ওয়েস্কেল স্থাপনের সিদ্ধান্ত যশোরের ক্ষণিকা পিকনিক কর্ণার এখন চোখের আড়ালে
মালিক উজ জামান, যশোর : যশোর ঐতিহ্যবাহী ক্ষণিকা পিকনিক কর্নার হারিয়ে যাচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এখানে স্থাপন করছে ওয়েস্কেল (যানবাহনের ওজন মাপার যন্ত্র)। ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় দশ বিঘা জমিতে এ স্থাপনা নির্মাণ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ঢাকার স্পেকট্রা কনস্ট্রাশন।
ক্ষণিকায় বিনোদন ও জীব বৈচিত্র রক্ষায় ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। তারা এখানে ওয়েস্কেল নির্মাণ না করে অন্যত্র স্থাপনের দাবিতে স্মারকলিপিসহ নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে সরকার দেশের সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহনে অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে চলাচলরোধে কতিপয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যাতে সড়ক সুরক্ষিত থাকে। ট্রাক ও কার্ভাডভ্যানে অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে চলাচলে অল্প সময়ে সড়ক ভেঙে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দেশের সড়কগুলো ১৫ থেকে ২০ টন লোড বহন উপযোগী করে নির্মিত হয়। কিন্তু বর্তমানে ট্রাক ও কার্ভাড ভ্যান ৪০ থেকে ৫০ টন মালামাল বোঝাই করে চলাচল করে থাকে। এতে সড়কগুলো নির্মাণের পর দ্রুততম সময়ে নষ্ট হয়ে যায়। এরই প্রেক্ষিতে সরকার সারাদেশের মহাসড়কগুলোতে ২৮টি ওয়েস্কেল (যানবাহনের ওজন মাপার যন্ত্র) বসানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যেটির একটি নির্মিত হচ্ছে যশোর-খুলনা মহাসড়কের রামনগর ক্ষণিকা পিকনিক কর্নারে।
এ জমি গত ৬ মাস আগে সড়ক ও সেতু বিভাগের সচিব সরেজমিনে পরিদর্শনে এসে নির্ধারণ করে যান। এরই প্রেক্ষিতে ক্ষণিকার সাড়ে তিন একর (প্রায় দশ বিঘা) জমি চিহিৃত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জমিটি যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ ঢাকার ওয়েস্কেলের প্রজেক্ট ডিরেক্টরের হাতে বুঝে দিয়েছেন। এতে ক্ষণিকার প্রায় অর্ধেক জমি চলে যাচ্ছে ওয়েস্কেল প্রকল্পে। বাকি অর্ধেকে থাকছে ২৪ বিঘা আয়তনের দীঘি ও ফাঁকা স্থান। ফলে মাধ্যমে ইতিহাসের পথে ধাবিত হচ্ছে রামনগরে অবস্থিত ক্ষণিকা পিকনিক কর্নার। আজ হতে প্রায় ৬০০ বছর আগে দরবেশ খান জাহান আলী ঝিনাইদহের বারবাজার হতে মুড়লী হয়ে বাগেরহাটে যাত্রা পথে দীঘিটি খনন করেন। ৫৬ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত রাজারহাটের এই পিকনিক কর্ণারটি ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু বিশাল আয়তনের এই বিনোদন কেন্দ্র অনেক বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায়। এক সময় রাজারহাটের পিকনিক কর্ণারে পিকনিক করতে মানুষ দুর দুরান্ত থেকে দলে দলে বাস ভর্তি করে ছুটে যেতেন নির্মল হাওয়ায় চিত্তবিনোদনের জন্য। দক্ষিণ পাড়ের ছাউনিতে বসে মানুষ আড্ডা দিত। হাসি তামশা করত অবসর সময়ে। দিঘীতে সাঁতার কাটত। বুক ভরে নির্মল হাওয়া খেত। সে এক মনোরম পরিবেশ। বড় দীঘির চারপাশে শিশু, কিশোর, যুবক-যুবতী এমনকি বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের মিলনমেলায় পরিনত হতো। পিকনিক কর্ণারের একদিকে যশোর খুলনা মহাসড়ক, আরেক দিকে রেল লাইন। মাঝখানে বিশাল এলাকা জুড়ে বাজারহাট। বাজারের অদুরে পিকনিক কর্ণার ক্ষণিকা স্থাপিত হবার সময় গোটা দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক সাড়া পড়েছিল।
বর্তমানে সেখানে নূন্যতম সেই পরিবেশ নেই্। জঙ্গলে ঢেকে গেছে। আগের মতো কেউ এখন আর পিকনিকের জন্য কিংবা চিত্তবিনোদনের জন্য আসে না এখানে। কালেভদ্রে পিকনিক কিংবা কেউ চিত্তবিনোদনের জন্য ঘুরতে গেলেও তা ক্ষণিকর মুহুর্ত। কারণ বেশিক্ষণ সেখানে অবস্থান করাটা নিরাপদ নয়, এমনকি দিনের বেলাতেও। সন্ধ্যার আগেই নিঝুমপুরীতে পরিনত হয়। কেউ সাহস করে ক্ষণিকার পাশ দিয়ে চলাচল করতেও সাহস পায় না। জানা গেছে ক্ষণিকা পিকনিক স্পট এখন পুরোপুরি ক্রাইম স্পটে পরিনিত হয়েছে। এলাকার ডাকাত, ছিনতাইকারী, মাদকসেবী ও কলগার্লদের প্রতিদিনের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। যদিও বর্তমান অবস্থায় তাদের দৌরাত্ব কিছুটা কমেছে। তারপরেও ফেনসিডিলখোরদের আড্ডা বসে মাঝে মধ্যে।
‘ক্ষণিকা’ ছিল যশোরের অন্যতম চিত্তবিনোদনের স্থান। গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি ব্যবহার উপোযোগী করার কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ বেসরকারী উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত যশোর শহরতলী বাহাদুরপুরের জেস গার্ডেন ও সেনানিবাস এলাকার বিনোদিয়া পার্ক ঠিকই লাভজনক হয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র উন্নত ব্যবস্থাপনার কারণে ক্ষনিকার আজ এ আবস্থা।