অর্থ ও বাণিজ্যশীর্ষ নিউজ

দিনাজপুরে ভুট্টা মাড়াই চলছে : ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকেরা খুশি

 

দিনাজপুর, ৭ মে, ২০২৪ (বাসস) : জেলার ১৩ টি উপজেলায়  ভুট্টা মাড়াইয়ের কাজ চলছে।  কৃষকেরা  বাম্পার ফলন  ও ভালো দাম পাওয়া খুশি।
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টায় দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান মিয়া  জানায়, গত ১৫ দিন ধরে জেলার কৃষকেরা কৃষি বিভাগের  সরবরাহ করা ভর্তুকি  মূল্যে  প্রদান করা হারভেস্টসহ আধুনিক ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র ব্যবহারে স্বল্প সময়ের মধ্যে ভুট্টা মাড়াই কাজ সম্পন্ন করতে পারছেন। তাপদহ বেশি থাকায় মাড়াই করা ভুট্টা স্বল্প সময়ের মধ্যেই শুকানোর কাজ করতে পারছেন কৃষকেরা। আগামী ১৫ জুনের মধ্যে জেলার উৎপাদিতে ভুট্টা মাড়াই করে কৃষকেরা ঘরে তুলতে পারবে বলে তিনি আশা করছেন।
জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার আদর্শ কৃষক সোলাইমান আলী জানান, তিনি এ বছর ২  একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে,  ভুট্টা মাড়াই করে কাঁচা ভুট্টা জমি থেকেই ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পেরে তিনিসহ  তার এলাকার সব কৃষক  খুব খুশি। তাপদাহের কারণে  পাইকারেরা জমি থেকে কাঁচা ভুট্টা কিনে নিয়ে তাদের চাতালে স্বল্প সময়ের মধ্যে ভুট্টা শুকাতে সক্ষম হচ্ছে। বর্তমানে শুকনো ভুট্টা  ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন পাইকারেরা।
ভুট্টা ক্রয় করতে বড় কোম্পানি থাইল্যান্ড ভিত্তিক সিপি এবং দেশীয় কোম্পানির নারিশ জেলার বেশ কয়টি স্থানে তাদের বড় পরিসরে ভুট্টা ক্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন। তারা শুকনো ভুট্টা পাইকারদের নিকট থেকে ক্রয় করছেন।
অনেক মজুমদার ব্যবসায়ী কাঁচা ভুট্টা কিনে তাদের চাতালের শুকানের পর মজুদ করে রাখছেন।  ভুট্টা ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক জানান, প্রতিবছর শুকনা ভুট্টা মজুদ করেন।  মৌসুম শেষ হলে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই ভুট্টা ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে  কেজি ধরে বিক্রি করতে পারেন। তিনি বলেন, অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত ভুট্টা শুকিয়ে মজুদ করে রাখেন।বাজারে চাহিদা ও দাম বাড়লে ভুট্টা  বিক্রি করে তারা লাভবান হন।এভাবে ভুট্রা মজুদ রেখে ব্যবসাযয়িক ও কৃষকেরা উভয়ে  প্রতিবছর লাভবান হচ্ছেন। ফলে প্রতিবছর এ জেলায় ভুট্রার চাষ বেড়েই চলছে। ভুট্টা  একটি লাভ জনক ফসল হয় কৃষকদের কাছে ভুট্টা চাষে  আগ্রহ বাড়ছে।
কৃষি বিভাগের সূত্রটি জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৭৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা  হয়েছিল ।  গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত জেলায় ৭৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে । অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় লক্ষ্যমাত্র অতিরিক্ত ৪ হাজার ১০০ হেক্টর  জমিতে ভুট্টা চাষ অর্জিত হয়ে বাম্পার ফলন হয়েছে।
তিনি বলেন, গত কার্তিক মাস থেকে  ফ্গাুন মাস পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ভুট্টা লাগানোর কাজ চলছে। আগাম জাতের ভুট্টা পেকেছে । কৃষকেরা  তাদের ক্ষেতের ভুট্টা উত্তোলন  ও মাড়াইয়ের কাজ পুরো দমে শুরু করেছেন।
কৃষকরা ভালো ফলনের আশায় এবার উচ্চ ফলনশীল ভুট্টা জাত চাষ করেছেন।  বিরল উপজেলার ফরাক্কাবাঁধ   গ্রামের ভুট্টা চাষী নাজমুল  ইসলাম জানান,  প্রথমে ভুট্টা চাষের জমিতে  ২০ কেজি পটাস, ২৫ কেজি ফসফেট, ১০ কেজি জিপ সার, ১ কেজি বরন, ১ কেজি দানাদার ও ১ কেজি সালফার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে জমি তৈরি করেন চাষিরা। পরে বিঘাপ্রতি ৩ কেজি ভুট্টার বীজ রোপণ করেন । এক মাসের মাথায় আইল বেঁধে বিঘাপ্রতি ২৫ কেজি ইউরিয়া, ২০ কেজি ডেপ ও ২ কেজি থিওভিট ছিটিয়ে ক্ষেতে পানি সেচ দেন তারা । বীজ রোপণের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্য ভুট্টা কাটা-মাড়াই করে থাকেন কৃষকরা।
ভুট্টার বীজ রোপণ থেকে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত বিঘাপ্রতি কৃষকের খরচ হয় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ মণ ভুট্টা উৎপাদন হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button