মুসলিম ভালোবাসা ছাড়া আমি কি এত বড় স্টার হতে পারি : মিঠুন
আমাকে হিন্দু এবং মুসলমান উভয়েই ভালোবেসেছে আর তাই আমি এত বড় স্টার হতে পেরেছি। ঠিক তেমনি হিন্দু এবং মুসলিমদের ভোটে বিজেপি ভারতের এতগুলো রাজ্যে ক্ষমতায় আছে। তারা কখনোই মুসলিম বিরোধী নয়। মুসলিমদের ভয় দেখানোর জন্য এ ধরনের একটা নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাতে সল্টলেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে এ মন্তব্য করেছেন বিজেপি নেতা এবং বলিউড অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী।
বাংলায় বিজেপির ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে মিঠুন জানান, ‘বিজেপি একটাই পার্টি-যারা কেবল মাত্র বাংলা নয়, দেশের ১৮টা রাজ্য চালাচ্ছে। তিন-চারটি রাজ্যে তারা হামাগুড়ি দিচ্ছে, সেখানেও হয়তো চলে আসবে। ভারতবর্ষে বিজেপি ছাড়া কোন বিকল্প নেই।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘একটা প্রোপাগান্ডা তৈরি করা হয়েছে যে বিজেপি মুসলমান বিরোধী। এটা সত্যি নয়।’
একসময় ঘুরিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতের বর্ষের তিনজন সুপারস্টার এর নাম করুন। আমির খান, শাহরুখ খান, সালমান খান। তারা কি শুধুমাত্র মুসলমানদের ভোটে এত বড় সুপারস্টার হতে পারে? মুসলিম ভালোবাসা ছাড়া আমিও কি এত বড় সুপারস্টার হতে পারি? অসম্ভব! আমাকে হিন্দু এবং মুসলমান উভয়েই ভালোবেসেছে। তাই আমি এত বড় স্টার হতে পেরেছি। ঠিক তেমনি হিন্দু-মুসলিমের ভোট পেয়েই বিজেপি এতগুলো রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে।’
তার অভিমত, ‘আসলে বিজেপির বিরুদ্ধে একটা নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে বিজেপি মুসলিম বিরোধী। বিজেপি ক্ষমতায় এলে মুসলিমদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে বলে যেটা বলা হচ্ছে আসলে সেটা মুসলিমদের ভয় দেখানোর পলিসি। আপনার কাছে যদি আসল আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ড থাকে তবে কারো ক্ষমতা আছে আপনাকে এই ভারতবর্ষ থেকে বের করে দেবার? বিজেপি মানে মুসলমান বিরোধী নয়। আমি মুসলমান ভাইদেরকে হাতজোড় করে বলছি এই ধারণা দূর করুন। বিজেপি এলেই আপনাদের ভালো হবে। আর বাকি যারা যারা আপনাদের একথা বলছে তারা আপনাদের ব্যবহার করেছে, আগামীকাল করবে এবং পরশু ছেড়ে দেবে। তখন কোথায় যাবেন? সবাইকে বিজেপিতেই আসতে হবে। সেটাও কিন্তু হতে পারে যে আগামীকাল মমতা ব্যানার্জিও হয়তো বিজেপিতে যোগদান করলো।’
রাজ্যের বাইরের মানুষের কাছে এই রাজ্যের ভাবমূর্তি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তিনি। মিঠুন জানান, ‘বাংলার ইমেজ ফাটাফাটি। টপ গিয়ারে চলছে। সবকিছুতে নাম্বার ওয়ান। দুর্নীতিতে নাম্বার ওয়ান, হিংসায় নাম্বার ওয়ান। বাঙালি হিসেবে আগে বাইরে একটা গর্ব বোধ হতো, এখন কোথায় যেন সেটা একটা টলোমলো অবস্থা। পশ্চিমবঙ্গ যে জায়গায় পৌঁছেছে আমি জানি না কিভাবে তা আবার ফিরবে। এই অবস্থার জন্য আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি সম্পূর্ণভাবে মিডিয়া দায়ী। ইলেকশনের পরেও যে ভায়োলেন্স হয়েছে সেটা যদি তোমরা দেখাতে তাহলে আজকে এই জায়গায়টা আসত না।’
উল্লেখ্য, আগামী বছরে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে মঙ্গলবার কলকাতায় পা রাখেন মিঠুন চক্রবর্তী।
আগামী এক সপ্তাহ ধরে বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, বর্ধমান জেলায় দলের হয়ে একাধিক কর্মসূচিতে যোগ দেবেন মিঠুন। মূলত পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের সংগঠন শক্তিশালী করতে, দলীয় কর্মীদের মনোবল বাড়াতে, তাদের উজ্জীবিত করার কাজে ‘টনিক’ হিসেবে কাজ করবেন মিঠুন। মিঠুনের সঙ্গে থাকবেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সেই লক্ষ্মী রাতেই তিনি পৌঁছে যান পুরুলিয়ায়। আজ বুধবার পুরুলিয়ার লুধুড়কা মাঠে দলের পুরুলিয়া জেলা প্রকাশ্য কর্মী সভার ভিতর দিয়েই তার কর্মসূচি শুরু হচ্ছে।
এনিয়ে বলিউড অভিনেতা বলেন, ‘আমি কোন প্রচার করতে আসিনি। আমাকে কিছু নির্দিষ্ট কাজ দেওয়া হয়েছে। দলের রাজ্য সভাপতি আমাকে ফোন করে সেই কাজের কথা জানিয়েছেন। রাজনীতির পয়সায় আমি ঘর চালাতে পারবো না। আমি আমার কাজ করার পর যে সময়টা পাই, সেই সময়টার কথা আমার সভাপতিকে জানিয়েছি।’
মিঠুনকে কাছে পেয়ে দলের কর্মীরা কতটা উজ্জীবিত হবেন বা আদৌ হবেন কিংবা সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি চাই এক শতাংশ হলেও তারা হোক। আমি তো আর তাদের মারামারি করতে বলবো না। আমি সহিংসতার বিরুদ্ধে। আমি আমার কর্তব্য করব। আমি আমার জীবনের লড়াইয়ের কথা সবার কাছে তুলে ধরবো।’
সাংসদ, বিধায়ক মিলিয়ে রাজ্যের ক্ষমতাশীল দল তৃণমূল কংগ্রেসের ২১ জন বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে অতীতে যে মন্তব্য করেছিলেন সেই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে মিঠুন জানান, ‘আমি আবার বলছি ক্যামেরাটা দিয়ে অনেক কিছু দেখা যাচ্ছে কিন্তু তোমরা সেটা দেখতে চাইছ না। আমি ফালতু কথা বলার বা আওয়াজ দেওয়ার লোক নই। ২১ সংখ্যাটা বেড়েছে, সময় এলেই দেখতে পাবে। তৃণমূলের সবাই দুর্নীতির সাথে যুক্ত নয়, অনেকে ভালো লোক আছে। তারা ভালো আছেন তাই শান্ত আছেন। আর যারা শান্ত আছেন তাদের দিকে নজর রাখুন। একটা সূত্র আমি আপনাদের দিলাম। বিধায়ক এবং সাংসদ উভয়েরাই যারা অন্য দল থেকে আসবেন তাদের আর ফিরে যাওয়ার রাস্তা নেই। আর বিভিন্ন সময়ে অন্য দল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া কোনো নেতা, বিধায়কদের যদি কেউ এখনো ফিরে যেতে চায় তারা তাড়াতাড়ি যাক। আমরা মুক্ত হয়ে যাব।’