শীর্ষ নিউজ

বরখাস্তকৃত পোস্ট মাস্টার বাকীর বিরুদ্ধে দুদকে মামলা


মালিক উজ জামান, যশোর : যশোরের প্রধান ডাকঘরের বরখাস্তকৃত পোস্ট মাস্টার আব্দুল বাকীর বিরুদ্ধে এবার মামলা করেছে দুদক। দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন। এছাড়া,বিভাগীয়ভাবে আরও ছয়টি মামলার প্রস্ততি নেওয়া হচ্ছে। যাদের স্বাক্ষর জাল করে তিনি এসব অপকর্ম করেছেন তারা মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, কারাগারে আটক থেকেও বিভিন্ন লোক দিয়ে পোস্ট অফিসের কয়েক কর্মকর্তাকে নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন বাকী। এ বিষয়ে থানায় জিডি করার প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে, দুদকের মামলার পর আটক বাকীকে শোন অ্যারেস্টের আবেদন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের পিপি সিরাজুল ইসলাম। যশোরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক কবির উদ্দীন প্রামানিক এ আদেশ দেন।
পোস্ট অফিস সূত্র জানায়, দু’টি তদন্ত কমিটির মধ্যে একটি কমিটির তদন্ত রিপোর্টে উঠে আসে বাকীর কান্ড। এ ঘটনায় ডাকবিভাগ থেকে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি যশোর পোস্ট অফিসে এসে এক বছরের হিসাব নিকাশ যাচাই করছে। ইতিমধ্যে সঞ্চয়পত্র, সাধারণ হিসাব, মেয়াদী হিসাব যাচাইা করে এক কোটি ৭৮ লাখ পাঁচ হাজার টাকার আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে। এখন মানি অর্ডার, স্ট্যাম্প বিক্রিসহ আরও কয়েকটি ছোট খাতের হিসাব নিকাশ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। খুব শিগগির এ কমিটি তাদের রিপোর্ট ডাক বিভাগে পাঠানো হবে।
এদিকে, আব্দুল বাকীর জালিয়াতি ডিপিএম মেহেরুন্নেছা ধরে ফেলায় ও ইন্সপেক্টর (শহর) পবিত্র বিশ্বাস মেহেরুন্নেছাকে সাহায্য করায় তারা দু’জনেই হুমকির মধ্যে রয়েছে। তাদের কাছে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মোবাইল ফোন আসছে। তাতে হুমকি ধামকিও দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, পোস্ট অফিসে গুঞ্জন উঠেছে, মাস খানিক আগে বাকী ইন্ডিয়ায় গিয়েছিলেন। ওই সময় বিপুল পরিমাণ সোনার গহনা ও টাকা যশোরের সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখার লকারে রাখা হয়। এছাড়া,তার এক স্বজন ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মকর্তা। যশোরের ব্র্যাক ব্যাংকেও তার মোটা অংকের অর্থ রাখা রয়েছে। বাকী ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন, যা ডাক বিভাগের তদন্তে উঠে এসেছে। অভিযোগ রয়েছে,ঢাকায় তার একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া, তার ব্যাংক কর্মকর্তা এক ভাইয়ের কাছেও মোটা অংকের টাকা রেখেছেন বাকী। দু’ মেয়ে এবং স্ত্রীর নামেও রয়েছে একাধিক জমি ও ফ্ল্যাট।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে ১৭ জন আমানতকারীর পাসবই সংগ্রহ করে ও অফিসের লেজার বই ব্যবহার করে আব্দুল বাকী এক কোটি ৭৮ লাখ ৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ইতিমধ্যে ১৪ লাখ টাকা তিনি ফেরতও দিয়েছেন। সর্বশেষ গত ২ ফেব্রুয়ারি শেখ মোহাম্মদ আলী নামের এক আমানতকারীর হিসেব বই দিয়ে জালিয়াতী করে ১৩ লাখ টাকা উঠাতে চেষ্টা করেন। যা সন্দেহ হয় ডিপিএম মেহেরুন্নেছার । এরপর তিনি ওই পাশবই ও লেজার বই নিয়ে আটকে রাখেন। পরে লেজার বই ফেরত দেন। কিন্তু সেখানে ফ্লুড দিয়ে মুছে ফেলেন বাকী। পরে তিনি সিডিউল বই চেক করে দেখতে পান ওই তারিখে কোনো টাকাই জমা হয়নি। জালিয়াতির বিষয়টি প্রমান পাওয়ায় বিষয়টি ডিপিএম মেহেরুন্নেছা উর্দ্বোতণ কর্তৃপক্ষকে জানালে গত ৭ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত পোস্টমাস্টার জেনারেল আমিনুর রহমান, সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল(নিরাপত্তা) যশোর অফিস পরিদর্শন করেন। পরে তাকে যশোর থেকে খুলনাতে বদলি করা হয়। তদন্তে উঠে আসে রেলরোডের নাসিমা আক্তার শিমু, খড়কির নিলুফার ইয়াসমিন, হাশিমপুরের আমিনুর রহমান, পূর্ববারান্দিপাড়ার সোহেল রানা, ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের হাবিব, আরজিন, সাবিনা, পোস্ট অফিসপাড়ার রোজি বেগম, শরীফা আক্তার, নলডাঙ্গার ললিতা, আসমা খাতুন, কাজীপাড়ার কমলা, আড়পাড়ার রেজাউল করিম, নড়াইল জেলার পশ্চিমপাড়ার আয়শা জেসমিন, শংকরপুরের রহিমা খাতুন, রুপালী ও নাসরিন পারভীনের পাশবই ব্যবহার করে সরকারের এককোটি ৭৮ লাখ টাকা আত্মাসাৎ করেছে বাকী। প্রমাণ পাওয়ায় এরপর কর্তৃপক্ষ তাকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি পুলিশে সোপর্দ করে। একই সাথে থানা ও দুদকে লিখিত অভিযোগ দেন বর্তমান পোস্ট মাস্টার গোলাম রহমান পাটয়ারী। এর প্রেক্ষিতে দুদক মামলা গ্রহণের জন্য প্রধান কার্যালয়ে আবেদন জানান। আবেদন মঞ্জুর হওয়ায় রোববার বাকীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
এ বিষয়ে দুদকের পিপি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডাক বিভাগের তদন্তে উঠে এসেছে বাকীর দূর্নীতির প্রাথমিক চিত্র। দুদকের মামলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আদালতে পিডাব্লু ইসু করা হয়েছে। আগামি ২৮ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে শুনানী রয়েছে।
এ বিষয়ে দক্ষিণাঞ্চল খুলনার অতিরিক্ত পোস্ট মাস্টার জেনারেল ও তদন্ত কমিটির সদস্য আমিনুর রহমান জানান, প্রথম দফায় তদন্তের পর দ্বিতীয় দফায় তদন্ত চলছে। খুব শিগগির রিপোর্ট ডাকবিভাগে পাঠানো হবে। আব্দুল বাকী যেসব কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করেছেন তারা ইতিমধ্যে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কয়েকজন নিরাপত্তা হুমকিতেও রয়েছেন। এমন ছয়জন বাকীর বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য ডাক বিভাগে অনুমতি চেয়েছেন। জিডির জন্যও অনুমতি চেয়েছেন একজন। দুইজনের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। এখন তারা মামলা করবেন বলে তিনি জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button