চট্টগ্রামবিশেষ খবর

দইজ্জ্যার তলে গাড়ি চলে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

জে. জাহেদ, সিনিয়র প্রতিবেদক:
আপনাদের কাছে একটা ছোট্ট উপহার নিয়ে এসেছি। সেটি হলো ‘দইজ্জার তলে গাড়ি চলে’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল এটি। এ টানেল হওয়ায় এখন কক্সবাজারের সাথে দ্রুত যোগাযোগ হবে। বিদেশের সাথে যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (২৮ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে কর্ণফুলীর কেইপিজেড মাঠে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন এ দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে। এর মধ্যে ১৫ আগষ্ট আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমি আর শেখ রেহেনা বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে গিয়েছিলাম। আমরা এখন জাতির জনকের সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।’
‘আমি আপনাদের জন্য আরও কিছু উপহার নিয়ে এসেছি। চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স, জেলা পরিষদ টাওয়ার, রাঙ্গুনিয়া ও আনোয়ারা জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, পটিয়ায় শেখ কামাল অডিটোরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল, রাউজানে শেখ কামাল কমপ্লেক্স, আগ্রাবাদে সিজিএস কলোনিতে ৯টি বহুতল আবাসিক ভবন, বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, শিকলবাহা খালের ওপর পিসি গার্ডার ব্রিজ, ডিসি পার্ক, হাজার বছরের নৌকা জাদুঘর, ১৯১টি ইউনিয়নে খেলার মাঠ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিস ও পর্যটক বাস, রিভার ক্রুজ ও ফুল ডে ট্যুর সম্বলিত পর্যটন সেবা, বার্ডস পার্ক ও চিড়িয়াখানার আধুনিকীকরণ প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করবেন। এসব উপহার চট্টগ্রামবাসীর জন্য।’
সরকার প্রধান আরও বলেন, ‘এসব উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে, আপনারা নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলে। নৌকা মার্কায় ভোট দিলে দেশে উন্নয়ন হয়। আনোয়ারায় বিশেষ অর্থনৈতিক জোন তৈরি করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে মেট্টো রেল সমীক্ষা চলছে। সম্ভব হলে সেটাও করে দেব। চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আওয়ামী লীগেই করে দিয়েছেন। চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। সেটা নিরসনে কাজ করছে সরকার। দ্রুত তা সম্পন্ন হবে। কক্সবাজার ছাড়াও রাঙামাটিতেও রেল লাইন করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিমেষ করে টানেলের জন্য আমি চীনের প্রধানমন্ত্রী শি চিনফিং কে ধন্যবাদ জানাই। কেননা, আমি বলাতেই তিনি রাজি হয়েছিলেন।’
আওয়ামী লীগের সভাপতি আরো বলেন, ‘চট্টগ্রাম হলো বাণিজ্যিক রাজধানী। আজকে নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলে উন্নয়ন করতে পেরেছি। আমরা যখন উন্নয়ন করি, বিএনপি তখন বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে, পুঁড়িয়ে মানুষ মারে। আমরা বিভিন্ন ভাতা দিচ্ছি। বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলব। আজ আমরা দেশকে ডিজিটাল করেছি। সবার হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন। বিএনপির আমলে গরিব মানুষেরা নুন-ভাত খেতে পারত না। আজকে ইনশাআল্লাহ এ ধরনের কোন সমস্যা নেই। গরিব মানুষেরা এখন ফ্ল্যাট পাচ্ছে। বিনা পয়সায় ঘর পাচ্ছে। আমরা কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি। বিনা জামানতে ঋণ নিতে পারবে। বিদেশ যেতে পারবেন। আমরা ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কোন দালালকে টাকা দিয়ে বিদেশে যাবেন না।
শেখ হাসিনা বলেন, এক কোটি মানুষকে আমরা কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি। পৃথিবীর অনেক ধনী দেশ করোনাকালে টিকা দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার বিনা পয়সায় দেশের মানুষকে টিকা দিয়েছেন। রিজার্ভের টাকা থেকে টিকা কেনা হয়েছে। ভ্যাকসিন কিনে ভ্যাকসিন দিয়েছি, আপনাদের সুরক্ষার জন্য। বিএনপির কাজ হলো মানুষ খুন করা। খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তার ছেলে তারেক রহমান ২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুছলেখা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। কোটি কোটি টাকা মানিলন্ডারিং করেছে। ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যা চেষ্টা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত।’
‘আজকে বিএনপি সরকারকে হঠানোর নানা আন্দোলন ও হুমকি দেয়। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা এনে দিয়েছে। ওই সমস্ত ভয় ও হুমকি আওয়ামী লীগকে দেখিয়ে লাভ নেই। বরং ১৫ ফেব্রুয়ারী ভোট চুরি করায় খালেদা জিয়াকে দেশের জনগণ ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দিয়েছিলো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি জামায়ত মানেই খুনী, হত্যাকারী। ভোট চোর, জনগণের অর্থ চোর, জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ শান্তিতে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বিএনপি জামায়াত ধ্বংস করে। আগুন দিয়ে জ্যান্ত মানুষ পুড়িয়ে মারে। জাতির জনকের হত্যার সাথে জিয়াউর রহমান জড়িত। বিএনপি খুন করা ছাড়া কিছু জানে না। ওরা আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ওরা যখন ক্ষমতায় থাকে তখন দুর্নীতি ও লুটপাট করে। এ চট্টগ্রামেই তো ১০ ট্রাক অস্ত্র চালানের সাথে এরা জড়িত। গ্রেনেড হামলা করে আমাকে বারবার হত্যা চেষ্টা করেছেন। ২২ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। চট্টগ্রামে আগে ছিল সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিল। এখন শান্তি ফিরে এসেছে।
আমার মা, বাবা, ভাইদের হত্যার বিচার করতে পারতাম না। ইনডেমনিটি দিয়ে রেখেছিলেন। আমি দেশের জন্য কাজ করতে এসেছি, এদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে এসেছি। আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। আপনাদের কাছে দোয়া চাই, আগামীতে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। আমার কেউ নেই। সবাইকে হারিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায় রাখতে পারবে না, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন। আপনারা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন। সবাইকে আগামীতে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করছি। (জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু)
জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, ‘বিএনপিকে এখন লালকার্ড দেখাতে হবে। আমাদের সবাইকে এক হয়ে যুদ্ধ করতে হবে। চায়ের দোকানে বসে নিজেদের সমালোচনা করলে বিজয় আসবে না। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আল্লাহ বাংলাদেশকে দুটি উপহার দিয়েছেন। একটি হলো শেখ মুজিবুর রহমান আরেকটি হলো-বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রামের মানুষকে আবারো যুদ্ধ করতে হবে। ষড়যন্ত্র শুরু করছে চট্টগ্রামের আমির খসরু আর ফখরুল সাহেবরা। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
ওবাযদুল কাদের আরও বলেন, যতদিন কর্ণফুলীর নদীর তলে নির্মাণ করা টানেল থাকবে, ততদিন চট্টগ্রামের মানুষ শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা মনে রাখবে। শুধু টানেল নয়, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন শেখ হাসিনা। বিশ্ব ব্যাংক যখন ঋণ দিবে না জানিয়ে দেন, তখন আমাতের অনেক নেতাও হতাশ হয়েছিলেন। কিভাবে পদ্মা সেতু হবে! তখন সংসদে দাঁড়িয়ে আমার নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু হবে। পদ্মা সেতু করে দেখিয়েছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। এমনকি এক দিনে একশ সেতুও উদ্বোধন করেছেন আমার নেত্রী। এসব বঙ্গবন্ধু কণ্যার অর্জন।
সেতুমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমির খসরু বলেছিলেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু কিছুদিন আগে দেশে ইউরেনিয়াম চলে এসেছে। এসব ইউনিরেনিয়াম কি আমির খসরুর মাথায় ঢালবো। খেলা হবে। আপনারা পালিয়ে যাবেন না। শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের মহা যাত্রায় বিএনপির এসব ষড়যন্ত্র তলিয়ে যাবে।’
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালণায় জনসভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিমসহ অন্যান্যরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button