চট্টগ্রামশীর্ষ নিউজ

কার দ্বন্ধের ফসল ‘আনোয়ারা উপজেলা আ. লীগের বিজ্ঞপ্তি’

চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা ছাত্রলীগ, আনোয়ারা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ এবং বটতলী কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে ‘আর্থিক লেনদেন ও ‘অপ্রচার চালানোর অভিযোগ তুলে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন আনোয়ারা উপজেলা আ. লীগ।

গত মঙ্গলবার (১৬ মে) বিকেলে উপজেলা আ.লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম এ মান্নান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ জসিম উদ্দীন চৌধুরীর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

এতে বলা হয়, সাম্প্রতিককালে আনোয়ারা উপজেলা ছাত্রলীগ, আনোয়ারা কলেজ ছাত্রলীগ,বটতলী কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি গঠন হবে বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। পদ পদবীর লোভ দেখিয়ে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আনোয়ারা উপজেলা ছাত্রলীগ গঠন নিয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ (এমপি) কোন নির্দেশ প্রদান করেননি। সংগঠনের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে মাননীয় ভূমিমন্ত্রীর আদেশক্রমে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামীলীগ মূল সংগঠন হিসেবে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে যে, কেউ কোন অনৈতিক লেনদেন ও অপপ্রচারে লিপ্ত হবেন না। এই বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী হিসেবে সবাইকে সতর্ক হওয়ার অনুরোধ করা যাচ্ছে ।’

এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরপরই দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তাহের তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেন, “একজন তাহের কে ঠেকাতে এত আয়োজন, এত মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন কল্প কাহিনীর কি প্রয়োজন? আমার নেতা আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী  জাবেদ (এম.পি) ভাইকে মুখে বলতে হবে না। একটু ইশারা করলে আমি তাহের পদত্যাগ করে আপনাদের আশা পূরণ করতাম। উনার যেকোন সিদ্ধান্ত আমার শিরোধার্য, তবে আমাদের দেহে একবিন্দু রক্ত থাকতেও প্রিয়নেতা জাবেদ ভাইয়ের সাজানো বাগান তছনছ করে জাবেদ ভাই ছাড়া অন্যকাউকে এই আনোয়ারার একক হর্তাকর্তা বা জাবেদ ভাইয়ের বিকল্প  হওয়ার  উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন  বাস্তবায়িত হতে দেবনা। যুগে যুগে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে শত্রুদের চাইতে খুব ঘনিষ্ট আপন মানুষগুলোই বেশি জড়িত ছিল। প্রিয়নেতা জাবেদ ভাইয়ের পাশে থাকা খন্দকার মোস্তাক আর মীর জাফরকে চিহ্নিত করা সময়ের দাবী। মিথ্যা পরাভূত হবে,সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী,সত্যের জয় হবে ইনশাআল্লাহ।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মীরা জানান, ‘আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চলছে। এ নিয়ে সৃষ্ট দলীয় কোন্দল যেমন রয়েছে, তেমনি ছাত্রলীগকেও একই শক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছেন। ফলে দুই সংগঠনে অনেক গ্রুপিং, অনেক বিবাদ। আনোয়ারায় সংগঠনের কার্যক্রমে অনেকটা হতাশা ও অভিমান নিয়ে দলীয় অনেক কার্যক্রম থেকে অনেক ত্যাগী নেতা নিজেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে রেখেছেন। এতে দলটিতে অন্তঃকোন্দল বাড়ছে। এতে দুই বলয়ে অন্তঃকোন্দল ও তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে দূরত্বও বাড়ছে।’

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগ কি কারণে ছাত্রলীগকে নিয়ে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন সেটা আসলে আমরা বলতে পারতেছিনা। আর ছাত্রলীগের বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি দিতে পারে না।’

আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বারবার দলের বঞ্চিতরা বঞ্চিতই থাকছেন। এর ফলে অনেক নেতাকর্মী মনঃক্ষুণ্ন হয়ে সংগঠনের কাজে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন, আবার অনেকে বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। এতে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্তঃকলহের আগুনে পুড়ছে।’

দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমার সাথে সায়েম ভাইয়ের সামান্য দূরত্ব হয়েছে। এটার জের ধরেই আনোয়ারা আ.লীগ এই বিবৃতি দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে আমি একা ছাত্রলীগের কমিটি দিতে পারব না। মন্ত্রী মহোদয়, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির অনুমতি ছাড়া আমি কমিটি দেওয়ার চিন্তাও করিনি। উদ্ভট কথা বলে আমাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে বক্তব্য থাকলে কেন্দ্রকে জানাতে পারতেন। আমি এখনো আমার মায়ের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে পারিনি।’

এ বিষয়ে জানতে আনোয়ারা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম এ মান্নান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ জসিম উদ্দীন চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button