চট্টগ্রামশীর্ষ নিউজ

সাব হেডিং: চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে সিডিএ’র বিনা নোটিশে উচ্ছেদ অভিযান, মুহুর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় পুরাতন ব্রিজঘাট!

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর বামতীরে মইজ্জ্যারটেক টু পুরাতন ব্রিজঘাট এলাকায় প্রথম দিনের উচ্ছেদ অভিযানে পুনর্দখল করে গড়ে তোলা ২৫০ অবৈধ স্থাপনা, ঝুঁপড়ি ও পাকা দোকান গুঁড়িয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ (সিডিএ)। এতে বিনা নোটিশে মুহুর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় পুরাতন ব্রিজঘাট। তবে কেউ বাধা না দেওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত কাউকে কারাদণ্ড বা জরিমানা করার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি।

কয়েক বছর আগেও একই স্থানে উচ্ছেদ করা হলে প্রভাবশালীরা পরে তা দখল করে কাঁচা বাজার এবং দোকান নির্মাণ করেন। উচ্ছেদ করা স্থাপনা শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোন নিলামে তোলে বিক্রি করা হয়নি। তাতে দেখা যায়, স্ব স্ব ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারেরা দোকানের জিনিসপত্র ও মালামাল কুঁড়িয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

মঙ্গলবার (২৩ মে) অবৈধ এসব স্থাপনা চোখের নিমিষেই গুঁড়িয়ে দেয় সিডিএ। উচ্ছেদে অভিযানে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ (সিডিএ) এর স্পেশাল মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আফরোজ চৌধুরী।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, এতে সিডিএ খেলার মাঠ তথা কয়লার মাঠ সংলগ্ন পুরাতন ব্রিজঘাটের আড়াই শত দোকান ঘর উচ্ছেদ করেছে সিডিএ। এতে প্রায় ৫ শত লোকের কর্মসংস্থান বিলিন হয়ে গেছে। তবে গুঁড়িয়ে দেয়া ধ্বংসস্তুপে আবারো যেন দোকান তৈরি করতে না পারে সেজন্য কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ‘দোকান প্রতি দৈনিক ভাড়া ও নতুন করে ইজারার টোল গুনতে হতো তাদের। টাকা সংগ্রহ করতেন একাধিক ব্যক্তি। বাজারটি উপজেলা থেকে ইজারা দেওয়ায় পর থেকে আমাদের উপর এই বিপদ নেমে আসে। আমাদের পেটে আঘাত করেছে ইজারা দরপত্র।’

জানা যায়, দীর্ঘ ১৫ বছর পর ব্রিজঘাট কাঁচাবাজার ইজারা ও সিডিএ’র জমি খাস ঘোষণার পরেই উপজেলা প্রশাসন ও সিডিএ’র মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে অনেক চিঠি চালাচালি হলেও কোন সুরানা হয়নি। অনেকেই এর জের ধরে সিডিএ উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে বলে জানান। কিন্তু সিডিএ বলছেন এটি তাঁদের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এর আগেও একাধিকবার উচ্ছেদ করা হয়েছে।

সিডিএ আরও বলছেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) এর আওতাধীন এলাকা কর্ণফুলী নদীর বামতীর মইজ্জারটেক হতে ষ্টোর ইয়ার্ড ফর ফ্লোটিং ব্রীজ (ভাসমান সেতু) পর্যন্ত (পিসি রোড) সড়কের উভয় পার্শ্বে ভাসমান অবৈধ স্থাপনা/অবকাঠামো উচ্ছেদ করা হবে।

উচ্ছেদের বিষয়ে সিডিএ নির্মাণ বিভাগ-১ এর প্রকৌশলী কাজী কাদের নেওয়াজ বলেন,‘আজকে প্রায় ২৫০ শ’র উপরে দোকানঘর উচ্ছেদ করে ৬/৭ একরের মতো জমি উদ্ধার করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় শত কোটি টাকা মতো হবে। কালকেও এই অভিযান উচ্ছেদ চলবে।’

অভিযান প্রসঙ্গে স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আফরোজ চৌধুরী বলেন, ‘সিডিএ এর অধিগ্রহণকৃত জায়গায় অবৈধভাবে মার্কেট, দোকান ঘর, কাঁচাবাজার, কাপড়ের দোকান, কয়লার মাঠসহ বিভিন্ন রকমের স্থাপনা গড়ে তুলেছিলেন। তাই সিডিএ এর চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশে, আজ আমরা আইনানুগভাবে সেই অবৈধ স্থাপনা গুলো গুঁড়িয়ে দিয়েছি। কালকেও এ অভিযান চলবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা পুনরায় দখল করেছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। কিছুদিন আগে এসে তাদের সবাইকে সর্তক করা হয়েছে। কিন্তু কেউ তো তাদের স্থাপনা সরাইনি। তাই উচ্ছেদ করা হচ্ছে। রাস্তা সম্প্রসারণের যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়নে উদ্ধার হওয়া জমি যেন পুনর্দখল না হয় সেই বিষয়ে কঠোর অভিযান চালানো হবে।’

অভিযানে পরিচালনাকালে নিরাপত্তায় ছিলেন সিএমপির ৮০ পুলিশ সদস্য (১৫ জন নারীসহ) ও  কর্ণফুলী থানা পুলিশ এবং ট্রাফিক পুলিশ ফোর্স। এছাড়াও অভিযানের সময় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সিডিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button