সচিবালয়ের গাড়ীচালক পরিচয়ে পাগলাদহের সেলিম রেজার ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ
মালিক উজ জামান, যশোর : সচিবালয়ের সচিবের গাড়ীচালক পরিচয়ে জনৈক সেলিম রেজা ব্যাপক চাঁদাবাজিতে লিপ্ত। যশোর সদর উপজেলার শানতলা গ্রামের মতিয়ার রহমানের পুত্র সেলিম রেজা (৩৮) এর চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। তীব্র জনরোষে ভয়ে সে এখন পাগলাদহ, বিরামপুর গাবতলা, বিরামপুর কালিতলা, উপশহরে বাড়ীভাড়া নিয়ে সে থাকে। সেলিম নিজেকে জন প্রশাসন মন্ত্রনালয়ের গাড়ী চালক দাবি করে। তবে সে কোন সচিবের গাড়িচালক সেই নামটি ব্যবহার বা উচ্চারণ করে না।
স্থানীয়রা জানায়, সেলিমের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ পাগলাদহ ও শানতলার নিরীহ গ্রামবাসি। পাগলাদহের শহিদুল ইসলামের পুত্র উজ্জ্বলের কাছে লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে ২৭ জুলাই। এবিষয়ে পরদিন উজ্জ্বলের স্ত্রী মনো বেগম বাদি হয়ে কোতয়ালি মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের তদন্তভার এস আই তুহিন তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। মজার বিষয় এই, ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করলেও সেটি কোতয়ালি মডেল থানা আমলে নেয়নি। বরং এদিন দুপুরে মোবাইল ফোনে সে এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে ফোন করে। এদিকে সে চাঁদাবাজি ঠিক রাখতে ৩১ জুলাই অতি গোপনে পাগলাদহের ভূক্তভোগী একই পরিবারের পাঁচজনের নামে একটি মামলা করিয়েছে। মামলা নম্বর-১০২, তারিখ ৩১/০৭/২২। জিআর ৭৮৮/২২। ধারা ৩২৩/৩৫৪/৩৭৯/৫০৬/১১৪ পেনাল কোড ১৮৬০। মামলার আসামীরা হলেন, আপন তিন ভাই শহীদের পুত্র হাসান, ইউসুফ, নুরু এদের মাতা মনোয়ারা বেগম মনু (৬০) ও উজ্বলের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম। এরা অতি নিরীহ গ্রামবাসী একই পরিবারের সদস্য। ১নং আসামী হাসান রাজধানী ঢাকায় একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানীর গাড়ী চালক। সে ঈদের ছুটি কাটিয়ে ১৫ জুলাইয়ের আগেই আবার ঢাকায় চলে গেছেন। ২নং আসামী ইউনুস তিনি একটি অটো চালক। ঘটনার আগে পাশে কিছুই জানেননা। সাত সকালে বাড়ী থেকে বের হয়ে চলে যান আর ফেরেন রাত ১১টার পর। নুরু সোহাগ পরিবহনের বাস চালক। মামলা রেকর্ডের দিনও তিনি ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। তবে মোবাইলে তার নামে মামলা হয়েছে শুনেছেন। মামলার পরদিন কোন পূর্ব শত্রুতা না থাকা সর্ত্ত্বেও একই পরিবারের ৫জনের নামে মামলা দায়েরের ঘটনায় এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃস্টি হয়েছে। এই মামলার কারনে মামলার আসামিদের প্রবীন পিতা-মাতাসহ পরিবারের সদস্যরা এখন আদালত ও থানায় দৌড়াদৌড়ি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এরা কখনো এমন পরিস্থিতিতে অভ্যস্থ নয়। তারা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অতি তুচ্ছ কারনে সেলিম এর এজেন্ট হিসাবে মামলাটির বাদি হয়েছেন, সেলিম রেজার স্ত্রী আফসানা। উল্লেখ্য এক বছর আগে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে শানতলা গ্রামবাসী এই সেলিম কে মারধোর দিয়ে এলাকা ছাড়া করেছিল।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এত গুলো বাড়ি কিভাবে একজন ব্যক্তি ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে পারে। তার জীবনযাত্রার মান দেখে মানুষের নানা প্রশ্ন। তবে সেলিমের সহযোগী সব সময় চারজন। দুটি মোটরসাইকেলে সেলিমসহ এই পাঁচজন আগ্নেয়াস্ত্র সহ ঘোরাঘুরি করে। কারনে অকারনে তা মানুষজনকে দেখায় আর মুখে বলে এসব অস্ত্রের লাইসেন্স আছে। তবে তার আগ্নেয়াস্ত্র বৈধ না অবৈধ তা গ্রামবাসী বলতে পারেননি। পাগলাদহ, বিরামপুর, শানতলা, চুড়ামনকাঠী এলাকায় এদের নিয়মিত মোটর সাইকেলে বেশি মহড়া দিতে দেখা যায়। তবে এরা সন্ধ্যা সাতটার পরেই অন্ধকারে এরা বেশি মহড়া দেয়। এসব কারনে গ্রামবাসির তার সম্পর্কে তীব্র সন্দেহ। গ্রামবাসী জানায়, সেলিম পুলিশ প্রশাসন কে ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করে। তবে এক্ষেত্রে সেলিম পুলিশকে নিজেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সচিবের গাড়ীচালক পরিচয় দেয়। তবে সবসময় তাকে সদলবলে যশোরেই মহড়া দিতে দেখা যায়। সে কদাচিৎ যশোরের বাইরে থাকে। তাহলে কখন সে সচিবের গাড়ী চালায় তা কারো বোধগম্য নয়। অভিযোগ রয়েছে, সেলিমের ৩নম্বর স্ত্রী আফসানা স্বামীর পক্ষে বিভিন্ন জনকে নানা প্রতারনায় ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় করে। আফসানা বিরামপুর, কালীতলা ও পাগলাদহে হাতকাটা মনিরুলের বাড়ী থাকে ও স্বামীকে দেখভাল করে। তিনি ময়মনসিংহ এলাকার মেয়ে হলেও (পিতা জয়নাল আবেদীন) এখন আশেপাশের গ্রামবাসীর তালিকা তার কাছে জমা রেখেছে প্রতারক সেলিম। তাছাড়া তার নামে মামলা থাকাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কেননা সে কোন বাড়ি থাকে তা কেউ জানেনা। এসব কারনে এই সেলিম রেজা কে নিয়ে আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই। গ্রামবাসী জানায় অপরাধ করেছে সেলিম রেজা গং। কিন্ত মামলা দিয়েছে নিরীহ একই পরিবারের লোকজন সন্তান পিতা-মাতা ভাবীদের। এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। এর মধ্যে রয়েছে ৬০/৬৫ বছরের প্রবীন মা। যিনি কখনো কারো সাথে ঝগড়াও করেননি। গ্রামে তার সেই সুনাম রয়েছে। এদিকে অতিষ্ঠ হয়ে সেলিম রেজা ও তার অনুসারীদের বিপক্ষে ভূক্তভোগীরা পাল্টা মামলার প্রস্তুতি গ্রহন করেছেন।