অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে নজিরবিহীন বিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালানো শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে এবার সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে নিয়ে মালদ্বীপ ছেড়েছেন। শ্রীলংকা সরকারের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তার বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এদিকে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বার্তা সংস্থা এপি’র বরাতে জানিয়েছে, ৭৩ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে মালদ্বীপ ছেড়েছেন। এরপর সেখান থেকে তিনি সৌদি আরবের জেদ্দায় যাবেন।
এর আগে গতকাল বুধবার সকালে রাজাপাকসে স্ত্রী ও দুই বডিগার্ড নিয়ে মালদ্বীপের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। মালদ্বীপের এয়ারপোর্টে তাকে স্বাগত জানান দেশটির স্পিকার মোহাম্মদ নাশিদ।
উল্লেখ্য, বিপুল জনসমর্থন নিয়ে দেশটির ক্ষমতায় এসেছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা গোতাবায়া। রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পরাজিত করতে সক্ষম হওয়ায় ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষের মতো জাতির নায়ক হিসেবে বিবেচিত হতেন তিনিও। কিন্তু রাজাপক্ষে পরিবারের পতনের সময়টাতে তারা জাতির চক্ষুশূল হয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে গোতাবায়া ছিলেন বিপুল ক্ষমতার অধিকারী। সেই ক্ষমতাশালী ব্যক্তিই এখন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অনিশ্চিত জীবনযাপন করছেন। গতকাল বুধবার তার পদত্যাগ করার কথা ছিল। ভোর হওয়ার আগেই জনরোষের মুখে মালদ্বীপে পাড়ি জমান। সেখানে থেকে লঙ্কান প্রেসিডেন্টে এবার সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা হন। এরপর সেখান থেকে সৌদি আরবের জেদ্দায় যাবেন।
শ্রীলঙ্কা এখন গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটে নিমজ্জিত। রিজার্ভ সঙ্কটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারছে না দেশটির সরকার। গোতাবায়ার অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বেশি। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুরোটা দায় সরকারের নয়। যদিও সরকারের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
এদিকে দেশটির রাজধানী এখনো বিক্ষোভকারীদের দখলে রয়েছে। সেখানকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য ‘যা যা দরকার’ তা করার জন্য তিনি সামরিক বাহিনী ও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্রামাসিংহে।
বিবিসির সংবাদদাতা রজনী বৈদ্যানাথান বলছেন, শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি বর্ণনা করা কঠিন। কিন্তু আসল প্রশ্ন হচ্ছে- এরপর কী? এর উত্তর বিক্ষোভকারীরাও জানে না। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তাদের লড়াই এখনই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। তাদের দাবি সরকারের নেতৃত্বে যারা আছেন তাদের সবাইকে চলে যেতে হবে। এবং দেশের যে অবস্থা হয়েছে তার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার হতে হবে।
অন্যদিকে, এই বিক্ষোভে এ পর্যন্ত এক ব্যক্তি নিহত ও ৮৪ জন আহত হয়েছেন।