বিশেষ খবরবিশ্ব

বিবিসির ডকুমেন্টারি ব্লক করা নিয়ে ভারতকে যে বার্তা দিল আমেরিকা

২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় ভারতের নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকা নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টারি ব্লক করা নিয়ে এবার মুখ খুল আমেরিকা। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে নয়াদিল্লিকে বার্তা দিল ওয়াশিংটন।

মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিক সম্মেলনে মোদীকে নিয়ে বিবিসির তৈরি ডকুমেন্টারি ভারতে নিষিদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, “আমরা বিশ্বে মুক্ত গণমাধ্যমকে সমর্থন করি। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মাচরণের স্বাধীনতা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে। এই নীতির গুরুত্ব তুলে ধরি আমরা। আমরা বিশ্বজুড়ে এই নীতি কার্যকরের ওপর জোর দিয়েছি। ভারতেও তুলে ধরেছি এই একই নীতি।”

উল্লেখ্য, বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই গুজরাট দাঙ্গার সময় নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে তৈরি বিবিসি তথ্যচিত্র নিয়ে বিতর্ক চলছে। একদিকে যেখানে জওহর লাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) এই ডকুমেন্টারি দেখানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। সেখানে হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হওয়ার পর দায়ের হয় মামলা। তিরুবনন্তপুরমেও এই ডকুমেন্টারি ঘিরে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেঁধেছিল বিজেপি কর্মী-সমর্খথকদের। এই আবহে এবার ডকুমেন্টারি বিতর্ক দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আমেরিকাতে পৌঁছেছে।

এর আগেও এই ডকুমেন্টারি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন নেড প্রাইস। তবে সেই সময় এই ইস্যুটি পুরোপুরি এড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, তথ্যচিত্রের বিষয়বস্তু নিয়ে অবগত নন। নেড প্রাইস বলেন, “আমি এই ধরনের কোনও তথ্যচিত্র সম্বন্ধে অবগত নই।”

এর সঙ্গে নেড প্রাইস যুক্ত করেন, “আমি বিস্তৃতভাবে যা বলতে পারি, তা হল এমন অনেকগুলো বিষয় রয়েছে যা আমাদের সঙ্গে ভারতের বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বকে রক্ষা করে। আমাদের দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের জনগণের মধ্যেও গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এরই সঙ্গে আমরা দুই দেশ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ভাগ করে নিই। এই মূল্যবোধগুলোই আমেরিকান গণতন্ত্র এবং ভারতীয় গণতন্ত্রকে এক সূত্রে গাঁথে।”

পাশাপাশি নেড প্রাইস উপমহাদেশে আঞ্চলিক শান্তি বজায় থাকার বিয়ে আশা ব্যক্ত করেন। তবে আজ কিছুটা সুর বদল করলেন নেড প্রাইস।

উল্লেখ্য, এর আগে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বিবিসির এই তথ্যচিত্র নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়েছিল। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বিবিসির বিতর্কিত তথ্যচিত্র নিয়ে বলেছিলেন, “এই তথ্যচিত্রটির পিছনে নির্দিষ্ট অ্যাজেন্ডা রয়েছে।”

প্রসঙ্গত, ‘ইন্ডিয়া:দ্য মোদী কোয়েশ্চন’-এর দুই পর্বে ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় মোদীর ‘ভূমিকা’ তুলে ধরা হয়েছে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও জানিয়েছেন, এই তথ্যচিত্রের মোদীর চরিত্রায়ণের সঙ্গে তিনি একমত নন। অভিযোগ, এই তথ্যচিত্রটিতে প্রধানমন্ত্রী তথা গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘ভুল চরিত্রায়ণ’ হয়েছে। এমতাবস্থায় ভারতের কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিবের পক্ষ থেকে ইউটিউব ও টুইটারে সেই তথ্যচিত্র সংক্রান্ত যাবতীয় ভিডিও সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই তথ্যচিত্রের লিংক সম্বলিত ৫০টিরও বেশি টুইট ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সূত্র: এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button