নতুন জাতের হলুদ চেরি টমেটো দ্বিগুন ফলন টানা ৬ মাস
মালিক উজ জামান, যশোর : দেশে যুক্ত হলো আরো একটি উচ্চ ফলনশীল চেরি টমেটোর জাত। হলুদ রঙের জাপানি জাতের এই টমেটো ফল দেবে টানা ছয় মাস। ফলন হবে দ্বিগুন। রঙের পাশাপাশি এর আকৃতি ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা অন্য টমেটোর চেয়ে বেশি। এতে বেশি পরিমাণে লাইকোপিন ও ফ্ল্যাভোনয়েড এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এর মধ্যে লাইকোপিন ক্যানসার ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। আর ফ্ল্যাভোনয়েড ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর।
দেশের আবহাওয়ায় চেরি জাতের টমেটোকে চাষোপযোগী করার জন্য দীর্ঘ ৫ বছর গবেষণা করে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় বীজ বোর্ড নতুন এ জাতের প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে। সে অনুযায়ী জাতটির নাম গোল্ডেন পূর্ণা (সাউ চেরি টমেটো)। এখন দেশের মাটিতে চাষের জন্য কৃষক পর্যায়ে এর বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। গবেষকরা জানান, দেশে উদ্ভাবিত চেরি টমেটোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বেশি ফলনশীল; যা দিগুণ ফলন দেবে। একটি টমেটো গাছের জীবনকাল তিন থেকে চার মাস হলেও চেরির পাঁচ থেকে ছয় মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফলে এটি সাধারণ টমেটো গাছের চেয়ে প্রায় দুই মাস বেশি সময় ধরে ফল দেবে। জাতটি হাইব্রিড প্রকৃতির না হওয়ায় কৃষক নিজেই এর বীজ থেকে চারা উৎপাদন করতে পারবেন। এতে মাতৃ উদ্ভিদ ও উৎপাদিত চারার বৈশিষ্ট্যের কোনো তারতম্য হবে না। গবেষণাকাজের নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম জামালউদ্দিন। এ বিষয়ে তিনি জানান, নতুন জাতের এ টমেটোর চামড়া তুলনামূলক পাতলা, ফল মিষ্টি এবং রসাল। চারা লাগানোর ৩০ দিনের মাথায় গাছে ফুল আসে। গোল্ডেন পূর্ণা জাতটি ইনডিটারমিনেট প্রকৃতির হওয়ায় গাছটির বৃদ্ধি এবং ফল দেওয়ার কার্যক্রম একসঙ্গে চলতে থাকে। ফলে গাছের প্রতি থোকায় একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর ফুল ও ফল আসে। ফলে কৃষককে একসঙ্গে সব ফল সংগ্রহ করতে হয় না। এতে কৃষক প্রয়োজন অনুযায়ী গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করে বিক্রি করতে পারবেন।
এ জাতের গাছ ২ মিটারের বেশি লম্বা হয়ে থাকে। প্রতিটিতে সাত থেকে আটটি থোকা বের হয়। আর প্রতি থোকায় প্রায় ২৪৫ থেকে ২৫৫টি টমেটো ধরে। প্রতিফলের ওজন ৫ থেকে ৬ গ্রাম। অন্য টমেটোয় হেক্টরপ্রতি ফলন ৮০ থেকে ১০০ টন হলেও গোল্ডেন পূর্ণার ফলন হবে তার প্রায় দ্বিগুণ, হেক্টরপ্রতি ১৬০ থেকে ১৬৫ টন। চাষ পদ্ধতি অন্য টমেটোর মতোই। তবে দীর্ঘ সময় ধরে ফল দেয় বলে জমিতে একটু বেশি পরিমাণে জৈব সার প্রয়োগ করতে হয়। ১ হেক্টর জমিতে ২২ থেকে ২৪ হাজার চারা লাগে। সব ধরনের মাটিতে এটি চাষ করা যায়। তবে বেলে দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ মাটিতে বেশি ফলন হয়। অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে জমিতে চারা বপনের উপযুক্ত সময়।
ভাইরাস ব্যতীত অন্য কোনো পোকা বা রোগের আক্রমণ হয় না বলে এর পরিচর্যা খরচ তুলনামূলক কম। জাতটি কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে আগামী বছর থেকেই বিনামূল্যে বীজ বিতরণ শুরু করা হবে বলে জানান গবেষকরা।