জেলরোড নিমতলা টি স্টলের মিন্টু’র মৃত্যুতে শোকের ছায়া
মালিক উজ জামান, যশোর : যশোর শহরের ঘোপ জেলরোডের নিমতলা টি স্টলের মালিক মিন্টু মিয়া আর নেই( ইন্না নিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহী রাজিউন)। রোববার রাতে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যু বরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুনাগ্রহী রেখে গেছেন। সোমবার সকাল নয়টায় কেন্দ্রীয় কারাগারের প্যারেড গ্রাউন্ডের মাঠে তার জানাজার নামাজ শেষে ঘোপ কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
মিন্টুর ছোট পুত্র হাসান জানান, রোববার সকালে হঠাৎ মিন্টু অসুস্থ্যতা বোধ করেন। সন্ধার পর তিনি আরও বেশী অসুস্থ্য হয়ে পরেন। পরে তাকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত নয়টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যু বরণ করেন। মিন্টুর মৃত্যুর খবর শুনে ডিআইজি রোডের বাড়িতে ছুটে আসেন যশোর ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র মোকসিমুল বারী অপু, বিএনপি নেতা মামুন, ৩নং ওয়ার্ড যুবলীগের আহবায়ক জাহিদ হাসান জলিল, কাঠেরপুল যুবসংঘের সভাপতি সাংবাদিক শিমুল ভূইয়া, ছাত্রলীগ নেতা শামীম হোসেনসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ। তারা শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। মিন্টু এলাকার একজন ব্যবসায়ী শুধু তা নয়। তিনি এলাকার পরিচিত মুখ ও স্বজন। এলাকায় কারো মৃত্যুর খবর শুনলে তিনি আগে ছুটে যেতেন সেই বাড়িতে। নিজে হাতে কবর খুড়ে নিহতের দাফন সম্পন্ন করে তার পরে তিনি বাড়ি ফিরতেন। এছাড়া এলাকার কেউ সমস্যায় পড়লে তিনি তার পাশে যেয়ে দাড়াতেন। এসব কারণে ঘোপ এলাকার মানুষ তাকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন।
মিন্টু প্রথমে জেলরোডের এন.এম খান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নিমতলা টি স্টল নামে একটি দোকান দেয়। দিনরাত ২৪ ঘন্টায় মিন্টুর দোকানে হরেক রকমের চা পাওয়া যেত। এছাড়া সেখানে ভাত তরকারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের খাবার নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যদি পাওয়া যেত। ওই দোকানের অন্যরকম এক বৈশিষ্ট ছিলো কর্মঅক্ষম মানুষদের বিনামুল্যে খাওয়াতেন তিনি। নানা সমস্যায় সে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায় মিন্টুর। দীর্ঘদিন কঠিন কষ্টের মধ্যে দিন কাটে তার। টানা আট বছর ছিল তার কষ্ট। আর্থিক টানাপোড়েনে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় সাজানো সংসার। সর্বশেষ এক বছর আগে আবার নতুন করে স্বপ্ন বাধতে শুরু করে মিন্টু। ছিন্নবিচ্ছিন্ন জীবনকে নতুন করে সাজাতে নতুন শুরু তার। প্রথমে জেলখানার মোড়ে ফুটপাতে বিভিন্ন ধরণের ফল বিক্রি শুরু করে। দিনে দোকানদারি আর রাতে রাস্তার পাশে ঘুমিয়ে রাত কাটে তার। কয়েকদিন পর পাশেই একটি টোঙ দোকান দিয়ে আবারো সেখানে চা বিক্রি শুরু করেন। নাম দেয় সেই নিমতলা টি স্টল। আবারো দিনরাত ২৪ ঘন্টা ওই দোকানে শুরু হয় বেচাকেনা। আর্থিক দিনথেকে আসতে থাকে স্বচ্ছলতা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, যে মুহুর্তে মিন্টু ঘুরে দাড়াতে শুরু করে। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে গোটা পরিবার। ঠিক সেমূহুর্তে সবার স্বপ্ন ভেঙে চুরে মিন্টু চলে গেছে পরপারে।