জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় আন্তঃপ্রজন্ম সেতুবন্ধন জরুরী
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীই তরুণ ও যুব। তারাই উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রকৃত কারিগর। তাদের উপরই নির্ভর করছে দেশের সমৃদ্ধি ও ভবিষ্যত। পাশাপাশি জলবায়ু সংকট এবং মানবিক সংকট মোকাবিলায় তরুণরাই অগ্রগামী। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় আন্ত:প্রজন্ম সেতু বিনির্মাণ ও সংহতি অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করছেন যুব সংগঠক এবং বিশেষজ্ঞরা।
আন্তর্জাতিক যুব দিবসের এক আন্ত:প্রজন্ম সংলাপে অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। সিলেট বিভাগ ও কুড়িগ্রামের সাম্প্রতিক বন্যা মোকাবিলায় তারুণ্যের নেতৃত্বের সাড়া প্রদান পুর্ণবাসন কর্মসূচি যার বড় উদাহরণ। বক্তারা মানবিক সহায়তা প্রদানে নিয়োজিত যুব সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবকদের ভূয়সী প্রশংসার পাশাপাশি তরুণদের উদ্যোগে সরকার, প্রবীণ সম্প্রদায় এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে আহবান জানান।
পরিবেশবাদী যুব আন্দোলন ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস শুক্রবার (১২ই আগস্ট) সন্ধ্যায় তরুণ ও প্রবীণ প্রজন্মের মধ্যে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে এই আন্ত:প্রজন্ম সংলাপের আয়োজন করে। ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের জাতীয় সমন্বয়ক শাকিলা ইসলাম’র সভাপতিত্বে সংলাপে বক্তব্য রাখেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার- হিউম্যানিটারিয়ান রেসপন্স ও রেজিলিয়েন্স মইন উদ্দিন আহম্মেদ।
সংলাপে অংশ নিয়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, পরিবেশগত ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় আচরণগত পরিবর্তন করতে হলে তরুণ ও যুবদের সাথে কাজ করতে হবে। প্রবীণ প্রজন্মের তুলনায় তরুণদের মধ্যে পরিবর্তন আনা সহজ। জলবায়ু ও পরিবেশ সংকট তৈরি করেছে পূর্বপ্রজন্ম যার ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে বর্তামান ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে। আগের প্রজন্মের ভোগ ও লোভ এবং প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশকে গুরুত্ব না দিয়ে ব্যবসার মাধ্যমে অনৈতিক মুনাফা বাড়ানোর জন্যই আজকে এই বৈশ্বিক সংকট তৈরি হয়েছে। এ সংকট মোকাবিলায় প্রজন্মের সাথে প্রজন্মের অংশীদারিত্ব ও সংহতির কোন বিকল্প নেই। অধ্যাপক মজুমদার আরো বলেন, আমরা তরুণ ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে রেখে যেতে পারিনা। তাই এই ধরনের আন্ত:প্রজন্ম সংলাপ বেশি বেশি করে আয়োজন করা দরকার যাতে প্রবীণদের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে তরুণরা উপকৃত হতে পারে। তারুণ্যের দুর্জয় শক্তি এবং প্রবীণদের অভিজ্ঞতা এ দুয়ের সমন্বয় ঘটিয়ে কাজ করতে পারলে আমরা সবার জন্য একটি নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।
সংলাপের মূল ধারণাপত্র তুলে ধরেন ইয়ুথনেটের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান। ফাইরুস মৌ’য়ের সঞ্চালনায় তরুণ প্রজন্মের পক্ষে সম্প্রাতিক বন্যা দুর্গতের সহায়তা নিয়ে অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন সিলেটের জলবায়ু যোদ্ধা সৈয়দ আফজাল সিয়াম এবং ইয়ুথনেট কেন্দ্রীয় কমিটির এসজেড অপু। নারী নেতৃত্বের বন্যাকালীন মানবিক সংকট মোকাবিলার অভিজ্ঞতা ও প্রতিবন্ধকতা সমূহ তুলে ধরেন ইয়ুথনেট হবিগঞ্জের জেলা সমন্বয়কারী নাওফাত আদিবাহ ইবশার এবং সিলেটের নারী জলবায়ু যোদ্ধা হুমায়রা আহমেদ জেবা।
মূল ধারণাপত্রে সোহানুর রহমান বলেন, প্রজন্মের সাথে প্রজন্মের সংহতি হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন সাধনের চাবিকাঠি পাশাপাশি জলবায়ু সুবিচার আদায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে আন্তঃপ্রজন্ম সাম্য। যখন আন্তঃপ্রজন্ম সংহতি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করা হচ্ছে তখন ইয়ুথনেট তরুনদের দক্ষতা ও তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের মাধ্যমে পৃথিবীকে বদলে দিতে চায়।
ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার- হিউম্যানিটারিয়ান রেসপন্স ও রেজিলিয়েন্স মইন উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, এবারের বন্যায় ৯ টি জেলার ৭.২ মিলিয়ন মানুষ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা ও পুর্নবাসন করতে যে পরিমাণ অর্থায়ন দরকার সেই অনুযায়ী অর্থায়ন মিলছে না। আর যে অর্থায়ন হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় অনেক অপ্রতুল এবং অনেক ক্ষেত্রে তা ১০ শতাংশের নিচে। তাই সরকার, উন্নয়ন সংস্থা এবং যুব সংগঠন সবাই সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সিলেটে শুধু একবার নয় একই সময়ে তিন বার আক্রান্ত করেছে। বাংলাদেশ দুযোর্গপ্রবণ দেশ হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংখ্যা ও মাত্রা দুটোই বেড়েছে। যেমন কুড়িগ্রামে, যেভাবে বন্যা প্রতিনিয়ত দেখা দিচ্ছে এর সাথে রয়েছে আবার শীতের প্রকোপ। তাই জলবায়ু পরিবর্তনকে এখন আর উপেক্ষা করার সুযোগ নেই এবং এর প্রভাবই হচ্ছে এই মানবিক সংকটের গোড়ার কারন। মানবিক সংকট মোকাবিলায় সরকার ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের রেসপন্স কর্মসূচিতে যুব স্বেচ্ছাসেবক ও সংগঠনের সম্পৃক্ততা বাড়ালে দ্রুত সঠিক সময়ে সঠিক মানুষদের সঠিক সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবদের অবদানের কারনে অর্থ সাশ্রয় ঘটবে যা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা প্রদান করা যাবে।
ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের জাতীয় সমন্বয়ক শাকিলা ইসলাম বলেন, নারী ও কিশোরীর বহুমাত্রিক ভূমিকা রয়েছে। আমরা শুধু সবচেয়ে বিপদাপন্নই নই, সংকট মোকাবিলায়ও আমরা নেতৃত্ব স্থানীয় পর্যায়ে রয়েছি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট রোধে ও মোকাবিলায় আমরা যে শক্তিশালী ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে এই বিশ্বাস রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের বিবেচনায় রেখে এ-সংক্রান্ত নীতি গ্রহণ করতে হবে। নারীকে জলবায়ু এবং মানবিক সংকট মোকাবিলায় যত বেশি সংযুক্ত করা যাবে, আমরা তত বেশি লাভবান হবো। কারণ নারীরা ব্যক্তিগত ঝুঁকি ও নাজুকতার মধ্যেও দুর্যোগকালীন তার দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করে যান। তবে তাদের জন্য একটি নিরাপদ নিশ্চিত করতে হবে।