অর্থ ও বাণিজ্যশীর্ষ নিউজ
মৎস্য অধিদপ্তর, কোস্ট গার্ড,ও প্রশাসনের নিরবতায় চলছে চিংড়ি রেণু নিধনের মহা উৎসব
বিশেষ প্রতিনিধি ঃ-
চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূলীয় নদীর বিভিন্ন স্থানে ও সাগরের মোহনায় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে অবাধে চলছে গলদা-বাগদা চিংড়ির রেণু আহরণ। এ রেণু আহরণ করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই ধ্বংস ১৩ হাজার প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী।
নদীর বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, নিষিদ্ধ মশারি ও ঠেলা জাল দিয়ে জেলেরা লাখ লাখ চিংড়ি রেণু আহরণ করে বিক্রি করছে স্থানীয় ব্যাপারীদের কাছে। ব্যাপারীরা সেগুলো দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে খুলনা, বাগেরহাট,ফয়লা,ফকির হাট,চুক নগর সাতক্ষিরা,ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন চিংড়ি ঘের মালিকদের কাছে। আর এই সিন্ডিকেট এর মুল হোতা ক্যারিংম্যান হিসাবে যার আধিপত্য তিনি হলেন, মোঃ ইয়াসিন প্রঃ মধু।
জানাগেছে, কর্ণফুলি থানার জুঁলধা গ্রামের মোঃ ইয়াসিন প্রঃ মধু তিনি তিন বছর আগেও ছিল লেবার, এখন আঙুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন, বর্তমানে কোটি কোটি টাকার মালিক, গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড় এই অর্থের উৎস কি? জুঁলদার পাইপের গোড়া বাজার এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের একজন ব্যাবসায়ী বলেন, প্রতিদিন পিক-আপে করে ৩/৪ পিক-আপ করে মাছের পোনা যেতে দেখি, গোন পড়লে ১৪/১৫ গাড়ি করে পোনা যায়।
এব্যাপারে আমরা মৎস্য কর্মকর্তাদের জানিয়েছি কিন্তু তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পাশ কেটে যান, অভিযানের নামে এসে দুই একজন জেলের জাল ধরে মানুষ দেখানো দ্বায়সারা ভাব নিয়ে চলে যান, কিন্তু প্রতিদিন পিক-আপে করে গাড়ি গাড়ি মাছের পোনা গেলেও সেগুলো ধরার ব্যাপারে নেই কোন তৎপরতা,
এব্যাপারে জেলা মৎস্য অফিসার ফারহানা লাভলির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের নিয়মিত অভিযান চালু আছে, আপনাদের কাছে কোন খবর থাকলে দিন আমরা অভিযান করবো, আনোয়ারা থানার মৎস্য কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি, অভিযোগ পেলে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
এলাকাবাসি জানায়, সাগরের যে কোন বিষয়ে দেখার দ্বায়িত্ব কোস্ট গার্ডের কিন্তু কোস্ট গার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা প্রতিদিন একই রাস্তায় পোনা নিয়ে গেলেও মৎস্য অফিসার, কোস্ট গার্ড, এমনকি পুলিশ প্রশাসন সহ সলকের নিরব ভুমিকার কারন কি?
সরকারীভাবে আইন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী চিংড়ি রেণু আহরণ, মজুদ করন, পরিবহন, স্থানান্তর ও সরবরাহ নিষেধ আইন থাকলেও মৎস্য অফিসের কিছু অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এবং কোস্ট গার্ডের ক্যাসিয়ার জহির ও প্রশাসনের ক্যাশিয়ার মাসুদ পাহাড় তলি থানার নাম দিয়ে নতুন ব্রীজ এলাকার ইউসুফ নামের জনৈক ব্যাক্তির মাধ্যমে চলছে পোনা বানিজ্য।
খোজ নিয়ে জানাযায়, চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন থানার ক্যাসিয়ার খ্যাত লোকদের কে ড্রাম প্রতি ৫০/১০০ টাকা দিয়ে অবাধে চলছে পোনা বানিজ্য।
এলাকাবাসি জানান, নগরীর বিভিন্ন থানায় কথিত ক্যাসিয়ারের মাধ্যমে মোটা অংকের কোটা সিস্টেম চালু থাকায় অবাধে ইয়াবা পাচার করছে এই সিন্ডিকেটটি। যা প্রশাসন সহ সকলের ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি খতিয়ে দেখলে সত্যতা প্রমাণিত হবে।
চট্টগ্রামের নদীর মুহুরী রেগুলেটরের দু’পাশে, কক্সবাজার, বাঁশখালী,শঙ্খ নদী, বদর খালী, জুঁইদ্বার,ও কর্ণফুলীসহ বেশ কিছু স্থানে গিয়ে চিংড়ির আহরণ ও মৎস্য প্রজাতির এ ধ্বংসলীলা দেখা যায় প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত। অথচ প্রজনন মৌসুম থাকায় এ সময়টাতে নদীতে মাছ ধরার প্রতি রয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন নদীর মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকা থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের মীরসরাই এর ইছাখালী, বানচন্দ খাল পর্যন্ত এবং ছোট ফেনী নদীর কাজীর হাট স্লুইচ গেট থেকে দক্ষিণে সন্দীপ চ্যানেল পর্যন্ত বিশাল উপকূলীয় এলাকায় প্রতিদিনই লাখ লাখ চিংড়ি পোনা আহরণ করা হচ্ছে। এতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বাঁশখালী,জুঁইদার,শঙ্খ নদী,কর্ণফুলি, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও সোনাগাজী উপকূলীয় অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ শুধু নদীতে চিংড়ি পোনা আহরণ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে।
পরিবেশবিদরা মনে করছেন এখনই যদি এটা বন্ধ করা না যায় তবে সাগরের বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর অকল্পনীয় ক্ষতি হবে। ধ্বংস হচ্ছে ১৩ হাজার প্রজাতির প্রাণী। সমুদ্র রক্ষা করতে ও পরিবেশ বাচাতে এক্ষনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের করতে মৎস্য অধিদপ্তর, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, ও র্যাবের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা এবং যারা এই ব্যবসার সাথে জড়িত তাদেরকে দ্রুত আইনের এনে চিংড়ি রেণু আহরণ বন্ধ করার আহ্বান জানান।