চট্টগ্রামশীর্ষ নিউজ

চবির সমুদ্রবিজ্ঞানের শিক্ষক নিয়োগ ৬ মাসের জন্য স্থগিত

 

নিয়ম না মেনে শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ছয় মাসের জন্য নিয়োগপ্রক্রিয়া স্থগিত করতে গত রোববার ওই বিভাগের দুই শিক্ষকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেওয়া হয়। আবেদনকারী দুই শিক্ষক হলেন মোহাম্মদ অহিদুল আলম ও এনামুল হক।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুই শিক্ষকের আইনজীবী পলাশ চন্দ্র রায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের সুপারিশ না নিয়েই প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের জন্য ডেকেছে কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৫ ডিসেম্বর কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে মোহাম্মদ অহিদুল আলম ও এনামুল হক রিট করেন। এ সিদ্ধান্ত প্রশ্নে রুল দিয়ে হাইকোর্ট নিয়োগ বোর্ডের কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের দুজন শিক্ষক তাঁকে হাইকোর্টের রিটের কাগজ দিয়েছেন। তবে এটি কোনো অফিশিয়াল নথি না। তাই স্থগিত করা হবে কি না, এ বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না তাঁরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ হয় তিনটি ধাপে। প্রথম ধাপে প্রার্থীদের আবেদন যাচাই–বাছাই করা হয়। এর জন্য প্রতিটি বিভাগে একটি পরিকল্পনা কমিটি থাকে। এ কমিটি প্রার্থীর যোগ্যতা বাছাই করে নিয়োগ বোর্ডে পাঠায়। এরপর নিয়োগ বোর্ড  প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়। সাক্ষাৎকারে যাঁরা যোগ্য বলে বিবেচিত হন, তাঁদের তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে পাঠায় বোর্ড। পরে সিন্ডিকেট নিয়োগের অনুমোদন দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত বছরের ৩১ অক্টোবর সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগে স্থায়ী ভিত্তিতে প্রভাষকের ৬টি শূন্য পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি দেয় কর্তৃপক্ষ। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা ন্যূনতম সিজিপিএ–৩.৬ পাওয়া ব্যক্তিরা আবেদনের যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এ বিজ্ঞাপনের পরিপ্রেক্ষিতে মোট ৩৭ জন এতে আবেদন করেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন, এমন ব্যক্তির সংখ্যা ছিল মাত্র তিন।

এ কারণে শিক্ষক নিয়োগ প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষ্যে নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার সুপারিশ করে বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি। চলতি বছরের ১৪ জুন বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসানকে এক চিঠি দিয়ে পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার বিষয়টি জানান। এরপর ১৬ নভেম্বর এস এম মনিরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে প্ল্যানিং কমিটির সিদ্ধান্তে ‘কতিপয় অস্পষ্টতা’ রয়েছে জানানো হয়। তবে কোথায় স্পষ্ট নয় বা কোন জায়গায় ভুল, এ বিষয়ে কোনো কিছু ওই চিঠিতে বলা হয়নি।

জানতে চাইলে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও প্ল্যানিং কমিটির সদস্য মোহাম্মদ অহিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ না করলেও ২৪ জনকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়েছে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তাঁদের ডাকা হয়েছে, বাকিদের কেন ডাকা হয়নি, এ বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না।

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান বলেন, মেরিন সায়েন্স বিভাগ থেকে পাস করা প্রার্থীরা অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন কি না, এ বিষয়ে স্পষ্ট জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা জানাননি। বর্তমানে যাঁরা শিক্ষক রয়েছেন, তাঁরা নিজেরাও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন না।

তবে নিয়ম মেনেই নিয়োগ পক্রিয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে তাঁরা যে চিঠি দিয়েছেন এতে স্পষ্ট কারণ উল্লেখ না করলেও মৌখিকভাবে প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। মেরিন সায়েন্স বিভাগ থেকে পাস করা প্রার্থীদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে কি–না এ বিষয়ে স্পষ্ট জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা জানাননি। বর্তমানে যারা শিক্ষক রয়েছেন তাঁরা নিজেরাও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button