অর্থ ও বাণিজ্যবিশেষ খবর

ডলার–সংকটের সুরাহা হয়নি এখনো, ঠকছেন ছোট উদ্যোক্তারা

রপ্তানি আয় বেড়েছে, প্রবৃদ্ধি প্রবাসী আয়েও। তারপরও ডলার–সংকটের সুরাহা হয়নি। আর এই সংকটের মধ্যে ঠকছেন ছোট উদ্যোক্তারা।

ছোট রপ্তানিকারকেরা যখন পণ্য রপ্তানির পরে তার বিল আনেন, তখন কোনো কোনো ব্যাংক তা নগদায়নে প্রতি ডলারে ৯৫ টাকাও দিতে চাইছে না। অথচ ছোট আমদানিকারকদের আমদানিতে দিতে হচ্ছে ১০৭ টাকা।

অন্যদিকে বড় রপ্তানিকারকেরা দামাদামি করে ডলারে বেশি দাম ঠিকই নিয়ে যাচ্ছেন। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ডলারের আন্তব্যাংক দাম ৯৫ টাকা। ফলে ডলারের বাজারে কী হচ্ছে, এই প্রশ্ন বারবার উঠছে।

ব্যাংকগুলো এখন ডলার কেনাবেচায় এক টাকার বেশি মুনাফা করতে পারছে না। আবার ডলারের বাড়তি মুনাফা নিচ্ছে কোনো কোনো রপ্তানিকারক। ডলার–সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো আমদানি বিল দেওয়ার তারিখও পিছিয়ে দিচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে একসঙ্গে বড় দায় পরিশোধের চাপ তৈরির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে কাটছে না ডলারের সংকট। বাজারও স্বাভাবিক হচ্ছে না।

এমন পরিস্থিতিতে ডলারের দাম বেঁধে দেওয়া নিয়ে নতুন করে সভায় বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কাল বৃহস্পতিবার ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) সঙ্গে এ নিয়ে সভা হওয়ার কথা রয়েছে।

জানা যায়, বেসরকারি খাতের আল আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকে গতকাল এক রপ্তানিকারকের বিল নগদায়নে প্রতি ডলারে ৯২ টাকা ৮০ পয়সা দাম দেয়। আর আইএফআইসি ব্যাংক রপ্তানি বিল নগদায়নে দিয়েছে ৯৫ টাকা। প্রিমিয়ার ব্যাংক আমদানি দায় পরিশোধে প্রতি ডলারের জন্য ১০৭ টাকা পর্যন্ত নেয়। আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক নেয় ১০৩ টাকা। সব ব্যাংকের রপ্তানি ও আমদানি বিলে ডলারের দাম এর মধ্যেই।

ঋণপত্র নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ১০৭-১০৮ টাকা গুনতে হচ্ছে। মাঝখানে একবার ১০৪-১০৫ টাকায় নিষ্পত্তি করার সুযোগ হয়েছিল। এত দামে ডলার কিনে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ডলার বিক্রি করে ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক, রপ্তানিকারক সবাই ভালো মুনাফা করেছে। শুধু ক্ষতিতে পড়েছেন আমাদের মতো আমদানিকারকেরা।’

ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, সংকট কাটাতে অনেক ব্যাংক এখন আমদানি বিল পরিশোধের তারিখ পিছিয়ে দিচ্ছে। ফলে ডলারের চাহিদা আপাতত কমে এসেছে। এ জন্য রপ্তানি বিলে ডলারের বিপরীতে কম টাকা দেওয়া হচ্ছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনে কেনাবেচায় এক টাকায় পার্থক্য রাখা হচ্ছে।

এদিকে গতকাল নিউইয়র্কের সোনালী এক্সচেঞ্জ ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করেছে। আর স্মল ওয়ার্ল্ড, রিয়া, মানিগ্রামসহ অন্য কয়েকটি এক্সচেঞ্জ হাউস ১১৩ টাকা পর্যন্ত দামে প্রবাসী আয় কিনেছে। ফলে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে এর চেয়ে আরও বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।

ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা এখন আর ডলারের বাজার নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাইছেন না। কারণ, ডলারের বাজার অস্বাভাবিক মুনাফা করায় ছয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, সরিয়ে দিয়েছে এসব ব্যাংকের ট্রেজারি–প্রধানকে। নতুন করে ইস্টার্ণ ব্যাংককে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ফলে সব ব্যাংক কর্মকর্তারা আতঙ্কে ভুগছেন।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল রিজার্ভ থেকে সাত কোটি ডলার বিক্রি করেছে। গতকাল দিন শেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯০১ কোটি ডলারে। সংকট শুরু হলে গত মে মাস থেকে এক হাজার কোটি ডলারের (১০ বিলিয়ন) বেশি বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সময়ে ডলারের দাম বেড়ে ৮৬ টাকা থেকে ৯৫ টাকা হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button