কুমিল্লার গ্রামে গ্রামে বসছে কৃষি ক্লিনিক
কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন গ্রামে বসছে লাউ কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজির পোকা দমন, সার প্রয়োগসহ নানা সমস্যার পরামর্শে কৃষি ক্লিনিক। উপসহকারি কৃষি অফিসাররা বিভিন্ন গ্রামের একটি নির্দিষ্ট স্থানে পূর্বনির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হয়ে প্রতি সপ্তাহে প্রদান করেন কৃষি পরামর্শ সেবা। মানুষের ডাক্তারদের মতো রঙিন প্রেসক্রিপসন প্যাডে কৃষকরা গ্রহণ করেন কৃষি পরামর্শ। প্রয়োজনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলার অফিসাররাও পরামর্শ প্রদান করেন। মাঝে মাঝে উপজেলা পর্যায়ের অফিসারেরাও ওই ক্লিনিকে সময় দেন। বুড়িচং উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এরকম ক্লিনিক দেখা যায়।
উত্তরপাড়া গ্রামে এমন এক কৃষি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, কেউ ধানের গাছ, কেউ মুলা, কেউ লাউ ও কুমড়া গাছের ডাটা নিয়ে এসেছেন। পোকা দমনে কি ওষুধ ব্যবহার করবেন তা জানতে চাইছেন। রঙিন প্রেসক্রিপসন প্যাডে পরামর্শ লিখে দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তা।
ওই ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা কৃষক শাহীন মিয়া জানান, উপসহকারি কৃষি অফিসার প্রতি বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় আমাদের গ্রামে বসেন। মূলত ধানের বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণ দমনে পরামর্শ নিতে আসেন অধিকাংশ কৃষক। ধান লাগানোর পর থেকে তাই লোকজনের সংখ্যা বাড়ে। তাছাড়া শাক সবজি ও ফল গাছের নানা বিষয়ে পরামর্শ নিই।
ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়নের রামপুর গ্রামে এমন এক ক্লিনিক পরিচালনা করেন উপসহকারি কৃষি অফিসার মোছা. সুলতানা ইয়াসমিন। তিনি জানান, কৃষক বেশি পরামর্শ নেয় ধানের নতুন নতুন জাত, সারের পরিমাণ, বিভিন্ন ফসলের রোগ বালাই দমন ইত্যাদি বিষয়ে। সাথে প্রাসঙ্গিক কোন প্রযুক্তি গুলো আমাদের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেই। এতে নতুন প্রযুক্তি সম্প্রসারণ আমাদের জন্য সহজ হয়েছে। যেমন, পরামর্শ নিতে আসা সকল কৃষকদের তেল জাতীয় ফসল সরিষা ও সূর্যমুখী চাষের ব্যাপারে বলা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বোরো মৌসুমে মাঝামাঝি মার্চ মাসে গ্রামে কৃষি ক্লিনিক যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে, প্রতিটি কৃষি ব্লকে একটি করে ২৭ টি ক্লিনিক চালু আছে। প্রতিদিন গড়ে ২০-৩০ জন কৃষক সেবা নেন। এখন প্রর্যন্ত ৪ হাজারের বেশি কৃষক গ্রামের কৃষি ক্লিনিকের সেবা নিয়েছেন।
গ্রামে কৃষি ক্লিনিক পরিকল্পনাকারী বুড়িচং উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার কৃষিবিদ বানিন রায় জানান, ‘না জেনে না বুঝে বিষ প্রয়োগ করবো না’ শ্লোগানকে সামনে রেখে আমরা কাজ করছি। পোকা দমনে কৃষকদের কীটনাশক ডিলার নির্ভরতা ও অনুমান নির্ভর সার প্রয়োগ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে এই কৃষি ক্লিনিক কাজ করছে। এতে বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। যেমন, নিরাপদ ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষক ও ভোক্তার স্বাস্থ্য সুরক্ষা, আমদানিকৃত সার ও কীটনাশকের অপচয় রোধ, সঠিক বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি। সেই সাথে সেবা নিতে আসা কৃষকের নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে আগ্রহও বেশি থাকে, যা প্রযুক্তি সম্প্রসারণে সহায়ক।