মালিক উজ জামান, যশোর : ২৪ নভেম্বর যশোর শামস্-উল হুদা স্টেডিয়ামে জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর যশোরে আগমনের বার্তায় শুধু যশোর নয়, গোটা দক্ষিণাঞ্চলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর যশোর ঈদগাহ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। হাতে সময় অল্প দ্রুত সব কাজ করতে তাড়াহুড়া করতে হচ্ছে। ২৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোর জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর এই জনসভা একটি মাইলফলক স্থাপন করবে বলে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ যশোর জেলা শাখার কর্নধাররা প্রস্তুতি গ্রহন করেছেন।
১৯৭২ সালের ২৬ ডিসেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যশোরের যে স্থানে জনসমুদ্রে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানেই ৫০ বছর পর ২৪ নভেম্বর জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যশোর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারন সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। দলের বর্ধিত সভায় ঘোষনা দিয়েছেন ঐদিন জনসভায় লোক সমাগম হবে পাঁচ লাখ। গ্রুপিং লবিং ভুলে সকলেই এক কাতারে মাঠে নেমেছেন।
জনসভা সামনে রেখে ইতিমধ্যে একাধিকবার শামস উল হুদা স্টেডিয়াম পরিদর্শন করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা ও মন্ত্রী। সমাবেশস্থল নিরাপদ ও নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিরাও যশোরে অবস্থান করছেন। কয়েক লাখ মানুষের অবস্থান নিশ্চিত করতে শামস্-উল হুদা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশের গ্যালারি ভেঙে আবদুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের মাঠ ও পৌর পার্কের একাংশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।
যশোর-৩ সদর আসনের এম.পি কাজী নাবিল আহমেদ। তিনি যশোর অবস্থান করে দলের প্রস্তুতি দেখছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নে সভা সমাবেশ করছেন প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় লোক সমাগম নিশ্চিত করতে। তার সাথে রয়েছেন, জিলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শাহারুল ইসলাম, কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন মিলন, সাহেদ হোসেন রিপন, যুবলীগ নেতা মঈনুদ্দিন মিঠু, লুৎফুল কবির বিজু, শহর যুবলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেবুব রহমান ম্যানসেল প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে গুরু দায়িত্বে নিরলস কাজ করছেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, যশোর-১ শার্শার সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, যশোর-২ ঝিকরগাছা-চৌগাছার এমপি নাসির উদ্দিন, যশোর-৪ বাঘারপাড়া-অভয়নগর এমপি রণজিৎ কুমার রায়সহ সকল নির্বাচিত জন প্রতিনিধি উপজেলা চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, ই্উপি চেয়ারম্যান, মেম্বর, মহিলা মেম্বররা দিন রাত পরিশ্রম করছেন।
এছাড়া জনসমাগম ও সার্বিক প্রস্তুতি দেখছেন যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, সহ সভাপতি ও পুুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব কবীর। যশোর জেলা যুবলীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম জুয়েল রয়েছেন বিভিন্ন দায়িত্বে। যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাহদ্দীন কবীর পিয়াস ও তানজিব নওশাদ পল্লব জনসভা সফল ্করতে নেতা-কর্মী নিয়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন। শহর জুড়ে পিকআপ কে নৌকায় রুপান্তরিত করে প্রচার মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। এখানে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি আসাদুজ্জামান মিঠু’র নাম সংকলিত রয়েছে। রয়েছে যশোর জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার প্রচার কার্য্যক্রম।
গত শনিবার রাতে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার। এসময় তিনি বলেন, আগামী ২৪ নভেম্বর যশোরের জনসভাই হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার করোনা পরবর্তী ঢাকার বাইরের প্রথম কোনো বৃহত্তম জনসভা। এরপর তিনি দেশব্যাপী দলীয় কার্যক্রমে অংশ নেবেন। সে কারণে যশোরের জনসভা ঐতিহাসিক হতে যাচ্ছে।
যশোর জেলা প্রশাসন, জিলা পরিষদ, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, পুলিশের জেলা অফিসের সকল কর্মকর্তা, কোতয়ালী মডেল থানা, সদর পুলিশ ফাঁড়ী পুরাতন কসবা পুলিশ ফাঁড়ী, চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ী, নুতন উপশহর পুলিশ ফাঁড়ীর সকল কর্মকর্তা কর্মচারী নিরলস পরিশ্রম করছেন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যশোর জনসভা সফল করতে। সমাবেশ স্থানে দায়িত্বরত উপ-পুলিশ পরিদর্শক এজাজুল ইসলাম।
মূল দায়িত্বে জেলা আওয়ামীলীগ ছাড়াও বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঞ্চ তৈরি ও সাজসজ্জা কমিটির আহ্বায়ক জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল মজিদ বলেন, নৌকার আদলে মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা। সেই মহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় তাবৎ দক্ষিনাঞ্চল। নৌকার আদলে বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। নৌকার পরিমাপ ১২০ ফুট বাই ৪০ ফুট। তবে স্টেজ করা হবে ৮০ ফুট বাই ৪০ ফুট। মঞ্চে ৭৬ ফুট বাই ১০ ফুট ব্যানার দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে চারুকলার শিক্ষার্থীরা ব্যানারের কাজ সম্পন্ন করেছেন। আমি সার্বক্ষণিক জনসভা স্থলে আছি।
এদিকে বিশাল জনসমাগম ও যানবাহন ব্যবস্থাপনায় প্রস্তুতি নিয়েছে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ ও ট্রাফিক বিভাগ। সূত্র জানায়, জনসভা সফল করতে আওয়ামী লীগের আটটি উপকমিটির নেতারা নানামুখী কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে ইতোমধ্যে বিশাল এই গণজমায়েতের জন্য বাস, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস মিলিয়ে পাঁচ হাজার যানবাহন আসা ও পার্কিংয়ের জন্য স্থান নির্ধারণ করেছে ট্রাফিক বিভাগ। চার হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ১০টি স্পট নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে এমপি-মন্ত্রীদের জন্য চারটি স্পট, অন্য ভিআইপিদের জন্য একটি স্পট ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের বাস, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস পার্কিংয়ের জন্য আর পাঁচটি পার্কিং এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে সীমানা বাড়ানো হবে। জনসভার দিন শহরে কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। শহরের অংশ হেঁটে সবাইকে চলাচল করতে হবে। অবশ্য হেঁটে চলাচলে একটি রোডম্যাপ করা হচ্ছে।
খুলনার রেল স্টেশনের মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার জানান, সোমবার রাতে একটি আদেশ এসেছে। তাতে বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর যশোরের জনসভা উপলক্ষ্যে আগামী ২৪ নভেম্বর সকাল ১০টায় খুলনা থেকে যশোর পর্যন্ত একটি স্পেশাল ট্রেন চলবে। ১০টি বগির এই ট্রেনটি বিকাল ৪টায় আবার যশোর থেকে খুলনায় ফিরে আসবে।
প্রধানমন্ত্রীর যশোর আগমন উপলক্ষে বিভিন্ন দাবিতে সরব হয়েছেন নাগরিক সমাজ। দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, যশোর মেডিকেল কলেজের ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমিতে সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, ভবদহ জলবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান, যশোর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিককরণ, যশোরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর স্থাপন, যশোরে সংস্কৃতি ভবন স্থাপন, যশোর স্টেডিয়াম আধুনিকায়ন, যশোর বিভাগ ও যশোর সিটি করপোরেশন ঘোষণা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও যশোরবাসী তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। ইতিমধ্যে যশোর মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমিতে সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, ভবদহ জলবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে পৃথকভাবে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে নাগরিক সমাজ।