অভয়নগরে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ‘আউট অব চিলড্রেন এডুকেশন’ কর্মসূচিতে ব্যাপক অনিয়ম
মালিক উজ জামান, যশোর : যশোরের অভয়নগর উপজেলায় দিশা সমাজকল্যাণ সংস্থার দায়িত্বে অবহেলায় ব্যর্থ হতে চলেছে যশোর জেলার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ‘আউট অব চিলড্রেন এডুকেশন’ কর্মসূচি।
প্রাথমিক স্কুল থেকে ঝরে পড়া ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনার জন্য সরকার যশোর জেলার জন্য ২০২০ সালে স্থানীয় এন.জি.ও দিশা সমাজ কল্যান সংস্থার সাথে চুক্তি করে, যা ৩০ জুন ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু করোনা মহামারীর জন্য প্রকল্প পিছিয়ে দেওয়া হয়। গত ৩০ নভেম্বর ২০২১ ইং তারিখে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর এক চিঠিতে ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ইং তারিখের মধ্যে শিখনকেন্দ্র চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়। ঐ চিঠিতে বিভিন্ন নির্দেশনার পাশাপাশি বলা হয়েছে, ইনডিপেনডেন্ট ভেরিফিকেশন এজেন্সি (আইভিএ) কর্তৃক শিক্ষার্থীর যথার্থতা, শিক্ষক, সিএমসি সদস্য, শিখনকেন্দ্র ও শিক্ষা উপকরণ যাচাই করা হবে। আইভিএ কর্তৃক দাখিলকৃত মূল্যায়ন প্রতিবেদনে প্রাপ্ত প্রকৃত শিক্ষার্থী সংখ্যার ভিত্তিতে বাস্তবিক কার্যক্রম সম্পাদনের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ ছাড় করা হবে। কিন্তু অভয়নগরের মাঠ পর্যায়ে যশোরের দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থার বিভিন্ন দায়িত্বহীন কর্মকান্ডের জন্য সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ ব্যর্থ হতে চলেছে। এই উপজেলায় এ ধারার ৭০ টি স্কুল রয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার দিঘীরপাড় রাঙ্গারহাট সর্দার পাড়ায় কেন্দ্রের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এ সময় শিক্ষিকা রেখা পারভীন জানান, নিয়োগের সময় আমাদের বেতন ও শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপকরণ, উপবৃত্তি, স্কুল ড্রেস, ঘর ভাড়া দেওয়ার কথা ছিল তার কোনটি আজও দেয়নি। স্কুলের জন্য ফ্যান না দেওয়ায় বাচ্চারা এই গরমে বসতে চায় না। তাছাড়া বেতন না দেওয়ায় পাঠদানের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। একই চিত্র দেখা গেছে মথুরাপুর উত্তর ২৬৪ নং, মধ্যপুর মোহাম্মাদীয়া শামসুল উলুম হাফেজিয়া মাদ্রাসা, সরখোলা ২৯৮ নং, নওয়াপাড়া বুইকরা সরকারি কবরস্থানের মোড় সংলগ্ন ২৯৭ নং কেন্দ্রে। ভাটপাড়া ২৬৯ নং শিখন কেন্দ্রে শিক্ষার্থী দেখা গেলেও শিক্ষার্থীরা জানায় শিক্ষিকা শিল্পী রানী বিশ্বাস কেন্দ্রের আড়ালে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। ৪ সেপ্টেম্বর দেখা যায় বুইকারা পালপাড়া কেন্দ্র বন্ধ। তা অনেক দিন বন্ধ রয়েছে কেন্দ্রের শিক্ষিকা শুক্লা বিশ্বাস পায়েল সপরিবারে ভারতে অবস্থান করছেন। দিশা এন.জি.ও’র এই শিক্ষা প্রকল্পে সম্পৃক্ত উপজেলার কয়েক শিক্ষক জানান চুক্তি অনুযায়ী বেতন, ঘরভাড়া, শিক্ষা উপকরণ, উপবৃত্তি না দেওয়া পর্যন্ত কেন্দ্র বন্ধ রাখার বিষয়ে সকল শিক্ষক সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৪ আগস্ট উপজেলা প্রোগ্রাম ম্যানেজারকে জানায়। পরে এন.জি.ও থেকে সেপ্টেম্বর মাসে সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়। দিশা সমাজ কল্যান সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রহিমা সুলতানা অভয়নগরের কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, সরকারের কাছ থেকে এখনও অর্থ ছাড় করতে না পারায় সংস্থায় কর্মরত সুপারভাইজার, শিক্ষক, শিক্ষিকাদের বেতন, ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা উপকরণসহ বৃত্তির টাকা দিতে না পারায় কার্যক্রম কিছুটা শ্লথ। আশা করছি চলতি সেপ্টেম্বরেই সকল সমস্যার সমাধান হবে। তিনি আরও বলেন, এক সময় সাংবাদিকরা আমার নামে অনেক অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে করেছিলেন, আমার নামে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েও কিছু করতে পারেনি।
উপানুষ্টানিক শিক্ষা ব্যুরো যশোরের সহকারি পরিচালক বজলুর রশিদ বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে আমি সহ জেলা প্রশাসক, এ.ডি.সি (শিক্ষা ও আইসিটি) ও উপজেলা পর্যায়ে ইউ.এন.ও মহোদয় এই কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত আছি। শিক্ষকরা বেতন না পাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রমে অবহেলা করছেন। আশা করছি অল্প কিছুদিনে কার্যক্রমে গতিশীলতা আসবে।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন জানান, এটি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর একটি প্রকল্প যা দিশা সমাজকল্যান সংস্থা বাস্তবায়ন করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে তাদের শিক্ষক নির্বাচন প্যানেল এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষনের বিষয়ে সহযোগিতা করেছি। দিশা এনজিও তাদের শিক্ষা কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করছে কিনা সে বিষয়ে অবগত নই, এ বিষয়ে দিশা সংস্থা ও উপানুষ্টানিক শিক্ষা ব্যুরো ভালো বলতে পারবেন।