চট্টগ্রাম

কর্ণফুলীতে ২৩ স্পটে ৩ ফাঁড়ি পুলিশ!

নিজস্ব প্রতিবেদক
মানুষ যখনই কোনো বিপদে পড়ে, সবার আগে আশ্রয় খোঁজে পুলিশের কাছে। পুলিশ জনগণের বন্ধু, এটি কাল থেকে কালান্তরের প্রতিষ্ঠিত একটি সত্য। এরই ধারাবাহিকতায় সিএমপি’র কর্ণফুলী থানাধীন তেইশ স্পটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাধারণ মানুষের সেবায় অবদান রাখছেন তিন পুলিশ ফাঁড়ি-শিকলবাহা, শাহমীরপুর ও বন্দর পুলিশ ফাঁড়ি।
কর্ণফুলী থানা থেকে ২৩ কিলোমিটার দুরে বন্দর পুলিশ ফাঁড়ি, ১২ কিলোমিটার দুরে শাহমীরপুর ও থানা থেকে ৩ কিলোমিটার অদুরে ইন্ডাস্ট্রিল ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা শিকলবাহায় সীমিত লোকবল নিয়ে চলছে তিন পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম।
যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ফাঁড়ি পুলিশকেও পালন করতে হয় চেকপোষ্টসহ আরো গুরু দায়িত্ব। কিন্তু দায়িত্ব ও সেবার বিবেচনায় ফাঁড়ি পুলিশের সুযোগ-সুবিধা যথেষ্ট নয়। রয়েছে আবাসন সঙ্কট, প্রশিক্ষণের অভাব, পরিবহন সমস্যাসহ নানা সরঞ্জামের অভাবে ভুগলেও সেবা প্রদানে পিছিয়ে নেই এই তিন পুলিশ ফাঁড়ি।
সাধারণত থানার আকার, জনবসতি ও অপরাধ প্রবণতার উপর ভিত্তি করে পুলিশী কার্যক্রম নিয়মিত চালিয়ে যাওয়ার জন্য ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়। ফাঁড়ি মূলত, মূল পুলিশ স্টেশন থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা অসুবিধা হয় বলে, স্থানীয়ভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ফাঁড়ি গঠন করা হয়।
ফাঁড়ি থানার অন্তভুর্ক্ত এবং থানার অফিসার ইনচার্জের অধীনে থাকে। যেখানে থানার অফিসার ইনচার্জের নির্দেশে পুলিশী কার্যক্রম চালাতে হয়। পুলিশ ফাঁড়িতে কোন মামলা রুজু করা যায় না, তবে জিডি করে থানায় প্রেরণ করা হয়। পুলিশ ফাঁড়ির সার্বিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন একজন সাব ইন্সপেক্টর অথবা সার্জেন্ট।
বর্তমানে কর্ণফুলী থানাধীন শিকলবাহা, শাহমীরপুর ও বন্দর তিন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোবারক হোসেন, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান ফাঁড়ি এলাকার সাধারণ মানুষের সেবায় আস্থা অর্জন করে চলেছেন। বৃদ্ধি করেছেন পুলিশের সুনাম ও ভাবমূর্তি।
কর্ণফুলী থানা পুলিশের পাশাপাশি অপরাধ দমনে ফাঁড়িগুলো প্রতি মাসে বিভিন্ন মাদক উদ্ধার করে আয়োজন করেছেন মাদক বিরোধী সমাবেশ। তৃণমূল মানুষের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে নিয়মিত চালু রেখেছেন বিট পুলিশিং কার্যক্রম। সাধারণ মানুষকে অপরাধীদের তথ্য প্রদানে উৎসাহিত ও থানামুখী করতে সামাজিক সম্পৃক্ততাও ধরে রেখেছেন।
এছাড়াও বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্ট ভুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার, ক্রাইম ও মাদক স্পটে অভিযান চালিয়ে অপরাধী আটক, চোরাই গাড়ি উদ্ধার, নদীপথে অবৈধ তেলচোর দমন, মাদক পাচার রোধে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছেন। গত মাসে শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়ির আইসি এসআই মো. মোবারক হোসেন তিন ক্যাটাগরিতে সিএমপির শ্রেষ্ঠ এসআই নির্বাচিত হয়েছেন। পিছিয়ে নেই শাহমীরপুর ও বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির আইসি ও পুলিশ সদ্যসরাও।
এমনকি ফাঁড়ি এলাকার চিহ্নিত অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী, ডাকাত ও সন্ত্রাস দমনের মতো একের পর এক দৃষ্টান্তমূলক কর্মকান্ড দেখিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছেন আইসি এসআই মো. মিজানুর রহমান ও এসআই মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান। পাহাড় জঙ্গল, শহরের প্রবেশমূখ আর নদী ঘেষা উপজেলার থানা হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কর্ণফুলীর পুলিশ সক্ষমতা দেখিয়ে যাচ্ছেন।
তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর সিএমপি’র কর্ণফুলী থানা পুলিশের পরিধি বাড়ে। নতুন করে পটিয়ার অধীনে থাকা শিকলবাহা ইউনিয়নের ৬টি ওর্য়াড, বড়উঠান ইউনিয়নের ৫টি ওর্য়াড মিলে মোট ১১টি ওর্য়াড যুক্ত হয় কর্ণফুলী থানায়। আনুষ্ঠানিক ভাবে যার কার্যক্রমও চলছে।
ফলে, শিকলবাহার পুলিশ ফাঁড়ির অধিক্ষেত্র দাঁড়ায় দ্বীপ কালার মোড়ল, বাংলা পাড়া, মাষ্টারহাট, সেভেন রিংস সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, সিডিএর টেক, ওয়াহেদিয়া পাড়া ও তালতলা টাওয়ারের গোরা। শাহমীরপুর পুলিশ ফাঁড়ির অধিক্ষেত্র ফকিরনিরহাট, কাঁচাবাজার, খাদ্য ফ্যাক্টরী, শাহমিরপুর মাজার, শাহমীরপুর বড় বাড়ি, কেইপিজেড গেইট ও দৌলতপুর ডাক পাড়া। এছাড়াও বন্দর পুলিশ ফাঁড়িকে নজর রাখতে হয় কেইপিজেডের বিভিন্ন অংশসহ জাগিরপাড়া, পারকি বীচ, বঙ্গবন্ধু টানেল, কাফকো সিইউএফএল, উত্তর বন্দর, কান্তির হাট, ডিএপি, ও ইসিএল এলাকা।
এ প্রসঙ্গে শিকলবাহা ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ এসআই মো. মোবারক হোসেন বলেন, ‘ভাল কাজের স্বীকৃতি সব সময় আনন্দের। এ কৃতিত্ব আমার একার নয়। থানার অফিসার ইনচার্জ ও দায়িত্বরত সকল পুলিশ ফোর্সদের’। মূলত ওসি স্যারের সহযোগিতা ও নির্দেশনায় এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের সার্বিক সহযোগিতায় আমাদের ফাঁড়ি পুলিশের এ প্রাপ্তি বলে আমি মনে করি।’
বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা জানি দেশের মানুষকে নির্মোহভাবে ভালোবাসতে হবে। সব উপায়ে সর্বোত্তমভাবে পাশে থেকে সাধারণ মানুষের সেবায় কাজ করতে হবে। কেননা, পুলিশ জনগণের বন্ধু। উর্ধ্বতন স্যারদের নির্দেশে সেটাই করতে চেষ্টা করছি মাত্র।’
সিএমপি বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘সিএমপির কর্ণফুলী থানার অবস্থানটা মূলত একটু প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকার ভেতরে। প্রশাসনের অবস্থান জনবহুল ও লোকচক্ষুর সামনে রাখা হলে অপরাধ প্রবণতা কিছুটা কমে আসে সেটা হয়তো সত্য। তবে জননিরাপত্তা নিশ্চিত ও নাগরিক ভোগান্তি কমাতেই তিন পুলিশ ফাঁড়ি ও ক্যাম্প ভালো কাজ করছেন। থানার পরিধি বাড়ায় ভবিষ্যতে আরো পুলিশ স্টেশন হবে। আশা করি পুলিশ থেকে জনগণ তাঁদের কাঙ্খিত সেবা পাবে।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে বন্দর, পটিয়া ও আনোয়ারা থানা ভেঙে গঠিত হয় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) আরেকটি স্টেশন কর্ণফুলী থানা। যেটি ২০০০ সালের ২৭ মে চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন পরিষদ এর পুরাতন ভবনে কার্যক্রম শুরু করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button