কী ঘটেছিল ভয়ংকর সেই রাতে
অন্যান্য সাধারণ দিনের মতোই সেদিন রাতের খাবার খেয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি এলাকার লোকজন। ঘড়ির কাঁটা ঠিক ১১টা ছুঁই ছুঁই। এমন সময় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয় বিএম কনটেইনার ডিপোতে। ওই বিস্ফোরণে কয়েক কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। এরপর পুরো এলাকায় দগ্ধ মানুষের ছোটাছুটি। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে বিস্তৃত এলাকার পরিবেশ। ভয়ংকর সে রাতের কথা উঠে এসেছে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে, যাকে তারা তুলনা করেছেন কেয়ামতের সঙ্গে।
গতকাল বাংলাশে প্রতিদিনের সঙ্গে কথা হয় ওই এলাকার বাসিন্দা ৫৮ বছর বয়সী মতিউর রহমানের। স্বাভাবিকভাবে কথাও বলতে পারছিলেন না তিনি। বলছিলেন, ‘আমার এ জীবনে এমন বিভীষিকাময় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কখনো হইনি। বিস্ফোরণের পর কয়েক শ মিটার দূরে গিয়ে পড়ে লোকজনের হাত-পা, মাথার মগজ। এমনকি ৪০ থেকে ৫০ কেজি ওজনের কনটেইনারের ভাঙা অংশ এসে পড়ে লোকজনের ঘরের ওপর। ওই দিনের ঘটনা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে ওঠে। ওই দৃশ্যগুলো আমার মাথা থেকে কোনোভাবেই সরাতে পারছি না।’
ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কেশবপুর এলাকার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘রাতের ভাত খেয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমন সময় বিকট শব্দে পুরো এলাকা কম্পিত হয়। প্রচণ্ড শব্দে ভেঙে যায় ঘরের দরজা-জানালা। তখন আতঙ্কে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যাই।’
ওই রাতের বিস্ফোরণকে রিখটার মাত্রা ১০ স্কেলের ভূমিকম্পের সঙ্গে তুলনা করেছেন বিএম কনটেইনার ডিপোর লাগোয়া আমিনুর রহমানের বাড়ির বাসিন্দা মো. হোসেন ভুট্টু। তার মতে, ‘ডিপোতে আগুন লাগার খবর পেয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াই। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয় ডিপোতে। তখন মনে হয়েছে রিখটার মাত্রা ১০ স্কেলের ভূমিকম্প হচ্ছে। পুরো বিল্ডিং আমার শরীরের ওপর এসে পড়েছে।’ বিএম ডিপোর পার্শ্ববর্তী আলাউদ্দিনের বাড়ির সালেহা বেগম বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর সবাই এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছিল। কেউ কেউ যন্ত্রণায় মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। দগ্ধদের কেউ কেউ আবার পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে জীবন রক্ষার চেষ্টা করছিল। তখন মনে হয়েছে কেয়ামত প্রত্যক্ষ করছি।’
কামাল কন্ট্রাক্টর বাড়ির মো. সেলিম বলেন, ‘বিস্ফোরণের পরপরই ঘর থেকে বের হয়ে দেখি দগ্ধ মানুষের আহাজারি। দগ্ধদের সবারই শরীর সাদা আবরণে ঢেকে গেছে। অনেকের হাত নেই, পা নেই। এর পরও তারা জীবন বাঁচাতে ছুটছে আর ছুটছে। কী ভয়ংকর পরিবেশ ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এ ধরনের প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন আর হতে চাই না।’
বিএম কনটেইনার ডিপোর সিএফএস সুপারভাইজার এমরান হোসেন বলেন, ‘রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডিপোর সতর্ক অ্যালার্ম বেজে ওঠে। মনে করেছি অন্য দিনের মতো স্বাভাবিক কিছু। তবে রাত ১১টার পর থেকে একের পর এক বিস্ফোরণ হচ্ছিল। এ সময় কোনো নিরাপত্তা সরঞ্জামই কাজে আসছিল না। প্রলয়ঙ্করী রাত কেটেছে আমাদের। এমন দৃশ্য জীবনে কখনো দেখিনি।’