ইরান-যুক্তরাষ্ট্র মুখোমুখি, দুই পক্ষের গায়েই বারুদের গন্ধ!
কাতারে ফুটবল মাঠে আজ বারুদের গন্ধ! মুখোমুখি হচ্ছে দুই চিরশত্রু ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র।
ইরানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনে ভয়ের শেষ নেই। আবার উল্টোটাও সত্যি। যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে বেশ সতর্ক থাকবে ইরান। আরব উপসাগরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যখন-তখন যুদ্ধ বেধে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি। একে অপরের দিকে তোপ তাক করে অপেক্ষায় আছে তারা। একটু এদিক-ওদিক হলেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে দুই দেশ। ১৯৭৯-৮১ সালে তেহরানে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে জিম্মি পরিস্থিতি দিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার শুরু। এরপর আর এই উত্তেজনা থামেনি। মারণাস্ত্র নিয়ে দুই দেশের যুদ্ধ হোক আর না হোক, আজ ফুটবল নিয়ে দুই দলের যুদ্ধ হতে যাচ্ছে। বিশ্বকাপে বি গ্রুপে নিজেদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র। জিতলেই ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নকআউট পর্ব নিশ্চিত করবে ইরান। চির শত্রুকে হারিয়ে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করার সুযোগ আছে যুক্তরাষ্ট্রের সামনেও।
গ্রুপ পর্বে আগের দুই ম্যাচে এক জয় ও এক ড্রয়ে চার পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের দুই নম্বরে আছে ইরান। প্রথম ম্যাচে তারা ইংল্যান্ডের কাছে ৬-২ গোলে হারলেও পরের ম্যাচে ওয়েলসকে হারিয়েছে ২-০ গোলে। অন্যদিকে দুই ম্যাচেই ড্র করে দুই পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে আছে যুক্তরাষ্ট্র। এই গ্রুপে চার পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে ইংলিশরা। আজ ইংল্যান্ড মুখোমুখি হচ্ছে ওয়েলসের। গ্রুপের শীর্ষস্থান নিশ্চিত করতে হলে জয়ের বিকল্প নেই ইংল্যান্ডের।
ইরানিরা বেশ উপভোগ করছে বিশ্বকাপ। সংখ্যায় তারা অনেক। ফ্যান জোনে গেলেই চোখে পড়ে ইরানিদের। পতাকা হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দল বেঁধে। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করার আশা তাদের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়েই এই লক্ষ্য পূরণ করতে চায় তারা। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসে ইরানের পর্তুগিজ কোচ কার্লোস কুইরোজ বললেন, ‘আমরা জানি প্রতিপক্ষ বেশ শক্তিশালী। তবে আমাদের প্রস্তুতিটাও ভালো।’ প্রথমবারের মতো নকআউট পর্ব নিশ্চিত করে ইতিহাস গড়তে পারবেন কী কুইরোজ? তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিহাস নয়, বর্তমান নিয়ে ভাবছি। ম্যাচ নিয়ে ভাবছি।’ ইরান ড্র করলেও সুযোগ থাকবে নকআউট পর্ব খেলার। বিশেষ করে ইংল্যান্ড-ওয়েলস ম্যাচ ড্র হলে অথবা ইংল্যান্ড সেই ম্যাচে জিতলে। যুক্তরাষ্ট্রের কোচ গ্রেগ বেরহল্টার বাস্তবতা সম্পর্কে বেশ ভালোই জানেন। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ইরানের (২০) চেয়ে কিছুটা এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র (১৬)। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ওয়েলসের মতো দলকে হারিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী ইরান। তাছাড়া অতীতও তাদেরই পক্ষে। এর আগে ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। সেবার ইরান ২-১ গোলে হারিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্রকে। এরপর ২০০০ সালে এক প্রীতি ম্যাচে ড্র করে দুই দল (১-১)। চরম শত্রুভাবাপন্ন দুই দেশের মধ্যে ফুটবলীয় লড়াই এর আগে পরে আর কখনো হয়নি। এসব কিছু জেনেই যুক্তরাষ্ট্রের কোচ গ্রেগ বেরহল্টার বলছেন, ‘আমরা নকআউট পর্বে খেলার ব্যাপারে আশাবাদী।’ ইরানকে হারিয়েই পরের রাউন্ডে যেতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
দুটি দলই প্রায় কাছাকাছি মানের ফুটবল খেলে। ফিফা র্যাঙ্কিংয়েও পার্থক্য খুব একটা নেই। মাঠের লড়াইয়ে দুই দলের ফুটবল তাই আজ উপভোগ্যই হতে যাচ্ছে। কিছুটা সুবিধাজনক স্থানে আছে ইরান। ড্র করলেই তাদের থাকবে নকআউট পর্ব খেলার সুযোগ। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য এর আগেও বেশ কয়েকবারই নকআউট পর্বে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। ১৯৩০ সালে তারা সেমিফাইনালও খেলেছে।
রেকর্ড
► দুই দল বিশ্বকাপে একবারই মুখোমুখি হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে ২-১ গোলে হারিয়ে ইরানের খেলোয়াড়রা দেশে ফিরে বীরের মর্যাদা পেয়েছিলেন।
► দুই দল সবশেষ প্রীতি ম্যাচে অংশ নিয়েছিল ২০০০ সালের জানুয়ারিতে। যুক্তরাষ্ট্রে ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠিত ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল।
► ইরান আগের ম্যাচে ওয়েলসের বিরুদ্ধে জয় পায় ২-০ ব্যবধানে। একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ড্র করে পয়েন্ট তালিকায় পিছিয়ে যুক্তরাষ্ট্র।