কালনা ব্রীজে চোখ যশোর-নড়াইলবাসীর
মালিক উজ জামান, যশোর : পদ্মা সেতুর শতভাগ সুফল পেতে কালনা ব্রীজে চোখ এখন যশোর-নড়াইল, সাতক্ষীরাবাসীর। এ জন্য তাদের আরো ৩০/৪০ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
পদ্মা সেতুর শতভাগ সুফল পেতে কালনা সেতুর দিকে তাকিয়ে যশোর, সাতক্ষীরা ও নড়াইলবাসী। উদ্বোধনের পর পদ্মা সেতু জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হলেও নড়াইলের কালনা সেতুর নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। ফলে যশোরবাসীকে পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে হলে কালনা ফেরি অথবা মাগুরা-ভাঙ্গা হয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আশা, আগামী মাসেই কালনা সেতুর শতভাগ কাজ শেষ সম্ভব হবে। সেপ্টেম্বরে সম্ভাব্য উদ্বোধনের দিন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ জেলা যশোর। বেনাপোল, যশোরসহ এই অঞ্চলের রাজধানীমুখী মানুষের মূল সড়ক যশোর-নড়াইল-কালনা হয়ে পদ্মা সেতু। তাই পদ্মা সেতুর সুফল শতভাগ ভোগ করতে নড়াইলের কালনা সেতুর নির্মাণ শেষ হতে হবে। পদ্মা সেতুর সঙ্গে যান চলাচলের জন্য নড়াইল ও গোপালগঞ্জ জেলার মধ্যবর্তী মধুমতী নদীর কালনা পয়েন্টে চলছে কালনা সেতু নির্মাণের কাজ। সেতুর পূর্বপাড়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা এবং পশ্চিমপাড়ে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা। পদ্মা সেতুর সঙ্গেই এটির উদ্বোধনের প্রস্তুতি থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা দুইমাস পিছিয়ে যায়।
কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান জানান, এ সেতুর সার্বিক কাজ হয়েছে ৯০ শতাংশ। চলতি জুলাইয়ের মধ্যেই সেতুর পুরো কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। সংযোগ সড়কের কাজও শেষের পথে। আগামী ৮/১০ দিনে সড়কের কাজও শেষ হয়ে যাবে। জুলাইয়ের শেষেই সড়কটি যান চলাচলের উপযোগী হয়ে যাবে। আর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে উদ্বোধনের সম্ভাব্য তারিখ রয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সওজ বিভাগের ক্রসবর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাইকার অর্থায়নে এ সেতু হচ্ছে। জাপানের টেককেন করপোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর ঠিকাদার। ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু চার লেনের হলেও দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু হবে কালনা। পদ্মা সেতুর পাইলক্যাপ পানির ওপর পর্যন্ত। কিন্তু এ সেতুর পাইলক্যাপ পানির নিচে মাটির ভেতরে। তাই নৌযান চলাচলে সমস্যা হবে না, পলি জমবে না এবং নদীর স্রোতও কম বাধাগ্রস্ত হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, নদীর পূর্বপাড়ের সংযোগ সড়কের কার্পেটিং এবং পশ্চিমপাড়ে পাথর-বালু ঢালাইয়ের কাজ প্রায় শেষ। সংযোগ সড়কের ১৩টি কালভার্টের মধ্যে ১২টি, আটটি আন্ডারপাসের কাজ শেষ হয়েছে। কাশিয়ানীপ্রান্তে চলছে ডিজিটাল টোলপ্লাজা নির্মাণ কাজ। সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মি: দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) এ স্প্যানটি তৈরি ভিয়েতনামে। তৈরি করেছে জাপানের নিপ্পন কোম্পানি। এটাই সেতুর সবচেয়ে বড় কাজ, যা বসানো হয়েছে। ওই স্প্যানটির উভয়পাশের অন্য স্প্যান গুলো পিসি গার্ডারের (কনক্রিট)। সওজ ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এ সেতু চালু হলে বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে যশোর হয়ে নড়াইল যাতায়াতকারী পরিবহন মাগুরা-ফরিদপুর হয়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া যাতায়াতের পরিবর্তে কালনা হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে। এতে বেনাপোল-ঢাকা ও যশোর-ঢাকার দূরত্ব ১১৩ কি:মি:, খুলনা-ঢাকার দূরত্ব ১২১ কি:মি: এবং নড়াইল-ঢাকার দূরত্ব ১৮১ কি:মি: কমবে। একইভাবে ঢাকার সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর নওয়াপাড়া ও মোংলা বন্দর, সাতক্ষীরার দূরত্বও কমে যাবে। যদিও কালনায় সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় এখন অনেক যানবাহন মাগুরা হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা দিয়ে পদ্মা সেতুতে যাতায়াত করছে।
সাতক্ষীরা, নড়াইল ও যশোরের পিকআপ কার চালকরা জানান, পদ্মা সেতু পার হয়ে ভাঙ্গা দিয়ে মাগুরা হয়ে যশোরে পৌঁছাতে সময় লাগছে সাড়ে চার ঘণ্টা। কালনা সেতু চালু থাকলে তিনি নড়াইল দিয়ে আসতেন। তাতে অন্তত পৌনে এক ঘণ্টা সময় বাঁচতো। পরিবহন বাসযাত্রীরা জানান, কালনা সেতু না হওয়ায় যশোর থেকে অধিকাংশ বাস মাগুরা দিয়ে ঘুরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট হয়ে অথবা ভাঙ্গা ঘুরে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাচ্ছে। তবে কালনা সেতু চালু হলে আর মাগুরা ঘুরে ঢাকায় যাওয়ার দরকার হবে না। এতে সময় বাঁচবে এবং ভোগান্তি কমবে। নড়াইল ও ঢাকায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকায় নিয়মিত ঢাকা-নড়াইল যাতায়াতকারীরা জানান, ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত নড়াইল টু ঢাকা আবার ঢাকা টু নড়াইল যাতায়াত করতে হয়। এরা পদ্মা সেতু দ্রুত পার হতে পারছে কিন্তু কালনা ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ফলে শতভাগ সুবিধা পাচ্ছি না। কালনা সেতু চালু হলে ভোগান্তি লাঘব হবে।