শীর্ষ নিউজ

১৯ বছরেও বিচার হয়নি ছাত্রলীগ নেতা বাপ্পী হত্যার

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুর রহমান খান বাপ্পী হত্যা মামলা ১৯ বছরেও নিস্পত্তি হয়নি। সোমবার (২১ নভেম্বর) তার ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। মামলাটি আদালতে সাক্ষীর পর্যায়ে রয়েছে। হত্যাকারীদের বিচারের দাবির মধ্য দিয়ে তার মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুর রহমান খান বাপ্পী ২০০৩ সালের ২১ নভেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন। এসময় বাপ্পির অপর সঙ্গী আব্দুল মতিনও সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন। ঘটনার পরদিন নিহত বাপ্পির বাবা আতাউর রহমান খান (বর্তমানে টাঙ্গাইল-৩ আসনের সংসদ সদস্য) বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ইন্ধনে বাপ্পীকে খুন করা হয় বলে জানান তিনি।

নিহতের ছোট ভাই টাঙ্গাইল-৩ ঘাটাইলের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা বলেন, তার বড় ভাই বাপ্পী ২০০৩ সালের ২১ নভেম্বর রমাজান মাসের তারাবী নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। টাঙ্গাইলে আওয়ামীলীগের দুর্গ ভাঙ্গতে পূর্বপরিকল্পনা করে চারদলীয় জোট সরকারের সহায়তায় ২০০৩ সালের ২১ নভেম্বর শহরের কলেজ পাড়া এলাকায় দুর্বৃত্তরা গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে আমিনুর রহমান খান বাপ্পীকে।

রানা আরও বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাপ্পী হত্যা মামলার বিচার কাজ পুরোদমে শুরু হয়। তখন থেকেই ওই মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিরা মামলার বিচারকাজ বন্ধ করতে নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত শুরু করে। এ ক্ষেত্রে তারা অনেকটা সফল হন। এর অংশ হিসেবে বাপ্পী ও তার ভাইদের ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদকে কৌশলে হত্যা করে। যে হত্যা মামলায় বাপ্পী হত্যা মামলার ছয় গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষীকে আসামি করা হয়। যার ফলে বাপ্পী হত্যা মামলার বিচারকাজ আটকে রয়েছে।

টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইসতিয়াক আহমেদ রাজিব বলেন, নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের পর হরতাল-প্রতিবাদ কর্মসূচিতে পুরো টাঙ্গাইল শহর অচল হয়ে পড়ে। বাপ্পী হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে দিনের পর দিন চলতে থাকে প্রতিবাদ সভাসহ আন্দোলন। এরই অংশ হিসেবে একই বছর ৬ ডিসেম্বর রবিবার টাঙ্গাইল পৌর উদ্যানে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা যোগদিয়ে বাপ্পীকে আওয়ামী লীগের রত্ন উল্লেখ করে বক্তৃতা করেন এবং সেই সাথে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে হত্যাকান্ডের ন্যায় বিচারের প্রতিশ্রুতিও দেন।

মামলার সহকারি আইনজীবী মু. নাসির উদ্দিন বলেন, ২০০৩ সালের ২২ নভেম্বর মামলা রেকর্ড হওয়ার পর থেকেই আসামিরা ক্ষমতাশালী বলে মামলাটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার ও সময় দীর্ঘ করার নানা চেষ্টা চালাচ্ছে। এই মামলার মোট ২০ জন আসামির মধ্যে ১৭ জনের নামে ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন সিআইডি। তার র থেকেই ২৭ জন স্বাক্ষীর মধ্যে শেষ সাক্ষীর জেরা চলমান রয়েছে বলেও জানান এই হত্যা মামলার বাদী পক্ষের এই আইনজীবী।

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও (বাসাইল-সখীপুর) আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের সাংবাদিকদের বলেন, এক সময়কার টাঙ্গাইলের উদীয়মান আওয়ামী লীগ নেতা বাপ্পীকে যারা হত্যা করেছে তাদের প্রত্যেকের বিচার হওয়া জরুরি।

আজ ২১ নভেম্বর নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে টাঙ্গাইলের তরুণ ছাত্রলীগ নেতা শহীদ আমিনুর রহমান খান বাপ্পীর মৃত্যুবার্ষিকী। সকালে শহীদ আমিনুর রহমান খান বাপ্পীর স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ এবং মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন টাঙ্গাইল-৩ সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খান। এরপর পুস্পস্তবক অর্পণ করেন আমিনুর রহমান খান বাপ্পীর পরিবার। পরে শোক র‌্যালি, কবর জিয়ারত, জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল শেষে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button