বিশেষ খবর

৬১ জেলা পরিষদে ভোট ১৭ অক্টোবর যশোরের প্রার্থীরা লবিংয়ে ব্যস্ত


মালিক উজ জামান, যশোর : আগামী ১৭ অক্টোবর যশোরসহ দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। যশোরে আওয়ামীলীগ নেতা বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক সাইফুজ্জামান পিকুল, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম, মীর জহুরুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম খয়রাত হোসেন, আব্দুল খালেক, এ্যাড. মুকুল, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, কেশবপুরের আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মজিদ প্রার্থী হতে চান। এছাড়া গুঞ্জন রয়েছে কুইন্স হসপিটাল পরিচালক এস এম হুমায়ুন কবীর কবু কে নিয়েও। যশোর জেলা পরিষদে খসড়া ভোটার ১৩১৯ জন। আগামী ৪ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আওয়ামীলীগ প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। ১টি চেয়ারম্যান, ৮টি ওয়ার্ড সদস্য ও ৩টি সংরক্ষিত নারী প্রার্থীর জন্য মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করা যাবে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ১৫ সেপ্টেম্বর, বাছাই ১৮ ও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর ও ভোটগ্রহণ ১৭ অক্টোবর। গত ১৭ এপ্রিল দেশের ৬১ জেলা পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বিলুপ্ত ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। বিলুপ্ত করা জেলা পরিষদগুলোতে প্রশাসক নিয়োগের আগ পর্যন্ত প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পরিচালনার জন্য পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরই সাপেক্ষে যশোরে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে ইচ্ছুক অন্তত ১০ জন আওয়ামীলীগ নেতা। এর মধ্যে রয়েছেন বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসক সাইফুজ্জামান পিকুল। তিনি সর্বশেষ জেলা পরিষধ চেয়ারম্যান। এ তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন। আরো রয়েছেন জেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম খয়রাত হোসেন, মীর জহুরুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট মুকুল, কেশবপুরের আব্দুল মজিদ ও কুইন্স হসপিটাল পরিচালক এস এম হুমায়ুন কবীর কবু। প্রার্থীরা কেন্দ্রে লবিং করছেন। গোয়েন্দারা প্রার্থীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছেন মর্মে প্রার্থী ও তাদের অনুসারিরা মতামত দিয়েছেন। যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচনের নতুন সীমানা নির্ধারন করা হয়েছে। নতুন সীমানায় শার্শা ১নং ওয়াড। এছাড়া শার্শা ঝিকরগাছা চৌগাছা ১নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ড। এরপর যথাক্রমে ঝিকরগাছা, চৌগাছা, অভয়নগর, বাঘারপাড়া, সদর, মনিরামপুর ও কেশবপুর। অভয়নগর বাঘারপাড়া ও যশোর সদর নিয়ে ২নং ওয়ার্ড। ৩নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে মনিরামপুর ও কেশবপুর। পুরুষ ভোটার ১০০৭ জন ও নারী ভোটার ৩১২ জন। ১৭ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহন পর্ব চলবে। এর আগে আগ্রহী প্রার্থীরা রিটানিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কাচে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। যশোর জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা আনিছুর রহমান ভোটারের ও সংশোধনে নতুন সীমানা নির্ধারনের এই তথ্য দিয়েছেন।
এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ; জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী দেশের ৬১ জেলা পরিষদের মেয়াদ প্রথম সভার তারিখ থেকে পাঁচ বছর উত্তীর্ণ হওয়ায় পরিষদ গুলো বিলুপ্ত হয়েছে। এ অবস্থায় জেলা পরিষদ আইনের ৮২ ধারা অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসক নিয়োগের আগ পর্যন্ত আইনের ৭৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রত্যেক জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পরিচালনার জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা/ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। দেশের ৬১ জেলায় ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রথম জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি নির্বাচিতরা শপথ নেন। জানুয়ারি মাসে জেলা পরিষদ গুলোর ১ম বৈঠক হয়। এ কারণে পাঁচ বছরের মেয়াদ গত জানুয়ারিতে শেষ হয়েছে। এরপর গত ২৭ এপ্রিল ৬১ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পরিষদ দায়িত্ব নেওয়ার আগপর্যন্ত প্রশাসকেরা জেলা পরিষদের দায়িত্বে থাকবেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ২৭ এপ্রিল এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
জেলা পরিষদ স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন একটি স্তর। ২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নতুন জেলা পরিষদ আইন পাস করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা বাদে বাকি ৬১টি জেলা পরিষদে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ করে সরকার। দীর্ঘদিন অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দিয়ে জেলা পরিষদ পরিচালনা করা হয়। ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইন, ২০০০-এর অধীনে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচিত জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরকার বিদ্যমান আইনের বেশ কিছু ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। ৬ এপ্রিল জেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল ২০২২ সংসদে পাস হয়। আগে নতুন জেলা পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে প্রশাসক নিয়োগের বিধান থাকলেও চলমান কোনো পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রশাসক নিয়োগের বিধান ছিল না। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, জেলা পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে, পরবর্তী পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার উপযুক্ত ব্যক্তিকে বা প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে। তবে প্রশাসকের মেয়াদ ১৮০ দিনের বেশি হবে না। জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী, পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিন আগে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button