অর্থ ও বাণিজ্যচট্টগ্রাম

১০০তম জাহাজ হ্যান্ডলিং এর মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছে মাতারবাড়ি জেটি

২০১৪ সনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের বিষয়ে Bay of Bengal Industrial Growth Belt (BIG-B) initiative এর ঘোষণার প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী সিদ্ধান্তে কক্সবাজার জেলায় মহেশখালী উপজেলায় মাতারবাড়িতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে মাতারবাড়িতে বাণিজ্যিক বন্দরসহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত বন্দরসীমায় তথা মাতারবাড়িতে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প কর্তৃক নির্মিত প্রথম জেটিতে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রথমবার বার্থিং করে পানামা পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ ‘‘ভেনাস ট্রায়াম্প’’। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নির্মিত হয় দ্বিতীয় জেটি যা গত ১৫ জুলাই ২০২১ তারিখে জাহাজ বার্থিং এর মাধ্যমে নিজের কার্যক্ষমতা প্রমাণ করে। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলা এই প্রত্যন্ত অঞ্চল মাতারবাড়ি বর্তমানে ‘‘দ্যা নেক্সট পাওয়ার এন্ড পোর্ট হাব’’ খ্যাত যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মানুষের জ্বালানী সংকট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ২০২০ সালে জাহাজ আগমনের মাধ্যমে যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে সেখানে ২৪ আগষ্ট ২০২২ তারিখে MV. HOSEI FORTUNE জাহাজটি বার্থিং এর মাধ্যমে ১০০তম জাহাজ হ্যান্ডলিং এর মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছে মাতারবাড়ি জেটি।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানী বাংলাদেশ লিঃ (সিপিজিসিবিএল) এর আন্তরিক প্রচেষ্টায় কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে ইতোমধ্যে ৯৯টি সমুদ্রগামী জাহাজ হ্যান্ডলিং কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে যা রাজস্ব আয়ের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। অদ্যাবধি প্রায় ১১৭০৯১ (এক লক্ষ সতেরো হাজার একানববই) টন মালামাল হ্যান্ডলিং-এর মাধ্যমে চবক এর কোষাগারে ইতোমধ্যে রাজস্ব আয় বাবদ আনুমানিক ২,০৮,০৬,২৩০.৯২ (দুই কোটি আট লক্ষ ছয় হাজার দুইশত ত্রিশ টাকা বিরানববই পয়সা) টাকা জমা হয়েছে যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রথম পর্যায়ের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে ২০২৫ সালে এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জাহাজ ভিড়বে এই জেটিতে। বর্তমানে সিপিজিসিবিএল কর্তৃক নির্মিত জেটিতে প্রবেশের জন্য চ্যানেলের প্রশস্থতা ২৫০ মিটার থেকে ৩৫০ মিটারে উন্নীত করা হয়েছে। এই চ্যানেল বা প্রবেশপথ দিয়েই বঙ্গোপসাগর থেকে জাহাজ বন্দর জেটিতে প্রবেশ করবে এবং আগামী বছরে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আনুমানিক DWT 80,000 Panamax Size-এর কয়লা পরিবহনকারী জাহাজ আগমনের কথা রয়েছে। এছাড়া, উক্ত অফশোর এলাকায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন কর্তৃক স্থাপিত এসপিএম প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে যার কমিশনিং নভেম্বর/ ২০২২ নাগাদ হবে মর্মে আশা করা যাচ্ছে।

চ্যানেলটি নির্মাণের সময়কাল থেকে অদ্যাবধি সিপিজিসিবিএল এর নির্মাণ সামগ্রী বহনকারী আগত বৈদেশিক জাহাজসমূহ হ্যান্ডলিং ও কার্গো হ্যান্ডলিং পরিচালনা কাজে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃক্ষ টাগ, পাইলটেজ ও স্টিটিভিডোরিং সেবা প্রদান করে আসছে। চবক পাইলটগণের দক্ষতা, প্রয়োজন অনুযায়ী টাগ সহায়তার কারণে আলোচ্য চ্যানেলে এখন পর্যমত্ম কোনরূপ নৌ দূর্ঘটনা সংগঠিত হয়নি। এমনকি চবক এর নিবিড় তত্ত্বাবধানের কারণে উক্ত চ্যানেলে আগত জাহাজসমূহে অদ্যাবধি কোন রকম চুরি, ডাকাতি বা অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটেনি এবং ISPS কার্যক্রমের কোনরূপ ব্যত্যয় হয়নি যা চবক তথা সমগ্র দেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দূরদর্শী দিকনির্দেশনায় ক্রমশঃ উন্নতির সোপানের দিকে পা বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ। সেদিন আর বেশি দূরে নেই যেদিন বাংলাদেশও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে উন্নত দেশগুলোর কাতারে আর সমগ্র বিশব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button