খেলা

শেখ কামাল জাতীয় মার্শাল আর্ট : দেশসেরা গোপালগঞ্জের নাসির

৫৯ জন প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল স্মৃতি জাতীয় মার্শাল আর্ট প্রতিযোগিতায় দেশসেরা হয়েছেন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার হাফেজ মো. আলীমুজ্জামান নাসির। নাসির গোপালগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের পক্ষে ৫৯ প্রতিযোগীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪টি স্বর্ণ, ৫টি রোপ্য ও একটি ব্রোঞ্জপদক পেয়েছেন।

হাফেজ মো. আলীমুজ্জামান নাসির গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার খায়েরহাট গ্রামের সাংবাদিক মো. পান্নু শিকদারের ছেলে। তার মা রেবেকা বেগম গৃহিনী।

আলীমুজ্জামান নাসির জানান, ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতেন একজন বড় যোদ্ধা হওয়ার। ২০১৪ সালে হেফজ শেষ করে ঢাকায় মাওলানা পড়তে যান। এ সময় মার্শাল আর্টে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছার কথা তার বড় ভাইকে জানান এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মার্শাল আর্ট ক্লাব খুঁজতে থাকেন। ২০১৭ সালের দিকে ঢাকায় মেজবাহ আর্ট একাডেমিতে ভর্তি হন। সেখানে এস এম মেজবাহ উদ্দীনের তত্ত্বাবধানে অনুশীলন শুরু করেন। নাসিরের ভালো প্রতিভা দেখে মেজবাহ উদ্দীন তাকে একটি ম্যাচে খেলার সুযোগ করে দেন। তবে নাসির সে ম্যাচটিতে হেরে যান। এরপর থেকে আর কোনো ম্যাচে তাকে হারতে হয়নি।

২০২১ সালের কিশোরগঞ্জের নেহাল পার্কে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু জাতীয় কুংফু প্রতিযোগিতায় দেশের ১৮টি জেলার ৬৫ জন প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে স্বর্ণপদক পান নাসির। এরপর গত মার্চে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় তাইচি কুংফু প্রতিযোগিতায় ১৮টি জেলার ২০০ প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণের মেডেল পান।

নাসির বলেন, ‘এ কৃতিত্বের পেছনে আমার বাবার অবদান অনেক। আমার বাবা সবসময় আমাকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমার বড় ভাইও আমাকে নানা ধরনের সহযোগিতা করেছেন। আর সর্বোপরি আমার শিক্ষক মেজবাহ স্যার নিজের ছেলের মতো আমাকে গড়ে তুলেছেন। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।’

তিনি আরও বলন, প্রতিটি মানুষের জন্য মার্শাল আর্ট শেখা জরুরি। এটি শরীরকে সুস্থ রাখা, মনোবল বাড়ানো, আত্মরক্ষা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

গোপালগঞ্জ স্পোটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম হিরা বলেন, ‘নাসির গোপালগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের পক্ষে শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল স্মৃতি জাতীয় মার্শাল আর্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন। নাসির গোপালগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব তথা গোপালগঞ্জ জেলাকে সবার সামনে তুলে ধরেছেন। গোপালগঞ্জবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তার এ সাফল্যে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। আমি তার ভবিষ্যৎ সাফল্য ও মঙ্গল কামনা করি। নাসিরের এ অর্জন জেলার মার্শাল আর্টে নবজাগরণ সৃষ্টি করবে।’

আওয়ামী লীগ নেতা শরাফত হোসেন লাভলু মৃধা বলেন, ‘কাশিয়ানী উপজেলার খায়েরহাট গ্রামের কৃতি সন্তান আলীমুজ্জামান নাসির যে কৃতিত্ব অর্জন করেছেন এ জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন। সে আমাদের কাশিয়ানীবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমি তার সাফল্য কামনা করছি। সে যেন আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে।’

কাশিয়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আলী খোকন বলেন, ‘আলীমুজ্জামান নাসির আমাদের খায়েরহাট গ্রাম তথা গোপালগঞ্জ জেলার মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমাদের সে অনেক বড় করেছে। এ জন্য আমি এবং আমার ইউনিয়নবাসী আনন্দিত ও গর্বিত। তাকে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমাদের এলাকায় একটি ক্লাব করার দাবি নাসিরের কাছে। এ জন্য যা যা লাগবে আমি এবং আমার উপজেলা প্রশাসন তাকে সহযোগিতা করব।’

গত ৫ আগস্ট থেকে চার দিনব্যাপী ৮ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকার পুরানা পল্টনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ জিমনেসিয়ামে বাংলাদেশ মার্শাল আর্ট ফেডারেশন শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল স্মৃতি জাতীয় মার্শাল আর্ট প্রতিযোগিতায় আয়োজন করে।

এতে গোপালগঞ্জ স্পোটিং ক্লাব, ঢাকা ক্রীড়া সংস্থা, নরসিংদী ক্রীড়া সংস্থা, বরিশাল ক্রীড়া সংস্থা, নোয়াখালী ক্রীড়া সংস্থা, গাজীপুর ক্রীড়া সংস্থা ও রংপুর ক্রীড়া সংস্থার ৬০ জন প্রতিযোগী অংশ নেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button