অর্থ ও বাণিজ্যশীর্ষ নিউজ

যশোর রুদ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় চূড়ান্ত বরখাস্তের পরও বেতন তুলছেন সেই প্রধান শিক্ষক


মালিক উজ জামান, যশোর : স্বাক্ষর জালসহ নানা দুর্নীতির দায়ে চূড়ান্তÍ বরখাস্ত হওয়া যশোর সদর উপজেলার রুদ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মৃনাল কান্তি সরকার নিয়মিত বেতন তুলছেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এতে করে লাখ লাখ টাকা গচ্চা যাচ্ছে সরকারের। শুধু তাই না, স্কুলে না এসেও বিভিন্ন কাজে হস্তক্ষেপসহ নানা ধরনের হুঙ্কার দিচ্ছেন।
এদিকে, বর্তমান এডহক কমিটি ওই মৃনাল কান্তিকে পুনরায় স্বপদে বহালের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। এ লক্ষ্যে একটি উপকমিটিও গঠন করেছে বলে শিক্ষকরা জানিয়েছেন। অথচ এডহক কমিটি কেবলমাত্র রুটির করতে পারবে। এর বাইরে এই কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার ক্ষমতা রাখে বলে শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এসব বিষয় নিয়ে স্কুলের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। তারা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্কুল সূত্র জানায়, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক প্রতিনিধির স্বাক্ষর জাল করে অবৈধভাবে দু’জন শিক্ষক নিয়োগ দেন বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক মৃনাল কান্তি সরকার। যা কৌশলে ধামাচাপাও দেয়া হয়। বিষয়টি জানতে পেরে অনুসন্ধানে নামে গ্রামের কাগজ। প্রমাণ পাওয়ায় ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম গ্রামের কাগজে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর নড়েচড়ে বসে ম্যানেজিং কমিটি। ধারাবাহিক প্রতিবেদন শুরু হয় গ্রামের কাগজে। বেরিয়ে আসে মৃনাল কান্তির থলের বিড়াল। স্কুল কর্তৃপক্ষ আদালতে এ বিষয়ে দু’টি মামলা করে। তদন্তে নামে পিবিআই। মৃনাল কান্তিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তখন তিনি আরেক প্রতারণার আশ্রয় নেন। দ্রুত স্কুলে যোগদানের জন্য তিনি দুদকের প্রধান কার্যালয়ের দু’টি ভুয়া চিঠি সংগ্রহ করে হাইকোর্টে রিট মামলা করে তার পক্ষে আদেশ এনে বিদ্যালয়ে যোগদানের চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয় তার।
সর্বশেষ, এসব নিয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ডের আপিল এন্ড আর্বিটেশন কমিটির সভায় দু’ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে এসব অভিযোগের সত্যতা উঠে আসে। এমনকি পিবিআইয়ের তদন্তেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। সর্বশেষ গত বছরের ২০ জুন যশোর বোর্ডের তৎকালীন বিদ্যালয় পরিদর্শক ডক্টর বিশ্বাস শাহিন আহম্মেদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে মৃনাল কান্তিকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে, চূড়ান্ত বরখাস্ত হওয়ার পর প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধ হওয়ার কথা। অথচ এতোদিনে বিষয়টি আমলে নেয়নি ম্যানেজিং কমিটি। এর পিছনে অনৈতিক লেনদেন থাকতে পারে বলে কারো কারো সন্দেহ। আর এই সুযোগে মাসের পর মাস বেতন উত্তোলন করছেন মৃনাল কান্তি।অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, তিনি নিয়মিত ৩৪ হাজার ৮২৭ টাকা করে প্রতি মাসে বেতন তুলছেন। বরখাস্ত হওয়ার পর তিনি প্রায় দুই লাখ টাকা তুলেছেন।স্কুলের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ২৮ নভেম্বর যশোর বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে চার সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এডহক কমিটি মৃনাল কান্তির বিষয়ে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তাকে পুনর্বহালের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে বর্তমান এডহক কমিটির সদস্য সচিব ও প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বজেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি সরকার বেতন তুলছেন এটা সঠিক। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদেশ এসেছে; কিন্তু সেই আদেশ বাস্তবায়ন না করার কারণে তিনি বেতন তুলছেন। বাস্তবায়ন কেন করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটি এ আদেশ বাস্তবায়ন করে থাকে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, বিষয়টি তিনি জানেন না। এমনটি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।
এসব বিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানায়, দুর্নীতিবাজ মৃনাল কান্তির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ফুঁসে উঠেছিলেন। স্কুলটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নেন তিনি। এ কারণে বাধ্য হয়ে তারা রাজপথে নামেন। এলাকাবাসী-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। প্রয়োজনে আবারো তারা রাজপথে নামবেন তারপরও দুর্নীতিবাজ মৃনাল কান্তিকে স্কুলে প্রবেশ করতে দেবেন না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button