ছাত্রলীগের গ্রুপ-উপগ্রুপের কোন্দলে উত্তপ্ত এমএম কলেজ
মালিক উজ জামান, যশোর : ক্যাম্পাসে মাদকসেবীদের আড্ডাকে কেন্দ্র করে আসাদ হলে মারপিটের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে যশোরের সরকারি এমএম কলেজ। ছাত্রলীগের দুইপক্ষের জোরালো অবস্থানে যেকোনো সময় বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা সাধারণ শিক্ষার্থীদের। হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক পক্ষ ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। মূলত ছাত্রলীগের এক পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে আসাদ হলে হামলার ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় কলেজে সাব্বির, নিঝুম, রিয়াদ, রিজভি, মেহেদী, মাহাবুর, রায়হান, পারভেজসহ কয়েকজন মহিলা হোস্টেলের সামনে মাদকের আড্ডা বসায়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় তারা নিয়মিত গাঁজা সেবন করে এই অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এরা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান তৌহিদের অনুসারী। এদের অধিকাংশই বহিরাগত। পাশেই আসাদ হলের ছাত্রলীগ কর্মী মামুনুর রশিদ রনি তার এক মেয়ে বন্ধুর সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাদকসেবীরা রনিকে শাসাতে গেলে রনি ও তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। যদিও কয়েক মিনিটে সিনিয়রদের হস্তক্ষেপে সেটি মীমাংসা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে রনিকে মারতে বহিরাগতদের নিয়ে ১৫-২০ জনের দল হকিস্টিক নিয়ে আসাদ হলে প্রবেশ করে। সেখানে রনিকে না পেয়ে মাস্টার্সের ছাত্র পিয়াল, অনার্স ৩য় বর্ষের রকি ও ৪র্থ বর্ষের পল্লবকে মেরে আহত করে। এসময় আগতরা বিভিন্ন রুমে আসবাবপত্র ভাংচুর করে।
এ ঘটনা পুঁজি করে ১০ অক্টোবর জেলা যুবলীগের এক নেতার অনুসারী ছাত্রলীগের আরেক গ্রুপ শেখ ইব্রাহিম সাগর ও ওহিদুল ইসলাম রাব্বির নেতৃত্বে তৌহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে। এ গ্রুপটি মূলত কলেজ ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ বর্তমান কমিটি বিল্প্তু ও নতুন নেতৃত্ব চায়। এ কারণে তৌহিদের অনুসারী ও আসাদ হলের ছাত্রদের কোন্দলের ঘটনাকে পুঁজি করে ফায়দা লুটতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সাগর-রাব্বির নেতৃত্বাধীন গ্রুপটি। তবে, এ গ্রুপের বেশিরভাগই অছাত্র ও বহিরাগত দাবি অপর গ্রুপের। অন্যদিকে,হামলার ঘটনায় কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান তৌহিদ জড়িত না দাবি করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করেন মামুনুর রশিদ রনি। তার দাবি, বহিরাতগতরা হলে হামলা করে কলেজ ছাত্রলীগ নেতার উপর দোষ চাপিয়ে ছাত্রলীগকে কলুষিত করার অপচেষ্টা করছে।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী জানান, কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও ঠিকাদারী কাজের অর্থ ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী ও কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান তৌহিদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের হস্তক্ষেপে সেটি কখনো প্রকাশ্যে রূপ নেয়নি। এমএম কলেজ ছাত্রলীগে বর্তমানে দুইটি গ্রুপ রয়েছে। যার একটি গ্রুপের মধ্যে উপগ্রুপ তৈরি হয়েছে। কলেজ ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক উজ্জ্বল, সৌরভ ভট্টাচার্য্য ও মামুনুর রশিদ রনির নেতৃত্বে ওই উপগ্রুপের নেতাকর্মীরা আসাদ হলে থাকে। যদিও উজ্জ্বল মাস্টার্স শেষ করায় তার আর ছাত্রত্ব নেই। এই উপগ্রুপের সাথে মাঝেমধ্যেই ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমানের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে কখনো কখনো বিভিন্ন কলহের ঘটনা ঘটে। এর বাইরে জেলা যুবলীগের এক নেতার অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীরা বর্তমানে কলেজ ক্যাম্পাসে যাওয়া আসা করছে। তৌহিদ অনুসারী ও আসাদ হলের ছাত্রলীগের কোন্দলের জের ধরে জেলা যুবলীগ নেতার অনুসারী ওইপক্ষটি ফায়দা নিতে বহিরাগতদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে। তারা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করে নতুন নেতৃত্ব তৈরির মাধ্যমে মূলত ক্যাম্পাস ও আসাদ হলে প্রভাব বিস্তার করতে চায়। এই পক্ষটি বেশি প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করলেও এমএম কলেজে যেকোনো সময় বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা ও হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করেন ছাত্রলীগের কিছু কর্মী।
কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান তৌহিদ দাবি করেন, এমএম কলেজে ছাত্রলীগের কোনো গ্রুপ নেই। আসাদ হলের ছাত্রদের সাথে কিছু বহিরাগতের সামান্য কলহের সৃষ্টি হয়। তিনি খবর পেয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে সিনিয়রদের পাঠিয়ে মীমাংসাও করেন। কিন্তু পরবর্তীতে বহিরাগতরা পরিবেশ উত্তপ্ত করতে আসাদ হলে হামলা করে। একটি কুচক্রী মহল ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে, যারা বিক্ষোভ করছে তাদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, অছাত্ররা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত চাইলে তা হতে পারে না। এমএম কলেজ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নতুন কমিটি চাইলে কেন্দ্রীয় এবং জেলা ছাত্রলীগ সেটি বিবেচনা করতে পারে বলে জানান তিনি।