যশোরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ২৫০০০ কার্ডধারীর হদিস নেই
মালিক উজ জামান, যশোর : ২৫০০০ কার্ডধারীর হদিস নেই যশোরে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে হালনাগাদ তালিকায় আনুমানিক ২৫ হাজার কার্ডধারী সুবিধাভোগী বাদ পড়েছেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর চাল পাওয়ার পর কীভাবে তারা বাদ পড়েছেন সে বিষয়ে কিছুই জানেন না তারা। অনলাইনে তালিকা যাচাই করতে গিয়ে এই গরমিল ধরা পড়েছে।
যশোরের আট উপজেলার ৯৩ ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে সুবিধাভোগী রয়েছেন ১,৩৫,১৩২ জন। এরমধ্যে সদর উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে ১৮২৯০, বাঘারপাড়ার নয়টি ইউনিয়নে ৯১৬৬, অভয়নগরের আট ইউনিয়নে ১৬৪৮৪, মণিরামপুরের ১৭ ইউনিয়নে ২৩৪১৯, কেশবপুরের ১১ টি ইউনিয়নে ১২৯৮৪, ঝিকরগাছার ১১ ইউনিয়নে ২২১৭৫, চৌগাছার ১১ ইউনিয়নে ১৪৯৯৭ ও শার্শার ১১ ইউনিয়নের ১৭৬১৭ জন রয়েছেন। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডু জানান, বর্তমানে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের তালিকা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে যাচাই করা হচ্ছে। অনলাইন তালিকার সাথে সুবিধাভোগীর কার্ড, তার এবং স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল ফোনে এই যাচাই চলছে। গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সদর উপজেলায় ১৪২৭৪, বাঘারপাড়ায় ৭৮৩৩, অভয়নগরে ১৪২০৫, মণিরামপুরে ১৫১১১, কেশবপুরে ১০৮২৫, ঝিকরগাছায় ১৭৫৫৪, চৌগাছায় ১১৮৩৭ ও শার্শায় ১৪০১৬ জনের কার্ড যাচাই সম্পন্ন হয়। যদিও ৩১ আগস্টের মধ্যে সকল কার্ড যাচাইয়ের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সময়সীমা তুলে দেয়া হয়েছে। অব্যাহত রয়েছে যাচাই কার্যক্রম।
বিভিন্ন ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে জানাগেছে, অনলাইনে আপলোড করা তালিকায় ২০১৬ সাল থেকে চাল পাওয়া অনেক নাম নেই। সূত্র বলছে, এক লাখ ৩৫ হাজার সুবিধাভোগীর মধ্যে ২৫ হাজারের মতো হদিস নেই। এরমধ্যে প্রায় সাত হাজারের নামের অমিল। এর বাইরে শতাধিক সুবিধাভোগী মারা গেছেন। বাকিরা তাদের কার্ড যাচাই করেনা। যারা একেবারে আসবে না তা ‘ভুয়া’ বলে যাচাইকারীদের ধারনা। খাদ্য কর্মকর্তাদেরও একই অভিমত। তারা জানান, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যখন তালিকা করে পাঠানো হয় তখন দুনম্বরি হয়েছে। এ কারণে ওইসব সুবিধাভোগীর যাচাই কার্যক্রমে অন্তভূক্তির সুযোগ নেই। বর্তমানে অনলাইনে যে তালিকা যাচাই করা হচ্ছে সেখানেও ঘাপলা। ২০১৬ সালে করা তালিকায় সুবিধাভোগীর নামের বিপরীতে যে পাশ বই ইস্যু হয় সেই বই এখন অন্য নামে। আরবপুর ইউনিয়নে এ ধরনের কয়েকটি ঘটনা ধরা পড়েছে। এই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একজন সুবিধাভোগীর নাম সাহেব আলী। তার পাশ বই নম্বর ছিল ৬০৩। তিনি টানা পাঁচ বছর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল তোলেন। কিন্তু বর্তমান অনলাইন তালিকায় ৬০৩ নম্বরে বিল্লাল নামে একব্যক্তির নাম। ফলে, সুবিধাভোগী থেকে সাহেব আলী বাদ। একই ওয়ার্ডের ৫০৯ নম্বর পাশ বই আগে রমজান সরদারের নামে ছিল। বইটি এখন আঞ্জুয়ারা বেগমের নামে। রুস্তম আলী সরদারের ছিল ৪৪৩ নম্বর পাশ বই। হালনাগাদ তালিকায় রুস্তম আলীর স্থলে নাম আসমা আক্তারের। ৯০১ নম্বর পাশ বই ছিল রঘুরামপুরের রাবেয়া বেগমের নামে। তা এখন সুজলপুরের বিল্লাল নামে। এমন অবস্থা প্রতি ইউনিয়নে।
একজনের নামের জায়গায় আরেকজনের নাম কীভাবে হলো-এমন প্রশ্নের উত্তরে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডু জানান, হালনাগাদ তালিকায় চেয়ারম্যান-মেম্বাররা কিছু নাম বাদ দিয়ে নতুন করে তালিকা করেছেন। যে কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে দুই ইউনিয়ন থেকে অভিযোগ এসেছে। সেখানে নাকি দুঃস্থদের বাদ দিয়ে সচ্ছলদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।