রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রবিবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। জানা গেছে, উচ্চরক্তচাপসহ বার্ধক্যজনিত সমস্যা নিয়ে কিছু দিন আগে সিএমএইচে ভর্তি হন তিনি। বেশ কয়েক বছর ধরেই অসুস্থ ছিলেন সাজেদা চৌধুরী।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১৯৫৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ১৯৬৯–১৯৭৫ সময়কালে তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে কলকাতা গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে ফরিদপুরে গভীর শোক নেমে এসেছে। তার নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুর-২ আসন ফরিদপুরের নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা এবং সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।
জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭০ এর নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনেও জয়লাভ করেন। ১৯৯১ এর নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে টেকনোক্র্যাট কোটায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়।
২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি জাতীয় সংসদের উপনেতা হয়ে পরপর তিনবারের গঠিত জাতীয় সংসদের এ পদ অলংকৃত করেন।
১৯৩৫ সালের ৮ মে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। তাঁর পৈত্রিক নিবাস ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ শাহ হামিদ উল্লাহ এবং মাতা সৈয়দা আছিয়া খাতুন। সাজেদা চৌধুরী তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর স্বামী গোলাম আকবর চৌধুরী ২০১৫ সালের নভেম্বরে মারা যান।
১৯৭২-১৯৭৫ সময়কালে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালক, ১৯৭২-১৯৭৬ সময়কালে বাংলাদেশ গার্ল গাইডের ন্যাশনাল কমিশনার এবং ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার পর সংকটময় মুহূর্তে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৬ সালে সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এর আগে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।
১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন সাজেদা চৌধুরী।
আজ সোমবার বেলা ১১ টায় ফরিদপুরের নগরকান্দার এম. এন অ্যাকাডেমি মাঠে সাজেদা চৌধুরীর প্রথম জানাজার বিকাল ৩টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত জাতীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধার জন্য রাখা হবে। পরে বাদ আসর বায়তুল মোকাররম মসজিদ দ্বিতীয় জানাজা শেষে রাজধানীর বনানী করবস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে সাজেদা চৌধুরীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তার (পিও) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।