খেলা

কাতারে স্টেডিয়ামসহ বিশ্বকাপ সংক্রান্ত কাজে কতজন অভিবাসী শ্রমিক নিহত হয়েছেন?

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ-২২ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অভিবাসী শ্রমিকদের শ্রমে এই বিশ্বকাপ আয়োজন সম্ভব হয়েছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, স্টেডিয়ামসহ বিশ্বকাপের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে অসংখ্য অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের অধিকার যেমন- যথাযথ বেতন প্রদান করা হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের ‘মনুষ্য মূল্য’ (হিউম্যান কষ্ট) কী এ নিয়ে একটি বিশেষ সংবাদ প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান। যাতে অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যুসহ বিভিন্ন প্রশ্নের ব্যাখা দেওয়া হয়েছে।

কাতারে অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা কত, তারা কোন দেশ থেকে এসেছেন?

এই প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, কাতারের মোট জনসংখ্যা ৩০ লাখ। এর মধ্যে শতকরা ৮৮ শতাংশই বিদেশি নাগরিক। দেশটিতে অভিবাসী শ্রমিকের আনুমানিক সংখ্যা ২০ লাখ। এটা কাতারের মোট কর্মশক্তির ৯৫ শতাংশ। গার্ডিয়ানের খবর অনুসারে, প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক কাতারের নির্মাণ কাজে জড়িত। বাকি ১০ লাখ গৃহকর্মী যার অধিকাংশই পুরুষ। এই শ্রমিকদের বড় অংশ ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ এশীয় দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এবং বাংলাদেশের নাগরিক।

বিশ্বকাপ আয়োজনে মাঠসহ বিভিন্ন স্থাপনা/অবকাঠামো তৈরি  করতে গিয়ে আসলে কতজন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন?

কাতার কর্তৃপক্ষ অফিশিয়ালি জানিয়েছে, সরাসরি বিশ্বকাপ সংক্রান্ত কাজ করতে গিয়ে মাত্র ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, বিশ্বকাপ সংশ্লিষ্ট নয় এমন ৩৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তবে অনেকের ধারণা, নিহত শ্রমিকের সংখ্যা এর থেকে অনেক বেশি। গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা কঠিন। কারণ, তথ্য সহজলভ্য নয়। ফিফা এবং কাতারি সংস্থাগুলো বিশ্বকাপ সংক্রান্ত নির্মাণকাজ নিয়ে নিজেদের দূরে রেখেছে। তবে এটা ঠিক যে, কর্তৃপক্ষের আনুমানিক ১২ লাখ দর্শকের জন্য প্রস্তুত হওয়ার তাড়া ছিল।

গার্ডিয়ান বলছে, ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সার্বিকভাবে ১৫ হাজার ২১ জন অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ২০২১ সালে গার্ডিয়ানের এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, টুর্নামেন্টের স্বত্ব পাওয়ার পর ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার সাড়ে ৬ হাজারের অধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তবে এই শ্রমিকরা ঠিক কোন পেশায় ছিল এবং কোথায় কাজ করছিল সেটার তালিকা করা হয়নি। কাতার সরকার বলেছে, বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম নির্মাণে ৩০ হাজার বিদেশি শ্রমিক নিযুক্ত ছিল। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা (আইএলও) এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ২০২০ সালে ৫০ জন বিশ্বকাপ সংক্রান্ত কাজ করতে গিয়ে মারা গেছেন, গুরুতর আহত হন ৫০০ এবং সামান্য থেকে মধ্যম ধরনের আহত হন ৩৭ হাজার শ্রমিক।

শ্রমিকরা কীভাবে মারা গেছে?

চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাস কাতারে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অধিক তাপমাত্রা অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর প্রধান কারণ, গ্রীষ্মকালীন তীব্র দাবদাহকে দায়ী করে কাতার। জাতিসংঘের শ্রমবিষয়ক আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহযোগিতায় গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে- দেশটিতে অভিবাসী শ্রমিকরা বাইরে কাজের সময় বছরের কমপক্ষে চার মাস তীব্র দাবদাহের মুখোমুখি হন বলে উঠে আসে। ২০১৪ সালে কাতার সরকারের নিজস্ব আইনজীবীরা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যে অভিবাসী শ্রমিকরা মারা যান, তাদেরকে নিয়ে গবেষণা এবং অপ্রত্যাশিত ও হঠাৎ মারা যাওয়া শ্রমিকদের ময়নাতদন্তের সুপারিশ করে দেশের বিদ্যমান আইনে সংশোধনের প্রস্তাব দেন। যদিও সরকার এখনও আইনজীবীদের এই পরামর্শ বাস্তবায়ন করেনি।

শ্রমিকদের নিয়ে কাতার কী পদক্ষে নিয়েছে?

বিগত পাঁচ বছরে কাতার শ্রমিক আইন সংশোধন করেছে। তবে সমালোচকেরা বলেছেন, শ্রমিকদের রক্ষায় এটা যথেষ্ট নয়। অ্যামনেন্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, কাতারের কর্তৃপক্ষ অনেক শ্রমিকের বেতন প্রদানে বিলম্ব করে, অনেক শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করা হয় না, তাছাড়া রয়েছে অনিরাপদ কর্মপরিবেশ। কাতার অনেক শ্রমিকের মৃত্যুর তদন্ত না করে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ হিসেবে গণ্য করেছে।

ফুটবল কর্তৃপক্ষ  কী বলছে?

ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফানতিনো ফুটবল দলগুলোকে ফুটবল খেলায় মনোনিবেশ (ফোকাস) করার আহ্বান জানান। শ্রমিক সংক্রান্ত কাফালা সংস্কারে ফিফা কর্তৃপক্ষ নিজেদের ক্রেডিট দাবি করে। কাতারের সমালোচনা করাকে ‘পশ্চিমাদের ভণ্ডামি’ বলে মন্তব্য করেন ফিফা সভাপতি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button