বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার অনন্য মানবতায় প্রেসক্লাব যশোর
মালিক উজ জমান, যশোর : রাজনীতিক, সুবিধা বঞ্চিতজন, নির্যাতিত অসহায় মানুষের অভয়। আনুষ্ঠানিক সহযোগিতার সূতিকাগার। পরম বন্ধু। বিপদে সদা পাশে। এসব গুলো গুনের অধিকারী প্রেসক্লাব যশোর ও তার আঙিনায় থাকা সংবাদ কর্মী সন্তান। বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা, আওয়ামীলীগের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে পেসক্লাব যশোর। সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন ও সম্পাদক এস এম তৌহিদুর রহমানের নেতৃত্বে নির্বাহী কমিটি রয়েছেন উন্নয়ন ও সহযোগিতার সেই ধারায়।
পূর্ব পাকিস্তানের ২য় প্রেসক্লাব ‘যশোর প্রেসক্লাব’। ১৯৫৮ সালে হাতেগোনা যে ক’জন সংবাদকর্মী যশোরে অবস্থান করে সাংবাদিকতা করতেন, তাদের উদ্যোগে একটি আবাসিক হোটেলে বসে যশোর প্রেসক্লাব গঠিত হয়। সে সময় পূর্ববঙ্গে শুধুমাত্র ঢাকায় প্রেসক্লাব ছিল। পরে পর্যায়ক্রমে ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে প্রেসক্লাব হয়। তবে যশোর প্রেসক্লাব বেশিদিন শুরুর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারেনি কিছু দুর্বলতায়। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে যশোরের বেশ কয়েক সাংবাদিক নতুন করে প্রেসক্লাব গঠনে উদ্যোগী হন। এবার নামকরণ হয় ‘প্রেসক্লাব যশোর’। নির্বাহী কমিটি জেলা প্রশাসক এনাম আহমেদ চৌধুরীর কাছে প্রেসক্লাবের জন্য সরকারি জায়গা বরাদ্দের আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক সিভিল কোর্টের পাশে সরকারি ১৮ শতক জমি বরাদ্দ দেন প্রেসক্লাবের অনুকূলে। কিছু দিন পর তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যশোর সফরে আসেন। প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে তাদের নানা সমস্যার কথা জানান। তিনি তাঁর স্বভাব সুলভ উদারতায় নগদ ১০,০০০ টাকা অনুদান দেন। তদানিন্তন জেলা প্রশাসক আখতার আলীকে নামমাত্র মূল্যে প্রেসক্লাবের জমি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেয়ার নির্দেশ দেন। অবিলম্বে কার্যকর হয় নির্দেশ। বরাদ্দ দেয়া জমিটিই মুজিব সড়কে উজ্বল যশোরের সাংবাদিকদের আদরের প্রেসক্লাব যশোর।
জরাজীর্ণ ভবনে স্থানীয় সাংবাদিকরা মানুষের সুখ-দুঃখ, উন্নয়-বঞ্চনার কথা লিখেছেন বহু বছর। পরে বঙ্গবন্ধু-তনয়া শেখ হাসিনার ১ম শাসনামলে ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী আসেন যশোরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রেসক্লাব যশোর প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা জানেন এবং এর উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন প্রেসক্লাবের উন্নয়নে নগদ ৫ লাখ টাকা অনুদান দেন। প্রেসক্লাব নগদ ১ লাখ টাকা অনুদান পায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে। এসব অর্থের সঙ্গে স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে সংগৃহীত টাকা দিয়ে ২০০৬ সালে প্রেসক্লাবের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। পরে ২০০৮ সালে তত্তাবধায়ক সরকার প্রেসক্লাব যশোরের ভবন নির্মাণের জন্য ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করে। জেলা পরিষদের মাধ্যমে এই নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১০ সালে। তবে সরকারি বরাদ্দকৃত টাকায় নবনির্মিত ভবন সম্পূর্ন ব্যবহারোপযোগী হয়নি। ভবন উপযোগী করতে একরাম-উদ-দ্দৌলা ও আহসান কবীরের নেতৃত্বাধীন কার্যনির্বাহী কমিটি উদ্যোগী হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর প্রফেসর ড. আতিউর রহমান এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তার প্রত্যাশায় প্রাইম ব্যাংক লি: প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারোপযোগী করতে নগদ পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দেয়। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লি: ও ন্যাশনাল ব্যাংক লি: প্রেসক্লাব যশোরের দুটি রুম সজ্জিত করার উদ্যোগ নেয়। এছাড়া স্থানীয় ধনাঢ়্য, দানশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তাদের দান-অনুদানে যশোরের আধুনিক ও সুসজ্জিত ভবন এখন প্রেসক্লাব যশোর। রয়েছে ক্লাবের নিজস্ব ওয়েবসাইট। দেশের কোনো প্রেসক্লাবের প্রথম ওয়েবসাইট তা। স্থাপিত ইনফরমেশন সেন্টার ও লাইব্রেরি চাহিদা মেটাচ্ছে স্থানীয় মফস্বল তবু যশোরকে বিবেচনা করা হয় সংবাদপত্রের শহর হিসেবে। এই শহর থেকে প্রকাশিত হয় ১৩ দৈনিক পত্রিকা। ঢাকার পরে অনলাইন পত্রিকার সুতিকাগার বলা হয় যশোর প্রেসক্লাব কে। জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা ওয়ান নিউজ বিডি.কম, যশোর ২৪ রেডিও, যশোর খবর, যশোরনিউজ২৪, দৈনিক গ্রামের কাগজ, দৈনিক লোকসমাজ, স্বাধীন আলো, খানজাহান আলী ২৪, ম্যাগপাই নিউজ, যশোরের আলো নিয়মিত প্রকাশ হয়। প্রেসক্লাব যশোরে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন যশোর-৩ সদর আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ ও জেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। সদস্যরা তাদের সহায়তায় খুশি।
প্রকাশিত হচ্ছে কিছু সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা। রাজধানী থেকে প্রকাশিত প্রায় সব দৈনিকের অফিস এখানে। এছাড়া টেলিভিশন চ্যানেল, ওয়েবভিত্তিক পত্রিকা, নিউজ এজেন্সি এবং খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকার সংবাদদাতারা কাজ করেন যশোরে। যশোর শহরে এই মুহূর্তে সাংবাদিকের সংখ্যা প্রায় ৪০০। এর মধ্যে প্রেসক্লাব যশোরের সদস্য ১১১ জন। প্রেসক্লাবের সদস্য পদে আবেদন রয়েছে বেশ কিছু। তবে সদস্য না হলেও সংবাদ কর্মী হলেই সহযোগিতা নেন অবলীলায়। সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ ও প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীও যশোর প্রেসক্লাবে এসে বঙ্গবন্ধুর ছবি না দেখে হতাশা প্রকাশ করেন। তবে তা অতীত। এখন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন তুখোড় বাংলাদেশ গঠনের চেতনায় উজ্জীবিত প্রেসক্লাব যশোর ও তার সন্তান সদস্যরা।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময় ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যশোরে আসেন। তখন সার্কিট হাউজে অবস্থানকালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যান যশোর প্রেসক্লাবের তৎকালীন সভাপতি এ্যাড. তৌহিদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ঠিকানার সম্পাদক আবুল হোসেন ও জমির আহমেদ টুন। সাংবাদিক নেতারা তাদের নিজস্ব কোনো বসার স্থান না থাকার কথা জানালে বঙ্গবন্ধু যশোরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আফসার আলীকে আজকের প্রেসক্লাবের স্থান প্রেসক্লাবের নামে বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ দলীয় নেতারাও বিভিন্ন সময় প্রেসক্লাবের উন্নয়নে সহায়তা করেছেন।
আশার কথা এই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অবদান মূল্যায়ন হচ্ছে প্রেসক্লাব যশোরে। ১৫ আগস্ট পালন করা হচ্ছে জাতীয় শোক দিবস। সরকারি বিভিন্ন দিবসে থাকছে নেতৃত্বের অংশগ্রহন। থাকছে নিয়মিত অসহায় মানুষদের সহযোগীতা। রয়েছে ভূক্তভোগীদের জন্য সহযোগিতার হাত সার্বক্ষণিক খোলা।