অর্থ ও বাণিজ্যচট্টগ্রাম

বিএফডিসির কথায় এফ.ভি. রূপচান্দায় ৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বিপাকে ব্যবসায়ি!


চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) পরিচালনাধীন চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দরের স্বেচ্ছাচারিতায় এফ.ভি. রূপচান্দা নামক একটি ফিশিং ট্রলার হেফাজতে নেওয়ায় প্রায় ৪ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ি আবু বক্কর ছিদ্দিক।

তিনি কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগর গ্রামের এম.এ আবু বক্কর ছিদ্দিক এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর। গত কয়েকদিন আগে তিনি  এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দরের মহাব্যবস্থাপক এর কাছে অভিযোগ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন বিনা নোটিশে এফ.ভি রুপচান্দা ট্রলারটি তাঁর কাছ থেকে নিয়ে ফেলা হয়েছে।

একই চিঠির অনুলিপি প্রেরণ করেছেন বিএফডিসির একান্ত সহকারি সচিব, পরিচালক, ব্যবস্থাপক, মৎস্য বন্দরের প্রধান হিসাব রক্ষক ও ব্যবস্থাপক প্রশাসনের কাছে। কিন্তু চিঠি প্রেরণের গত একমাস অতিবাহিত হলেও কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।

এফ.ভি. রূপচান্দা ফিশিং ট্রলারের পরিচালক আবু বক্কুর অভিযোগ করে জানান, মেসার্স পদ্মা এজেন্সির যাবতীয় বকেয়া ভাড়া পরিশোধ ও ট্রলারটি মেরামত করে সাগরে যাওয়ার উপযোগী করেছেন তিনি। পাশাপাশি বিএফডিসির যাবতীয় শর্তাবলি পূরণ করে প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি নিয়ে ট্রলারটি পরিচালনার নির্দেশও পেয়েছিলেন।

যার কারণে মেরামত কাজ সম্পন্ন, ট্রলারের বিদ্যুৎ বিল, কর্মকর্তা কর্মচারীর বেতন ভাতা, সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে খরচ ও অন্যান্য খাতে ব্যবসায়ি আবু বক্করের কোটি কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে। বিপরীতে ট্রলার সার্ভে করনের অনুমতি প্রদান, ট্রলার সমুদ্রে গমনের সিলিং অনুমতি প্রদান, ফিশিং ট্রলারে কমপ্রেসার ও রাডার স্থাপনের অনুমতি প্রদান, বেতার লাইসেন্স ফি পরিশোধ, ট্রলার ডকিং করার অনুমতি প্রদানসহ যাবতীয় বিষয়ে চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দর তখন সহযোগিতা করেন। যার সমস্ত কাগজপত্র প্রমাণ রয়েছে।

যদিও গত দুই বছর মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারণে ট্রলার সমুদ্রে গমনে প্রতিবন্ধকতা ও ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণে জনৈক ব্যবসায়ি আবু বক্করও মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হন। ট্রলারের কর্মচারীর বেতন, ব্যাংক ইন্টারেস্টসহ ট্রলার ভাড়া পরিশোধ করে আর্থিকভাবে দোটানায় পড়েন। এভাবেই প্রায় ৪ কোটি টাকারও অধিক খরচ হয়ে যায়।

এরমধ্যে গত ২১ জুলাই ট্রলারটি মৎস্য বন্দরের হেফাজতে নেওয়ার জন্য চিঠি প্রেরণ করে। চিঠি পেয়ে ভুক্তভোগি ব্যবসায়ি প্রধান কার্যালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে ৭ আগষ্ট ট্রলারটি হেফাজতে না নিতে এবং আর্থিক ক্ষতি বিবেচনায় চুক্তি সম্পাদনের অনুরোধ জানান। কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বরে ট্রলারটি সমুদ্রে গমনের অনুমতি রহিতকরণ করে ৪ অক্টোবর ট্রলারটি মৎস্য বন্দরের হেফাজতে নেওয়ার চিঠি দেন।

বিষয়টি জানার পর একাধিকবার চিঠি দিলেও মৎস্য বন্দর কতৃপক্ষ কোন প্রকার উত্তর না দিয়ে এবং কোন প্রকার দ্বিপাক্ষিক আলোচনা না করে ০৩(তিন) কার্যদিবসের মধ্যে ট্রলার হস্তান্তরে জন্য পূনরায় চিঠি প্রেরণ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ি আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন,  ‘আমি কোন অবৈধ ট্রলার পরিচালক নই। কার্যালয়ের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করেছি। আমি কর্পোরেশনের সকল নিয়ম নীতি অনুসরণ করে ট্রলারটি পরিচালনা করেছি। ট্রলারটিতে  প্রায় ৪ কোটি টাকার অধিক আর্থিক বিনিয়োগ করেছি।’

তিনি আরও জানান, ‘বেআইনি প্রক্রিয়ায় আমার কোন প্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে এফ.ভি. রূপচান্দা ট্রলারটি আমার জেটি হতে বিএফডিসির জেটিতে নিয়ে যায়। যা সম্পূর্ণ অন্যায়, বেআইনী ও ক্ষমতার অপব্যবহার। এমনকি ট্রলারে আমার লোকজনকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লোকজন নানা হুমকি প্রদান করেন। যাতে ট্রলার থেকে নেমে যায় ও আমার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ না করে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দরের মহাব্যবস্থাপক কমান্ডার (বিএন) এম আর কে জাকারিয়া বলেন, ‘এফ.ভি. রূপচান্দা ট্রলারটি বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) এর সরকারি সম্পত্তি। যে সুবাধে ট্রলারটি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে কেড়ে নেওয়া হয়নি। কারণ এখনো ওই ট্রলারে যিনি ট্রলারটি পরিচালনা করছেন তার লোকজন রয়েছে। সুতরাং বিএফডিসি যা সিদ্ধান্ত দেয়। সে অনুযায়ি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button