আঞ্চলিকচট্টগ্রামশীর্ষ নিউজ

রাঙ্গুনিয়ায় টানা প্রবল বর্ষণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

 

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:  চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কয়েকদিনে টানা প্রবল বর্ষণে রাজানগর, দক্ষিণ রাজানগর, ইসলামপুর, পারুয়া, হোসনাবাদ, চন্দ্রঘোনা, মরিয়মনগর, শিলক, কোদালা, পোমরা, সরফভাটা, বেতাগী, পদুয়া ও পৌরসভাসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক পাহাড় ধসের ঘটনাসহ গুমাইবিলের ফসল, সড়কে গাছ উপড়ে পড়ে হতাহত হয়েছে এবং জলাবদ্ধতার কারণে পুকুর ও মৎস্য প্রকল্পের কোটি টাকার মাছ ভেসে গিয়ে ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কোথাও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
রোববার দিনগত রাত ১টার দিকে কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়ার সেলিমা কাদের কলেজ গেট এলাকায় বিশালাকৃতির একটি গাছ সড়কে উপড়ে পড়ে। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসলে গাছটি সরিয়ে নিয়ে পুনরায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম হয়। চারদিনের ব্যাবধানে কাপ্তাই সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে এটিসহ চারটি বিশালাকৃতির গাছ উপড়ে পড়ে এযাবৎ দুইটি সিএনজি চালিত অটো রিক্সা ও কয়েক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সড়কের ঈমাম গাজ্জালী কলেজ গেট, তাপবিদ্যুৎ, কাটাখালী এবং সর্বশেষ সেলিমা কাদের কলেজ গেট এলাকায় গাছ উপড়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়দের মধ্যে কয়েকজন জানান, সড়কের আশেপাশে মাটি খুরাখুরি করায় পরে বৃষ্টিতে গাছের গোড়া থেকে মাটি সরে যাওয়ার কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন। সড়কের পাশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যে সমস্ত গাছ রয়েছে সেগুলো দ্রুত সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। এই বৃষ্টিতে আরো দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। বিষয়টি উদ্বেগজনক তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রশাসনকে বিষয়ে নজর দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
এদিকে রোববার দিনগত গভীর রাতে উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নে পাহাড় ধসে দুটি স্পটের দশটি বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও দুমড়েমুচড়ে গেছে ঘরগুলো। বাসিন্দারা কোনরকম প্রাণ নিয়ে বেরুতে পারলেও অধিকাংশ ঘরের মালামাল পাহাড় ধসে চাপা পড়েছে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্তরা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউল গনি ওসমানী বলেন, আজ পারুয়া ইউনিয়নে পাহাড় ধসের পরা ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি পরিবারের মাঝে ২৫ কেজি চাউল ও ১০টি কম্বল বিতরণ করেছি। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলের বসবাসরত অন্তত ১০ হাজার বাসিন্দা পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলার সহকারী ভূমি ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সচেতনতা বাড়াতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বসবাসরত সকলকে মাইকিং করে নিরাপদে সড়ে যাওয়া জন্য বলা হয়েছে। দুর্গত মানুষের জরুরী আশ্রয় নিতে নিকটস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সাইক্লোন সেন্টার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বসবাসরত জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে তারা যদি নিরাপদ স্থানে আসতে না চাইলে তাদের বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে জোর করে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, টানা প্রবল বর্ষণে শস্যভাণ্ডার খ্যাত গুমাইবিলের তিন হাজার ৫০০ হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরুল খায়েস বলেন, চলতি মৌসুমে গুমাইবিলে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে সত্তর শতাংশ ৫১ জাতের আমন রোপণ হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে ফসলে কোন ক্ষতি হবে না। তবে অন্যান্য জাতের আমন ধান এক সপ্তাহ পানিতে ডুবে থাকলে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃষকের পাশে উপজেলা কৃষি অফিস সহযোগিতা করবেন বলে তিনি জানান।
এছাড়াও টানা বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক পুকুর ও মৎস্য প্রকল্পের কোটি টাকার মাছ ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button