শীর্ষ নিউজ

২৩ অক্টোবর মুক্তিকামী ৫ সূর্য সন্তানের শহীদ দিবস


মালিক উজ জামান, যশোর : ২৩ অক্টোবর। ৫ সূর্য সন্তানের শহীদ দিবস। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ঠাঁই মেলেনি যশোরের শহীদ ৫ সূর্য সন্তান আসাদুজ্জামান আসাদ, আশিকুর রহমান তোজো, সিরাজুল ইসলাম শান্তি, আহসান উদ্দীন মানিক ও ফজলুর রহমান ফজলুর।
১৯৭১ সালের ২৩ অক্টোবর উপজেলার চিনাটোলা বাজারের হরিহর নদীর তীরে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁিচয়ে লবণ লাগিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতনের পরে রাজাকাররা এই ৫ সূর্য সন্তানকে ব্রাসফায়ারে হত্যা করে। কিন্তু শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে রাষ্ট্রীয়ভাবে আজও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ওই নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শী চিনাটোলা বাজারে লেবার সরদার শ্যামাপদ নাথ (৭৭)। জানান, ওই সময় তিনি চিনাটোলা বাজারে মুটেগিরি (শ্রমিক) করতেন। ওই দিন রাজাকারদের নির্দেশে হরিহর নদীর ওপর ব্রীজ পাহারারত অবস্থায় দেখতে পান চোখ বেঁধে রাত ৮টার দিকে মুক্তিসেনা আসাদ, তোজো, শান্তি, মানিক ও ফজলুকে ব্রীজের পাশে আনা হয়। তার কিছুক্ষণ পর রাজাকার কমান্ডারের বাঁশি বেঁজে উঠার সাথে সাথে গর্জে ওঠে রাইফেল। মুহূর্তের মধ্যে পাঁচ তরতাজা যুবকের নিথরদেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
তৎকালিন ছাত্র ইউনিয়নের দক্ষিণবঙ্গের নেতা নূর মোহাম্মদের নেতৃত্বে এই ৫ জন অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ভবদহ এলাকার কপালিয়ার শানতলায় যুদ্ধ শেষে সাতক্ষীরায় হয়ে যশোর যাওয়ার পথে আসাদ অসুস্থ হয়ে পড়লে উপজেলার রতেœশ্বরপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের বাড়িতে আশ্রয় নিলে স্থানীয় রাজাকার কমান্ডার আব্দুল মালেক ডাক্তারের নেতৃত্বে মেহের জল্লাদ, ইসহাক, আব্দুল মজিদ, আফসারসহ বেশ কয়েকজন রাজাকার ১৯৭১ সালের ২৩ অক্টোবর তাদেরকে আটক করে চোখ বেঁধে চিনাটোলা বাজারের পূর্বপাশে হরিহরনদীর ব্রীজে নেয়। সেখানে নিয়ে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের শরীরে লবণ দেয়াসহ তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়।
শহীদ আসাদুজ্জামানের ভাই যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক কর্মকর্তা শফিকুজ্জামান জানান, তার ভাইসহ ৫ শহীদ পরিবারের প্রতি শোক জানিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত চিঠিই বড় স্বীকৃতি। শুধু একটা সার্টিফিকেটের জন্য তারা জীবন উৎসর্গ করেছেন বলে তার পরিবারের কেউ বিশ্বাস করেন না। কিছু করার থাকলে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে করা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে মণিরামপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আলাউদ্দীন জানান, এই পাঁচ সূর্য সন্তান স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তাদের পরিবার ও সংগঠনের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
জেলা গণতান্ত্রীক ফ্রন্টের সহ-সম্পাদক কামরুল হক লিকু জানান, প্রতিবছর ২৩ অক্টোবর শহীদদের প্রতি বাম সংগঠনের উদ্যোগে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ কর্মসূচি নেয়া হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে আজ পর্যন্ত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সরেজমিনে দেখা যায়, অযতেœ-অবহেলায় পড়ে আছে শহীদদের সেই বধ্যভূমি। শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির পক্ষ থেকে স্বাধীনতার পর শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য বামদলের পক্ষ থেকে বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে প্রতিবছর ২৩ অক্টোবর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও তাদের জীবনী নিয়ে আলোচনা সভা করা হয়। এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ জানান, উল্লে¬¬খিত পাঁচ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাদের কবরসহ উপজেলার সকল শহীদদের স্মৃতি ও বধ্যভূমি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। কিন্ত পরবর্তী কিছু জানিনা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button