বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘প্রতিবেশী কূটনীতির’ রোল মডেল মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার দুপুরে হায়দ্রাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে দেওয়া প্রেস বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। যৌথ বিবৃতির আগে দুই নেতার একান্ত বৈঠক এবং দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়।
যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ ও ভারত বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চেতনায় দুই দেশ অনেকগুলো অমীমাংসিত ইস্যু সমাধান করেছে।
তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তিসহ অন্যান্য সকল অমীমাংসিত ইস্যুগুলো দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং নিকটতম প্রতিবেশী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৫০ বছরে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব তৈরির মাধ্যমে দুই দেশ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ক্রমবর্ধমান বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ করছে।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে এক সঙ্গে কাজ করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এক মত হওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে এবং আমাদের দুই দেশ এবং আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে এক মত হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি বাংলাদেশ এবং ভারত অংশীদার হিসেবে এক সঙ্গে কাজ করতে পারে। তবে তা শুধু দুই দেশের জন্যই নয় সমগ্র অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ৫৪টি অভিন্ন নদী এবং চার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত বেষ্টিত বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশ তাদের জনগণের সম্মিলিত কল্যাণে বদ্ধপরিকর।
ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বছর উপলক্ষে সারা বছর ব্যাপী আয়োজিত ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ (‘Azadi Ka Amrit Mahotsav’) এর সফল সমাপ্তির জন্য ভারতকে অভিনন্দন জানান।
দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যেকার দ্বিপাক্ষিক বৈঠককে আরেকটি ‘ফলপ্রসু আলোচনা’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করে বলেন, এই বৈঠকের ফলাফল দুই দেশের জনগণকে উপকৃত করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার চেতনা নিয়ে আমরা বৈঠকটি করেছি। সামনের দিনগুলোতে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক ইস্যুগুলো আরও সামনে এগিয়ে নিতে বৈঠকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
পারস্পরিক স্বার্থে দুই দেশের মধ্যেকার প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন এবং পারস্পরিক অগ্রাধিকারগুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কানেকটিভিটি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, সীমান্ত এবং ঋণ সুবিধার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সরকার ও জনগণের অমূল্য ত্যাগের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে বাংলাদেশ-ভারত ইতিহাস, সংস্কৃতি, পারস্পরিক আস্থা ও সম্মান, দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং অব্যাহত সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।
নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, এটি আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গতি প্রদান করেছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার পর হায়দ্রাবাদ হাউজে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অভ্যর্থনা জানান।
ফটোসেশনে অংশগ্রহণের পর দুই প্রধানমন্ত্রী রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন। একান্ত বৈঠকের পর দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।
বিকালে দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে উপ-রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
সফরের দ্বিতীয় দিন সকালে দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তারপর প্রধানমন্ত্রী ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার নয়াদিল্লি আসেন প্রধানমন্ত্রী।