অর্থ ও বাণিজ্যবিশেষ খবর

একাধিক স্বর্ণের বার আনতে পারবেন না প্রবাসীরা

দেশের প্রচলিত ব্যাগেজ রুলসে সংশোধনী আনা হচ্ছে। নতুন আইনের আওতায় বিদেশফেরত যাত্রীরা একটির বেশি স্বর্ণের বার (১৫০ গ্রাম) দেশে আনতে পারবেন না। আনলে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হবে। মূলত বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি উৎসাহিত করতে এবং রেমিট্যান্সপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে আগামী বাজেটে ব্যাগেজ রুলসে এই সংশোধন আনা হচ্ছে। এ ছাড়া আয়কর ফাঁকি বন্ধে কম্পানির মতো ফার্মের রিটার্ন জমা দেওয়াও বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

বর্তমানে ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় বিনা শুল্কে ১০০ গ্রাম (সাড়ে আট ভরি) ওজনের স্বর্ণালংকার আনতে পারেন। তবে অলংকার আনা যায় ১২টি। আর ভরিপ্রতি দুই হাজার টাকা শুল্ক দিয়ে ২৩৪ গ্রাম (২০ ভরি) ওজনের স্বর্ণের বার আনতে পারেন।

সূত্রে জানা যায়, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ২০২২ সালে প্রায় ৫৪ টন (প্রায় ৪৬ লাখ ভরি) স্বর্ণ বাংলাদেশে আনা হয়েছে, ২০২১ সালের তুলনায় যা ৫৩ শতাংশ বেশি। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। ২০২০ সালে এসেছে সাড়ে পাঁচ টন স্বর্ণ।

গত বছর একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাগেজ রুলসের আওতায় বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনতে প্রবাসে কর্মরত একটি সংঘবদ্ধ চক্র বা সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। দেশে ফিরে আসার সময় প্রবাসী শ্রমিকরা ক্যারিয়ার গ্রুপ হিসেবে সিন্ডিকেটের কাছ থেকে নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে সোনা বহন করেন। অথবা সিন্ডিকেট প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার তুলনামূলক বেশি দামে কিনে নিয়ে ওই দেশেই স্বর্ণের দেনা পরিশোধ করে এবং বাড়তি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণ নিয়ে দেশে ফিরতে উৎসাহিত করছে। এতে আরো বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রায় রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে স্বর্ণ আনলে প্রবাসীরা কয়েকভাবে লাভবান হচ্ছেন। প্রথমত, তাঁরা কম দামে স্বর্ণ এনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে ব্যাংকের চেয়ে বেশি দাম পাচ্ছেন। তৃতীয়ত, রেমিট্যান্সের অর্থ পেতে প্রবাসীকে কোনো খরচ করতে হচ্ছে না।

অন্যদিকে স্বর্ণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করা হয়ে থাকে। উভয় ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) নেতারা বলছেন, এখন ডলারসংকট চলছে। দেখা যাচ্ছে, যাঁরাই বিদেশ থেকে আসছেন সবাই স্বর্ণের বার নিয়ে আসছেন; কিন্তু রেমিট্যান্স আসছে না। তা ছাড়া সরকারও বৈধ পথে স্বর্ণের বার আমদানিকে উৎসাহিত করতে ডিলার লাইসেন্স দিয়েছে। যদিও সেটি আমদানিবান্ধব নয়। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্তে প্রবাসীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।

সম্প্রতি দেশে সোনার প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ ও ব্যাগেজ রুলসের অপব্যবহার নিয়ে সমীক্ষা পরিচালনার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। বাজুসের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ব্যাগেজ রুলসের আওতায় পরিবারের মানুষের জন্য ১০০ গ্রাম সোনা আনা হয়, সেটা ঠিক আছে। বিদেশ থেকে স্বর্ণ কেনার সময় যে ক্রয় রসিদ দেওয়া হয়, সোনা পাচারকারীরা বিভিন্ন যাত্রীর হাতে সেই ক্রয় রসিদ ও স্বর্ণ দিয়ে দেয়। পরে বিমানবন্দরে তাদের লোকজন রসিদসহ স্বর্ণ নিয়ে যাত্রীদের কিছু টাকা দিয়ে দেয়। আবার একই রকম ক্রয় রসিদ দেশেও তো তৈরি করতে পারে অসাধু লোকজন। তাই আমরা ব্যাগেজ রুলস বন্ধ করার দাবি জানাই।’

আনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে সোনার চাহিদা আছে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মেট্রিক টন। বাকি স্বর্ণ পাচার করা হচ্ছে। একে কেন্দ্র করে মানি লন্ডারিং হচ্ছে। রেমিট্যান্স কমছে। তবে যাঁরা ১০০ গ্রাম স্বর্ণ আনে, সেগুলোও যাতে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করা হয়।

এদিকে আগামী বাজেটে ট্রাস্টের আয়ের বিপরীতে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বিভিন্ন কম্পানি কর ফাঁকির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন নামে ট্রাস্ট গঠন করে নিজস্ব আয় গোপন করে ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন করে। ফলে ট্রাস্ট রিটার্ন দাখিল না করে ট্রাস্ট এবং ট্রাস্ট জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কর ফাঁকি দিচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button