চট্টগ্রামশীর্ষ নিউজ

বোনের সাথে স্কুলে গিয়ে বাড়ি ফেরা হলো না ফাবিহার

বিজয় দিবস উপলক্ষে স্কুলে স্কাউটের প্রস্তুতি অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় ছোট বোন ফাবিহাকে নিয়ে যান ফাতেহা। তবে ফেরার সময় ফাতেহার দেরি হয়ে যাওয়ায় একটি বাসে তুলে দেন বোনকে। বাসে করে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছালেও রাস্তা পার হতে গেলে ঘাতক প্রাইভেটকার ধাক্কা মারে ফাবিহাকে। প্রাইভেটকারের ধাক্কায় ১৫ থেকে ২০ হাত দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ে ফাবিহার দেহ। একটু আগেই যে মেয়েটির চোখে-মুখে ছিলো সোনালি স্বপ্ন মুহূর্তেই নিভে যায় জীবনপ্রদীপ।

বলছিলাম বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের খৈয়াছরা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়তাকিয়া পোলমোগরা সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লাইনে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পরপারে পাড়ি জমানো ফায়জাতুন নুর ফাবিহা (৯) নামে এক স্কুলছাত্রীর কথা।

নিহত ফাবিহা উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের শেখ আলী পন্ডিত বাড়ির নুরুল করিম দুলালের মেয়ে। সে খৈয়াছরা ইউয়িনয়ের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম পোলমোগরা এলাকার নানার বাড়ি পশ্চিম পোলমোগরা মকবুল আলী ভূঁইয়া বাড়ি থেকে পড়ালেখা করতো। ফাবিহা পশ্চিম পোলমোগরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী।

প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ জিয়া বলেন, বুধবার দুপুরে আমি চট্টগ্রাম শহর থেকে সিডিএম বাসে করে আসছিলাম। প্রাইভেটকারটি আমাদের সামনে ছিলো। মেয়েটি রাস্তার পূর্বপাশ থেকে পশ্চিম পাশে পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির প্রাইভেটকারের সাথে ধাক্কা খেয়ে ১৫ থেকে ২০ হাত দূরে গিয়ে পড়ে মাথায় আঘাত পায়। আমরা কয়েক জন বাস থেকে নেমে তাকে হাসপাতালে নিতে চাইলে দেখি সে মারা গেছে। পরে স্থানীয় লোকজনসহ তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যাই।

ফাবিহার বড় বোন ফাতেহা বলেন, আমি মিরসরাই পৌরসদরের মারুফ মডেল প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করি। আজ স্কুলে যাওয়ার পথে আমি ফাবিহাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমার আসতে দেরি হবে বলে বোনকে একটি সেইফলাইনে তুলে দিয়েছিলাম। পরে খবর পাই রাস্তা পার হওয়ার সময় আমার ছোট বোন প্রাইভেটকারের ধাক্কায় মারা গেছে।

পোলমোগরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল গনি বলেন, আজ ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আমরা সাড়ে ১২ টায় স্কুল ছুটি দিয়ে দেই। পরে শুনি ফাবিয়া দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। তার বড় বোনের সাথে স্কাউট দেখতে মিরসরাই গিয়েছে সেখান থেকে আসার সময় রাস্তা পার হতে গাড়ির ধাক্কায় নিহত হয় সে। ফাবিহা খুব ভালো ছাত্রী ছিল। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।

এদিকে সন্তান হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিহত শিক্ষার্থীর মা-বোন। এ ঘটনায় ঘাতক প্রাইভেটকারের চালককে ধরে আইনের আওতায় আনার দতাবি জানিয়েছেন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।

কুমিরা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ মো. শাহাদাত বলেন, প্রাইভেটকারের ধাক্কায় স্কুলছাত্রী নিহতের খবর পেয়েছি। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।

প্রসঙ্গত, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের মিরসরাই অংশে একের পর এক ঘটে যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। এতে প্রতিনিয়ত ঝরছে তাজা প্রাণ। সর্বশেষ গত ২৬ নভেম্বর দাঁড়িয়ে থাকা পিকআপের পিছনে দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় ৩ জন নিহত এবং ২ জন গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এর আগে সেপ্টেম্বরেও কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় মর্মান্তিক মৃত্যুর শিকার হোন ৪ জন। এছাড়া বিভিন্ন সময় ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button