টাঙ্গাইলে যমুনার পানি বিপৎসীমার ১৩ সে.মি. উপরে, ১১৪ গ্রাম প্লাবিত
টাঙ্গাইলে অভ্যন্তরীন নদীগুলোতে পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলার ছয়টি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের প্রায় ১১৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে গবাদিপশু নিয়ে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এক দিকে বাড়ি-ঘরে পানি উঠছে অন্যদিকে ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি জোকারচর পয়েণ্টে ১৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঝিনাই নদীর পানি বাসাইল অংশে ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার সামান্য নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির পাশাপাশী বিভিন্নস্থানে নদী ভাঙনও দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ও হেমনগর ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রাম, ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা, গাবসারা ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি গ্রাম, কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী, দুর্গাপুর, সল্লা ও দশকিয়া ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি গ্রাম, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মগড়া, কাকুয়া, কাতুলি ও মাহমুদনগর ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম, নাগরপুরের ভাড়রা, সলিমাবাদ ও দপ্তিয়র ইউনিয়নের প্রায় ৭টি গ্রাম, বাসাইল উপজেলার সদর, কাশিল ও ফুলকী ইউনিয়নের ১২টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। ওইসব এলাকার অন্তত ১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। সোমবার (২০ জুন) সকালে কালিহাতী উপজেলার সল্লা থেকে হাতিয়া হয়ে আনালিয়াবাড়ী এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া বাঁধ ভেঙে ফসলি জমি-বাড়ি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। শনিবার দিবাগত রাতে বাসাইল উপজেলার বাসাইল দক্ষিণ পাড়া-বালিনা সড়কের একটি অংশ পানির তীব্র স্রোতে ভেঙে পৌর এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।
প্লাবিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব, গো-খাদ্যের সংকট, কোন কোন এলাকায় বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে। শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে সর্দি-জ্বর দেখা দিচ্ছে।
মগড়া ইউনিয়নের শাহালম, আবুল কালাম, আজমত আলী, দুর্গাপুরের হযরত আলী, জামাল হোসেন, আবু বকর, গোবিন্দাসীর শরাফত আলী, বেনজির হোসেন, কাশেম, চরপৌলির আরফান আলী, নজরুল ইসলাম, আবুল খায়েরসহ বন্যা কবলিতরা জানায়, রাতের মধ্যে হু হু করে পানি বেড়ে ঘর-বাড়ি হঠাৎই প্লাবিত হয়ে পড়ছে। বাড়ি-ঘরের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার আগেই ঘরে পানি ঢুকছে। ফলে গৃহস্থরা গবাদিপশু নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড অভ্যন্তরীন সব নদীতে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যার আশঙ্কা করছে। তবে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আকন্দ, দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল হোসেন চকদার জানান, হু হু করে পানি বাড়ছে। বাড়ি-ঘরে পানি উঠে চরম দুর্ভোগে রয়েছে সাধারণ মানুষ। তারা নিজের সাধ্য অনুযায়ী যতটা পারছেন সাহায্য করছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে পৌঁছেনি।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, বন্যার পানি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে হারে পানি বাড়ছে তাতে বন্যার ভয়াবহ রূপ ধারণ করলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে বরাবরের চেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড আরও বেশি সতর্ক রয়েছে।