্জেন্টসহ কথিত ৪ সাংবাদিক ও ড্রাইভার।
এ প্রসঙ্গে সিএমপি বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সুহেলকে তাঁদের ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া বাকি আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।’
এর আগে ২০১১ সালের ৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের আনোয়ারা এলাকার তালসরা দরবার শরীফ থেকে ২ কোটি ৭ হাজার টাকা লুট করার অভিযোগ উঠেছিলো র‍্যাবের বিরুদ্ধে।
ওই ঘটনায় দরবার শরীফের গাড়ি চালক মোহাম্মদ ইদ্রিস বাদী হয়ে র‍্যাব-৭ চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাবেক অধিনায়ক (বরখাস্ত) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুলফিকার আলী মজুমদারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানায় ডাকাতির মামলা দায়ের করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button