অধস্তন আদালতের বিচারকগণের বদলি ও পদায়ন নীতিমালার খসড়ায় জেলা ও দায়রা জজদের মতামত চাওয়া হয়েছে
ঢাকা, ৪ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : অধস্তন আদালতের বিচারকগণের বদলি ও পদায়ন নীতিমালার খসড়া, ২০২৪ এর উপর জেলা ও দায়রা জজ এবং সমপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ৭ নভেম্বরের মধ্যে মতামত চাওয়া হয়েছে।
অধস্তন আদালতের বিচারকগণের বদলি ও পদায়ন নীতিমালার খসড়া, ২০২৪ গতকাল প্রকাশ করা হয়।
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছ, অধস্তন আদালতে কর্মরত কোনো বিচারক প্রতিটি কর্মস্থলে অনধিক তিন বছর দায়িত্ব পালন করবেন। তবে, যদি প্রধান বিচারপতির কাছে প্রতীয়মান হয় যে কোনো বিচারক কোনো বিশেষ দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন বা কোনো বিচারক বদলি হলে বিচার প্রশাসনে ব্যাঘাত সৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে, সে ক্ষেত্রে ওই বিচারক অনধিক আরও এক বছর ওই কর্মস্থলে নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। আর চৌকি আদালতে কর্মরত বিচারকের পদায়নের মেয়াদকাল হবে সর্বোচ্চ এক বছর।
কোনো ধরনের ব্যতিক্রম ছাড়া অধস্তন আদালতের বিচারকদের দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতে পালাক্রমে বদলি করতে হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, একই কর্মস্থলে পুনঃপুন বদলি বারিত করার বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়-কোনো কর্মস্থলে একজন বিচারককে একাদিক্রমে দুবার বদলি বা পদায়ন করা যাবে না। তবে শর্ত থাকে যে কোনো বিচারক বদলিসূত্রে কোনো কর্মস্থলে যোগদান করার ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার আগে ওই বিচারক পদোন্নতিপ্রাপ্ত হলে তার বর্তমান কর্মস্থলে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে তাকে পদায়ন করা যাবে। পুরো চাকরিজীবনে একজন বিচারককে একই কর্মস্থলে, অর্থাৎ নির্দিষ্ট জেলায় তিনবারের অধিক বদলি বা পদায়ন করা যাবে না বলেও খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে।
বিচারকদের বদলির ক্ষেত্রে অনুসরণীয় সাধারণ নীতি সম্পর্কে খসড়ায় বলা হয়, শূন্য পদ ছাড়া কোনো বিচারককে বদলি করা যাবে না। কোনো বিচারককে এমন কোনো কর্মস্থলে বদলি করা যাবে না, যেখানে তার পরিবারের (স্বামী/ স্ত্রী, পিতা, মাতা, শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাই, বোন, পিতামহ, মাতামহ) আইনজীবী পেশায় নিযুক্ত রয়েছেন। কোনো বিচারক যে জেলায় ক্রয়সূত্রে ১০ শতাংশের বেশি কৃষি বা অকৃষি ভূমির মালিক, সে জেলায় পদায়ন লাভ করতে পারবেন না। এ ছাড়া স্বামী-স্ত্রী বিচারক হলে একই কর্মস্থলে বদলির অগ্রাধিকার পাবেন, বছরের নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বদলি কার্যক্রম সম্পন্ন হবে এবং অধস্তন আদালতের কোনো বিচারকের প্রেষণের মেয়াদ অনধিক তিন বছর হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে।
প্রস্তুতকৃত অধস্তন আদালতের বিচারকগণের বদলি ও পদায়ন নীতিমালা, ২০২৪ (খসড়া) বিষয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে কর্মরত সকল জেলা ও দায়রা জজ এবং সমপর্যায়ের বিচারকবৃন্দের মতামত লিখিত আকারে প্রদান করার জন্য অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন প্রধান বিচারপতি।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহম্মদ ভূঞা স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গতকাল প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, জেলা ও দায়রা জজ এবং সমপর্যায়ে বিচারকবৃন্দ মতামত লিখিত আকারে আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের দপ্তরে প্রেরণে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে একটি ই-মেইল ও যিধঃংধঢ়ঢ় নাম্বার দেয়া হয়েছে, সেখানেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রেরণ করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বিগত ২১ সেপ্টেম্বর দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশ্যে অভিভাষণ প্রদান করেন। ওই অভিভাষণে দেশের বিচার বিভাগের জন্য একটি রোডম্যাপ তুলে ধরেন তিনি। ওই রোডম্যাপে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক একটি বদলি ও পদায়ন নীতিমালার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধান বিচারপতির দিক-নির্দেশনা অনুসারে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার কর্তৃক অধস্তন আদালতের বিচারকগণের বদলি ও পদায়ন নীতিমালা, ২০২৪ এই খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো শফিকুল ইসলাম বাসসকে এ কথা জানান।